আয়াপ্পার মন্দিরে রবিবার ভক্ত সমাগম। ছবি: পিটিআই।
দশ থেকে পঞ্চাশের মহিলা মন্দিরের চৌকাঠ পেরোতে পারবেন কি না, তা নিয়ে কত বিতর্ক! সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে আইনি জটিলতা অব্যাহত। অথচ সেই শবরীমালারই অল্প দূরে আয়াপ্পা ভক্তদের জন্য অবারিত দুয়ার খুলে দিব্যি দাঁড়িয়ে আছে ভাভর মসজিদ। শবরীমালায় ওঠার আগে ভক্তেরা দর্শন করে যাচ্ছেন ভাভরকে।
ধর্মীয় প্রথা ও সংস্কার নিয়ে জটিল বিতর্কের মাঝে কেরলের পাতানামতিট্টা জেলায় মাথা তুলে থাকা এক টুকরো সহাবস্থানকে এক সুরেই স্বাগত জানাচ্ছেন মন্দির ও মসজিদ কমিটির কর্তারা। তাঁদের সগর্ব দাবি, বাবরি মসজিদ ধ্বংস হোক, শবরীমালায় দর্শন ঘিরে সংঘর্ষ বাধুক বা অযোধ্যা মামলার রায় বেরোক— কোনও পরিস্থিতিতেই ভাভর মসজিদে হিন্দু পুণ্যার্থীদের প্রবেশ ঘিরে সমস্যা হয়নি। এই পরম্পরা বজায় রাখতে তাদের দৃঢ় অঙ্গীকারের কথাও জানাচ্ছে ত্রাবাঙ্কোর দেবস্বম বোর্ড (টিডিবি) এবং ভাভর জামা মসজিদ প্রশাসন কমিটি।
প্রতি বছর নভেম্বর থেকে জানুয়ারি শবরীমালায় যখন দর্শনের পালা ‘মণ্ডলম’ চলে, সেই সময়েই ভিড় বাড়ে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে ইরুমেলির ভাভর মসজিদে। এবং সে মসজিদের প্রাঙ্গনে মহিলাদের প্রবেশে কোনও মানা নেই। এ বার আয়াপ্পা দর্শনের মরসুম শনিবার শুরু হতেই ভাভর ঘুরে মন্দিরের পথে এগিয়েছেন বহু ভক্ত। কথিত আছে, আয়াপ্পা যখন দানবী ‘মহিষী’কে বধ করেছিলেন, তখন তাঁর সহায়ক ছিলেন ভাভর। শবরীমালায় যাওয়ার আগে আয়াপ্পা ইরুমেলি আগলাননোর ভার দিয়ে যান ভাভরকে। ভক্তদের প্রতিও তাঁর নির্দেশ ছিল, তাঁর কাছে আসতে হলে আগে ভাভরের কাছে যেতে হবে। সেই পরম্পরা আজও সমানে চলছে। ভাভরকে আয়াপ্পার অভিন্ন অংশ হিসেবেই মানেন ভক্তেরা। হিন্দুত্ববাদী এক সংগঠন হালফিল বলতে শুরু করেছিল, ভাভর আদৌ মুসলিম চরিত্র নয়! কিন্তু তারা হালে পানি পায়নি।
আরও পড়ুন: কুয়াশায় বাড়তি রেক, নিয়ন্ত্রিত হবে গতিও
আয়াপ্পা মন্দিরের অনতিদূরেই ইরুমেলির ভাভর মসজিদ। —ফাইল চিত্র।
মসজিদ প্রশাসন কমিটির সভাপতি হাকিম শাজাহান বলছেন, ‘‘শবরীমালার দর্শনার্থীরা দলে দলে এই মসজিদে আসেন। তাঁরা মসজিদ প্রদক্ষিণ করেন, নারকেল ফাটিয়ে, ফুল দিয়ে তাঁদের রীতিতে প্রার্থনা করেন। তবে কেউ বাধা না দিলেও ভিতরে প্রার্থনা-কক্ষে ওঁরা সাধারণত ঢোকেন না। আবার মসজিদের দিকে মুখ করেই পিছু হঠে বেরিয়ে যান, পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেন না।’’ টিডিবি-র নতুন সদস্য কে এস রবির মতে, ‘‘আজকের দিনে সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের এমন পরম্পরা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’’
ইরুমেলিতে যখন সহাবস্থানের উজ্জ্বল ছবি, শবরীমালার ছবি এখন ততটাই ধোঁয়াশায় ভরা। আয়াপ্পা দর্শনে উৎসাহী মহিলা ভক্তদের নিরাপত্তার বন্দোবস্ত এখন করা যাবে না এবং প্রথম দিনে কিছু মহিলার বাধা পেয়ে ফিরে যাওয়ার অভিযোগে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, কেরলের বাম সরকার কি অবস্থান বদলে সুর নরম করে ফেলল? সিপিএম নেতৃত্ব এবং সরকারের ব্যাখ্যা, সর্বোচ্চ আদালতের রায় নিয়ে ধোঁয়াশার কারণেই এখন সতর্ক হয়ে পা ফেলতে হচ্ছে। অ্যাডভোকেট জেনারেলের পরামর্শ তেমনই। সরকারের আইনি উপদেষ্টা জয়দীপ গুপ্তের মতে, ‘স্থিতাবস্থা’ বজায় রাখার কথা বলা আছে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চের রায়ে। কিন্তু সেই স্থিতাবস্থা মানে গত বছরের রায়ের আগের অবস্থা নাকি পরেরটা— সেই ধোঁয়াশা পরিষ্কার হওয়ার আগে সরকারের আগ বাড়িয়ে কিছু করা উচিত নয়। সাত সদস্যের বেঞ্চ এই নিয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিলে তখন সরকার নির্দিষ্ট পদক্ষেপ করতে পারবে।
রাজ্যের আইনমন্ত্রী এ কে বালনের কথায়, ‘‘আইনি ব্যাখ্যায় দু’টো দিক থাকে। ‘ডি জুরে’, যেখানে আইনি অধিকারে অবস্থান স্পষ্ট হয়। ‘ডি ফ্যাক্টো’, যেখানে পারিপার্শ্বিক তথ্যে কিছু বোঝা যায়। কোর্টের আগের আদেশ ‘ডি ফ্যাক্টো’ স্থগিত এখন।’’