Iqbal Ansari

একটি ইটও পড়েনি, মসজিদ নিয়ে আগ্রহ নেই আনসারির

অযোধ্যার নতুন রেল স্টেশন থেকে হেঁটে পাঁচ মিনিট দূরত্বে পঞ্জিটোলা। সেখানকারই বাসিন্দা ইকবাল।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

অযোধ্যা শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:০২
Share:

নিজের বাড়িতে ইকবাল। —নিজস্ব চিত্র।

‘‘যা হওয়ার তা হয়েই গিয়েছে। আদালতের রায় চূড়ান্ত। আর এ সব নিয়ে ভেবে কী হবে! এখন তো আর কিছু করার নেই। মন্দির হচ্ছে ভাল কথা। কিন্তু মসজিদ নিয়ে আমার কোনও আগ্রহ নেই। ’’

Advertisement

প্রবল বিরক্তি নিয়ে শব্দগুলি বলেই মুখটি ঘুরিয়ে দিলেন দরজার দিকে। বুঝিয়ে দিলেন, অনেক হয়েছে। এ বার আসুন। মকরসংক্রান্তির পর থেকে অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধনের হাওয়া ওঠার পর থেকে ক্রমাগত সাক্ষাৎকার দিয়ে যাচ্ছেন রাম মন্দির-বাবরি মসজিদ আইনি লড়াইয়ের অন্যতম মামলাকারী ইকবাল আনসারি। সব মিলিয়ে মেজাজ চরমে।

অযোধ্যার নতুন রেল স্টেশন থেকে হেঁটে পাঁচ মিনিট দূরত্বে পঞ্জিটোলা। সেখানকারই বাসিন্দা ইকবাল। রামমন্দির চত্বরে এক কিলোমিটার পরিধির মধ্যে যে ক’টি মুষ্টিমেয় মুসলিম পরিবার বাস করে, তাদের অন্যতম ইকবালের পরিবার। মূল মামলকারী ছিলেন তাঁর পিতা হাসিম আনসারি। পিতার মৃত্যুর পরে ওই মামলার দায়িত্ব নেন তিনি। কিন্তু আদালতের রায়ে একেবারেই খালি হাতে ফিরতে হওয়ায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। অনেকের মতে, প্রচারের আলো সরে যাওয়া, নতুন মসজিদ কমিটির সঙ্গে গন্ডগোল ইকবালের নির্লিপ্ত হয়ে পড়ার বড় কারণ।

Advertisement

আজ দুপুরে তাঁর বাড়ি পৌঁছতেই ইকবাল বললেন, ‘‘এখন কথা বলা যাবে না। জুম্মার নামাজ আছে।’’ নামাজ সেরে যখন ফিরলেন, তখন মেজাজ অনেকটাই শরিফ। দেখতে পেয়েই ডেকে নিলেন। বললেন, ‘‘সাক্ষাৎকার দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। আর এ সব নিয়ে কথা বলতে ভাল লাগে না।’’ কিছু দিন আগে অযোধ্যায় নতুন রেল স্টেশনের পরিকাঠামো পরিদর্শনে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর বাড়ির সামনে দিয়েই যায় মোদীর কনভয়। সে সময়ে মোদীর উদ্দেশে ফুলের পাপড়ি ছুড়তে দেখা গিয়েছিল ইকবালকে। তিনি বলেন, ‘‘ক’জনের বাড়ির সামনে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ ভাবে যান বলুন তো! তাই সুযোগ পেয়ে অন্যদের মতো ফুলের পাপড়ি ছুড়েছিলাম।’’ তাঁর ওই ভাবে পাপড়ি ছোড়া নিয়ে প্রশ্নও ওঠে। যদিও এ সব নিয়ে ভাবতে রাজি নন ইকবাল।

অযোধ্যার ভূমিপূজা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন ইকবাল। মন্দির কমিটির একাংশের দাবি, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রথম আমন্ত্রণপত্রটি মামলায় প্রধান প্রতিপক্ষ ইকবাল আনসারির কাছেই গিয়েছিল। তিনি জানালেন, রামমন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অবশ্যই উপস্থিত থাকবেন। এ-ও শোনা যাচ্ছে, সে দিনের অনুষ্ঠানে থাকবেন বলে নতুন পোশাক বানিয়েছেন। ইকবালের কথায়, ‘‘রামমন্দির হচ্ছে ভাল কথা। এতে স্থানীয়দের আয়ের সুযোগ বাড়বে। লোকের হাতে পয়সা আসবে।’’ এরপরেই ডুব দেন অতীতে। বলেন, ‘‘অযোধ্যায় হিন্দু-মুসলমান সমস্যা ছিল না। দু’পক্ষই এখানে শান্তিতে বাস করত। কিছু লোক নিজেদের স্বার্থে গোটা বিষয়টিকে রাজনৈতিক চেহারা দেয়। তা থেকেই গন্ডগোলের সূত্রপাত।’’

শীর্ষ আদালত বাবরি মসজিদের পরিবর্তে অযোধ্যা থেকে প্রায় পঁচিশ কিলোমিটার দূরে, ধন্যিপুর মৌজার রৌনাহি গ্রামে মসজিদ তৈরির নির্দেশ দিয়েছে। জমি চিহ্নিতও হয়েছে। কিন্তু অযোধ্যায় যখন মন্দির উদ্বোধন হতে চলেছে, তখন একটি ইটও ওই জমিতে পড়েনি। সরকার ও প্রশাসন যতটা নির্বিকার ওই মসজিদ নিয়ে, ততটাই ইকবাল। বলেন, ‘‘ওই মসজিদ নিয়ে আমার আগ্রহ নেই। আমার লড়াই ছিল বাবরি মসজিদকে কেন্দ্র করে। গোটা মুসলমান সমাজ যেমন আদালতের রায় মেনে নিয়েছে, আমিও মেনে নিয়েছি। এখন ওখানে নতুন মসজিদ হল কি না, তা নিয়ে আমার আগ্রহ নেই। বাড়ির সামনে রাম মন্দির তৈরি হচ্ছে, এতেই খুশি আমি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement