বেতন বৃদ্ধির হার গত কয়েক দশকে সবচেয়ে কম বলে দাবি সমীক্ষায়।
করোনায় কুঁকড়ে অর্থনীতি। লকডাউনের তালা খুলে আনলক প্রক্রিয়া চললেও সেই ঘাটতি এখনও মেটেনি। আর তার কোপ পড়েছে বিভিন্ন সংস্থার কর্মীদের বেতনেও। সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে এমনই সব চাঞ্চল্যকর তথ্য। তাতে দাবি করা হয়েছে, ২০১৯ সালে বিভিন্ন সংস্থার কর্মীদের বেতন বৃদ্ধির (ইনক্রিমেন্ট) হার ছিল গড়ে ৮.৬ শতাংশ। ২০২০ সালে তা দাঁড়িয়েছে অর্ধেকেরও কম, ৩.৬ শতাংশ। বেতন বৃদ্ধির এই হার গত কয়েক দশকে সবচেয়ে কম বলেই উঠে এসেছে ওই সমীক্ষায়।
গত কয়েক বছর ধরেই এ দেশের একাধিক সংস্থার কর্মীদের বেতনবৃদ্ধির গতিটা ছিল ঢিমেতালে। ২০১৯-এর শেষাশেষি করোনা নামক অতিমারির আবির্ভাব তার লাগামটা আরও টেনে ধরেছে। সম্প্রতি ডেলয়েট টুশ টোম্যাটসু ইন্ডিয়া এলএলপি (ডিটিটিআইএলএলপি)-র সমীক্ষায় তারই আঁচ মিলেছে। বেতনবৃদ্ধির ক্ষেত্রে অতিমারি কতটা প্রভাব ফেলতে পেরেছে তা-ই মূলত খতিয়ে দেখা হয়েছে ওই সমীক্ষায়। চলতি বছরের জুনে শুরু হয়েছিল এই সমীক্ষা। তাতে অংশগ্রহণ করেছিলেন দেশের অন্তত ৩৫০টি (৭টি মূল ক্ষেত্র এবং ২৫টি উপক্ষেত্র) সংস্থার হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজাররা।
বিশ্ব জুড়ে অর্থ সংক্রান্ত বিষয়ে নানা ধরনের সমীক্ষা করে থাকে ডেলয়েট। তার আওতায় পড়ছে আর্থিক পরামর্শ, কর এবং কর্পোরেট জগতের নানা বিষয়। তাদের নানা সমীক্ষায় ধরা পড়েছে —
• অতিমারি পরিস্থিতিতে ১০টির মধ্যে মাত্র ৪টি সংস্থার কর্মীদের বেতন বেড়েছে।
• ওই সংস্থাগুলিতে (৪টি) গড়ে ৭.৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে।
• চলতি বছরে ১০ শতাংশেরও কম সংস্থা কর্মীদের ১০ শতাংশ বা তার বেশি বেতন বাড়িয়েছে।
• ৩৩ শতাংশ সংস্থা তার কর্মীদের এ বছর কর্মীদের বেতনবৃদ্ধির কথা ভাবেইনি।
• এখনও কোনও কোনও সংস্থা বেতনবৃদ্ধি নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠতে পারেনি।
• জৈবিক ( ওষুধ, চিকিৎসা সংক্রান্ত) সংস্থাগুলির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি বেতন বৃদ্ধি হয়েছে।
• উৎপাদন এবং পরিষেবা (রিয়েল এস্টেট, নির্মাণ, খনি, ধাতু, হসপিটালিটি, খুচরো এবং অটোমোবাইল শিল্প) ক্ষেত্রে বেতনবৃদ্ধির হার সবচেয়ে কম।
• ডিজিটাল এবং ই কমার্স সংস্থাগুলির ব্যবসা প্রভূত বাড়লেও তারাও পূর্ববর্তী বছরগুলির মতো বেতনবৃদ্ধি করতে সম্ভব হয়নি।
আরও পড়ুন: প্রশান্তের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা গেল নতুন বেঞ্চে
ডিটিটিআইএলএলপি-র তরফে আনন্দরূপ ঘোষ বলছেন, ‘‘যে ভাবে অর্থনৈতিক চাপ বাড়ছে তার অনুপাতে গত কয়েক বছর ধরেই ভারতে বেসরকারি সংস্থার কর্মীদের বেতনবৃদ্ধির গতি কম। করোনা পরিস্থিতি গোটা দুনিয়াকেই আর্থিক মন্দার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তার ফলে সংস্থাগুলির কাছে ইনক্রিমেন্ট ছাঁটা বা কমানো ছাড়া আর কোনও পথ নেই যাতে তারা বেতন বৃদ্ধির প্রতিটা টাকার মূল্যাযন করতে পারে।’’ তাঁর মতে, আয় করা যখন কষ্টকর হয়ে পড়ে তখন সব সংস্থাই খরচ বাঁচাতে চায়। আনন্দরূপের দাবি, করোনা বেতন বৃদ্ধির প্রক্রিয়ায় একটা বড়সড় পরিবর্তন এনেছে। অনেক সংস্থা বেতন বৃদ্ধির বাজেটের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে কর্মীর কর্মক্ষমতাকেও গুরুত্ব দিচ্ছে।
আরও পড়ুন: কোথায় মোদীর বাবার চায়ের দোকান? তথ্য নেই পশ্চিম রেলের কাছে
২০২০-তে বড়সড় ধাক্কা। তা থেকে কি আগামী বছর ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হবে? ডেলয়েটের সমীক্ষায় অবশ্য তেমন আশার আলো নেই। সংস্থাটির দাবি, গোটা আর্থিক পরিস্থিতিতে পরিবর্তন না এলে, আগামী বছরেও তেমন বড়সড় বদলের সম্ভাবনা কম। তাদের মতে, মাত্র ২৩ শতাংশ সংস্থাই জানিয়েছে, তারা আগামী বছরে কর্মীদের বেতনবৃদ্ধির পরিকল্পনা করছে।