দুর্ঘটনাস্থল। ছবি: পিটিআই।
সারা রাত হেঁটে পায়ে ফোস্কা পড়েছিল। তাই বাকিদের এগিয়ে যেতে বলেছিলেন বছর সাতাশের বীরেন্দ্র সিংহ গোন্দ। তার ফলেই গত কাল অওরঙ্গাবাদে ট্রেনে চাপা পড়ার হাত থেকে অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছেন তিনি। বীরেন্দ্রর দাবি, তাঁরা বাড়ি ফেরার জন্য মধ্যপ্রদেশ সরকারের কাছে দিন পনেরো আগেই পাস চেয়েছিলেন। কোনও জবাব মেলেনি। এই বক্তব্যকে তুলে ধরে মধ্যপ্রদেশ তথা কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে নিশানা করেছেন বিরোধীরা।
আজ বীরেন্দ্র সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, গত কাল অওরঙ্গাবাদে যে পরিযায়ী শ্রমিকেরা ট্রেনে চাপা পড়েছেন তাঁরা সকলেই মধ্যপ্রদেশের উমারিয়া ও শাহদলের বাসিন্দা। মহারাষ্ট্রের জলনায় একটি ইস্পাত কারখানায় কাজ করতেন। বীরেন্দ্রের কথায়, ‘‘জলনায় আমাদের কাছে খাবার মজুত ছিল। কিন্তু পরিবারের সদস্যেরা চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন।’’ তাঁর দাবি, মধ্যপ্রদেশ সরকারের কাছে ফেরার জন্য পাস চেয়েও পাননি। তাই তাঁরা গত কাল সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ ঔরঙ্গাবাদ স্টেশনের দিকে হাঁটতে শুরু করেন। সেখান থেকে ট্রেন না পেলে আরও কিছুটা এগিয়ে ভুসাবল থেকে ট্রেন ধরার কথা ভেবেছিলেন ওই শ্রমিকেরা। পুলিশ চেকপোস্টে হয়রানি এড়াতে রেল লাইন ধরে হাঁটার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। ভেবেছিলেন ট্রেন চলছে না। ফলে ভয়ের কারণ নেই।
অওরঙ্গাবাদের করমাড স্টেশনের কাছে কিছু ক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন শ্রমিকেরা। করমাড পুলিশ জানিয়েছে, শ্রমিকেরা রেল লাইনে শুয়ে ঘুমোতে চাননি। বিশ্রাম নিতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। মালবাহী ট্রেন আসার শব্দেও সেই ঘুম ভাঙেনি।
আরও পড়ুন: ট্রেনে পিষে এই মর্মান্তিক মৃত্যু কেন্দ্রের চরম অবজ্ঞারই ফল
এ দিন ফের সামনে এসেছে পরিযায়ী শ্রমিকদের দুরবস্থার কথা। আজ ছত্তীসগঢ়ের রায়পুরে একটি ভারি ট্রাকের মালবহনের জায়গায় বসে থাকতে দেখা যায় বেশ কয়েকটি শ্রমিক পরিবারকে। তাঁদের মধ্যে কয়েক জন মহিলা ও তাঁদের সন্তানও রয়েছেন। ওই শ্রমিকেরা জানিয়েছেন, তাঁরা হায়দরাবাদ থেকে ওই ট্রাকে এসেছেন। সঙ্গে খাবার, জল কিছুই নেই। অন্তত শিশুদের জন্য খাবার আর জল চান তাঁরা।
অওরঙ্গাবাদে বেঁচে যাওয়া শ্রমিক বীরেন্দ্র সিংহের বক্তব্যকে তুলে ধরে আজ মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকারের কড়া সমালোচনা করেছেন কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংহ। তাঁর দাবি, মধ্যপ্রদেশ সরকার শ্রমিকদের ফেরাতে কী ব্যবস্থা নিয়েছে তা নিয়ে তদন্ত হোক। মধ্যপ্রদেশ বিজেপির পাল্টা দাবি, কংগ্রেস নেতারা ট্রেনের ভাড়া দিয়ে দেওয়ার কথা বলার ফলেই শ্রমিকেরা স্টেশনে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরির কথায়, ‘‘৩১ মার্চ কেন্দ্র সুপ্রিম কোর্টে বলেছিল, কোনও পরিযায়ী শ্রমিক এখন যাতায়াত করছেন না। বোঝা যাচ্ছে এটা কতটা অসত্য।’’ শিবসেনাও সরকারের সমালোচনা করেছে।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)