দীপসিতা ধর
‘হাম কেয়া চাহতে
আজাদি...’
(‘আমরা কী চাই, স্বাধীনতা’)
প্রথমে ঢিমে তালে। আস্তে আস্তে আস্তে লয় বাড়ে। ছন্দে সঙ্গ দেয় হাতের ডাফলি। তারপরে সুর-কথা এগোয়,
‘বিজেপি আরএসএস সঙ্ঘীওসে
আজাদি
সিএএসে এনআরসিসে
আজাদি
মোদী-যোগীসে
আজাদি...’
(বিজেপি আরএসএস সঙ্ঘ থেকে স্বাধীনতা, মোদী-যোগীর থেকে স্বাধীনতা...)
কেরলের পালাক্কাডে বর্ষশেষের রাতটা ‘আজাদি’-র চেনা সুরেই উদ্যাপন করলেন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী দীপসিতা ধর। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক গোষ্ঠীর মিলিত ওই মঞ্চে দাঁড়িয়ে ফের ডাক দিলেন আজাদির। ভারতীয় ছাত্র ফেডারেশনের যুগ্ম সেক্রেটারি দীপসিতা ধরের সঙ্গে মঙ্গলবার রাতে গলা মিলিয়েছিলেন সভায় থাকা অগুনতি মানুষও।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) এবং নাগরিক পঞ্জির (এনআরসি) বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে আদতে কলকাতার মেয়ে দীপসিতা ভরসা রাখেন সাংস্কৃতিক প্রতিরোধে। উর্দু-হিন্দি-পঞ্জাবি সব ভাষাতেই প্রতিবাদের চেনা সুর এখন রাজধানীর অলিগলি ঘুরছে তাই। দীপসিতা বলেন, ‘‘রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস) কিন্তু সাংস্কৃতিক দিক থেকে ভীষণ সক্রিয়। তাই সাংস্কৃতিক আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়তে হবে সুস্থ সংস্কৃতি দিয়েই।’’
জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবাদেও সে জন্য ফিরে এসেছে ফৈয়জ আহমেদ ফৈয়জের পুরনো সুর। আসছেন সফদর হাশমি। আসছে ইটালির প্রতিরোধের গান, ‘বেলা চাও’-এর হিন্দি অনুবাদ। ফ্যাসিবাদ-বিরোধী এই গানেও বার্তা, ‘জব তক হ্যায় বাকি সিনে মে দম, গায়েঙ্গে এ জালিম ওয়াপস যাও যাও যাও...’ (‘যত ক্ষণ দেহে প্রাণ আছে গাইব, শয়তান ফেরত যাও যাও যাও’)।
শুধু গান নয়, প্রয়োজনমতো নাচ অথবা পথনাটিকাতেও যোগ দেন দীপসিতারা। ভূগোল নিয়ে গবেষণারত এই ছাত্রীর গত সাত বছর ধরে ঠিকানা দিল্লিই। কলকাতায় পড়তেন আশুতোষ কলেজে। ‘‘আজাদি স্লোগানটা তো সেই কাশ্মীর থেকেই সকলের কাছে পরিচিত। তার পরে ছড়িয়েছে অনেক স্তরে। কানহাইয়া কুমারদের জেলে ভরার পরে আমাদের মুখেও ফিরে আসে আজাদি,’’ বলছিলেন দীপসিতা।
জেএনইউয়ের প্রাক্তন ছাত্রনেতা এবং বর্তমানে বিহারের সিপিআই নেতা কানহাইয়া কুমারের সভায় সভায় স্বাধীনতার সেই ডাক এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে, তা পরে উঠে এসেছে ‘গাল্লি বয়’-এর মতো ছবিতেও। আজাদির সেই স্লোগানকে র্যাপে মিলিয়েছিলেন ডাব শর্মা। বস্তুত ২০১৬ সালে ডাব শর্মা ওই র্যাপ বেঁধেছিলেন। কানহাইয়া কুমারকে আটক করা নিয়ে যখন দেশ উত্তাল, সেই সময়েই মুক্তি পেয়েছিল ডাব শর্মার ‘আজাদি।’ কানহাইয়ার মুখের স্লোগান দিয়েই শুরু হয় সেটি। তার পরে তার সঙ্গে মিশে যায় র্যাপ। ২০১৬-র সেই গানই নতুন করে উপস্থাপিত হয় ‘গাল্লি বয়’-এ। নাগরিকত্ব আইন বিরোধী আন্দোলনে সেই আজাদির স্লোগান ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশেই। বিহারের পূর্ণিয়ায় কানহাইয়ার সভা থেকে দিল্লির ক্যাম্পাস বা কেরলের পালাক্কাড—সর্বত্র এখন প্রতিরোধ এই সুরেই। যা এগিয়ে নিয়ে চলছেন দীপসিতারা।