Crime

নাবালিকা ধর্ষণে উজ্জয়িনীতে গ্রেফতার অটোচালক

দেশজোড়া তোলপাড়ের মধ্যেই আজ মধ্যপ্রদেশের পুলিশ দাবি করল, ধর্ষণ-কাণ্ডের প্রধান অভিযুক্তকে তারা গ্রেফতার করেছে। ধৃতের নাম ভরত সোনী। পেশায় অটোচালক। বাড়ি উজ্জয়িনীর ননখেড়া এলাকায়।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৯:০৭
Share:

—প্রতীকী ছবি।

রক্তাক্ত দেখেও বছর বারোর মেয়েটিকে বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি কেউ। ধর্ষিতা হয়ে জখম ও অর্ধনগ্ন অবস্থায় তাকে মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনী এলাকার রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে হয়েছিল। এ নিয়ে দেশজোড়া তোলপাড়ের মধ্যেই আজ মধ্যপ্রদেশের পুলিশ দাবি করল, ধর্ষণ-কাণ্ডের প্রধান অভিযুক্তকে তারা গ্রেফতার করেছে। ধৃতের নাম ভরত সোনী। পেশায় অটোচালক। বাড়ি উজ্জয়িনীর ননখেড়া এলাকায়।

Advertisement

উজ্জয়িনীর মহাকাল থানার স্টেশন ইন-চার্জ অজয় বর্মা বলেন, ‘‘মেয়েটির জামাকাপড় উদ্ধার করতে আমরা আজ অভিযুক্তকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে ভরত সোনী পালানোর চেষ্টা করে। পুলিশ তাড়া করে তাকে ধরে ফেলে। এই সময়ে সিমেন্টের রাস্তায় পড়ে গিয়ে তার হাত ও পা জখম হয়।’’ দু’জন পুলিশকর্মীও আহত হন। এই কাণ্ড ঘটে উজ্জয়িনীর জীবন খেরি এলাকায়। পুলিশ সূত্রের দাবি, ওই এলাকা থেকেই বালিকাটি একটি অটোয় উঠেছিল বলে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছিল। অটোটিকে চিহ্নিত করে তার চালক ভরতকে গ্রেফতার করা হয়।

সিসিটিভি ফুটেজের সূত্র ধরে এক অটোচালককে গ্রেফতারের কথা আজ সন্ধ্যার আগেই জানিয়েছিলেন উজ্জয়িনীর এসপি সচিন শর্মা। তখনও অবশ্য ভরতের নাম জানানো হয়নি। সচিন বলেছিলেন, অটোর আসনে রক্তের দাগ মিলেছে। অটোচালকের পাশাপাশি আরও পাঁচ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এ দিন মূলত ঘটনার পুনর্নির্মাণের জন্যই জীবন খেরি এলাকায় ভরতকে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। সেখান থেকেই সে পালানোর চেষ্টা করে।

Advertisement

গত কাল ইন্দোরের হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পরে নাবালিকার অবস্থা এখন স্থিতিশীল। জাতীয় শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের সদস্যা-চিকিৎসক দিব্যা গুপ্ত ওই হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে দেখা করার পরে জানান, বালিকাটিকে দু’বোতল রক্ত দিতে হয়েছে। তার অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, বালিকাটির সঙ্গে কথা বলে এক কাউন্সেলর বুঝতে পেরেছেন, তার বাড়ি সাতনা জেলায়। ঘটনাটি যে দিনের, অর্থাৎ গত সোমবারই (২৫ সেপ্টেম্বর) সাতনায় একটি বালিকা নিখোঁজ হয়। সাতনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শিবেশ সিংহ বঘেল জানান, স্কুলের পোশাকে বছর তেরোর একটি মেয়ের নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ জমা পড়েছিল সেখানকার জৈতওয়াড়া থানায়। পরিবার জানিয়েছিল, সাধারণ বিষয় বুঝতে মেয়েটির সমস্যা হয়। সে কিছুটা বিশেষ ভাবে সক্ষম। শিবেশ বলেন, ‘‘স্কুলের পোশাক পরা মেয়েটির ছবি ও সংবাদ প্রতিবেদন দেখে পুলিশ সন্দেহ করছে, নিখোঁজ মেয়েটিই নির্যাতিতা হয়েছে। তাকে শনাক্ত করতে পরিবারের লোকেদের নিয়ে পুলিশের একটি দল উজ্জয়িনী গিয়েছে।’’

মধ্যপ্রদেশে বিজেপির ২০ বছরের ‘অপশাসনে’ ওই রাজ্যের মেয়েরা, জনজাতিরা, দলিতেরা কেউ নিরাপদ নন বলে অভিযোগ তুলেছেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা। উজ্জয়িনীর এসপি সচিন শর্মার অবশ্য দাবি, সে দিন অন্তত সাত-আট জন মেয়েটিকে সাহায্য করার চেষ্টা করেছিলেন। একটি চ্যানেলকে তিনি বলেন, ‘‘(আশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারে) কারও সমস্যা থাকতে পারে, তবে একেবারেই কেউ ওকে সাহায্য করেননি, এমনটা নয়। মেয়েটিকে রাস্তায় দেখে কেউ ৫০ টাকা, কেউ ১০০ টাকা দিয়েছিলেন। একটা টোল বুথ পেরোনোর সময়ে সেখানকার কর্মীরাও কিছু টাকা আর জামাকাপড় দেন। মেয়েটি ঠিক সাহায্য চায়ওনি। যাদের বয়ান নিয়েছি তাঁরা বলেছেন, ও বার বার বলছিল, ‘আমার বিপদ। কেউ আমার পিছু নিয়েছে।’ ’’ সচিনই জানান, উদ্ধার হওয়ার সময়ে মেয়েটির হাতে ছিল ১২০ টাকা। প্রশ্ন হল, ৫০-১০০ টাকা পেলে তো তার হাতে অন্তত দেড়শো টাকা থাকার কথা। তা গেল কোথায়? টোলকর্মীরা জামাকাপড় দিয়ে থাকলে সে ছেঁড়া কাপড় সম্বল করে ঘুরছিল কেন?

সে দিন সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ উজ্জয়িনীর অদূরে বড়নগর রোডের একটি আশ্রম থেকে বেরোচ্ছিলেন সেখানকার পুরোহিত রাহুল শর্মা। হঠাৎই সদর দরজার কাছে দেখেন মেয়েটিকে। রাহুল বলছিলেন, ‘‘মেয়েটাকে আমি আমার জামকাপড় দিই। ১০০ নম্বরে পুলিশকে যোগাযোগ করতে না পেরে মহাকাল থানায় ফোন করি।’’ তবে রাহুলকে মেয়েটি ভরসা করেছিল। রাহুল বলেন, ‘‘কেউ কথা বলতে এলেই ও আমার পিছনে লুকিয়ে পড়ছিল।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement