তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা টাকা নিয়ে ছুরি দলকে, জোগী অডিও-ফাঁসে

আদতে দুর্নীতি, ষড়যন্ত্র ও অন্তর্ঘাতের একটা টান টান কেলেঙ্কারি! কিন্তু কাহিনির মুখ্য চরিত্রগুলির কারসাজি দেখে ‘মাসতুতো ভাই’ সংক্রান্ত প্রাচীন প্রবাদটাই যেন মনে পড়ে যায়!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:৫৪
Share:

আদতে দুর্নীতি, ষড়যন্ত্র ও অন্তর্ঘাতের একটা টান টান কেলেঙ্কারি! কিন্তু কাহিনির মুখ্য চরিত্রগুলির কারসাজি দেখে ‘মাসতুতো ভাই’ সংক্রান্ত প্রাচীন প্রবাদটাই যেন মনে পড়ে যায়!

Advertisement

ছত্তীসগঢ়ে বিধানসভার উপনির্বাচন হয়েছিল বছর খানেক আগে। কেন্দ্রীয় নেতাদের বেকুব বানিয়ে ভোটের ঠিক মুখে আচমকাই মনোনয়ন তুলে নিয়েছিলেন কংগ্রেস প্রার্থী মন্টুরাম পওয়ার। নতুন কোনও প্রার্থীর মনোনয়ন পেশের তখন আর সময়ই ছিল না। ফলে ফাঁকা মাঠে জিতে
যায় বিজেপি। রাজ্যের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহের বিরুদ্ধে সে সময়ে প্রার্থী কেনাবেচার অভিযোগ তুলেছিল কংগ্রেস!

কিন্তু আজ এত দিন পরে কিছু অডিও টেপ ফাঁস হয়ে পড়ায় জানা গেল, বিভীষণজি লুকিয়ে ছিলেন কংগ্রেসেরই অন্দরে। ছোটখাটো নেতা নন তিনি— ছত্তীসগড়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অজিত জোগী।

Advertisement

কী রকম?

অডিও টেপগুলি থেকে মোটামুটি ধারণা করা যাচ্ছে যে, অজিত জোগী ও তাঁর ছেলে অমিত জোগীই ছত্তীসগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ওতাঁর জামাই পুনীত গুপ্তর সঙ্গে আঁতাঁত করে মন্টুরামকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিতে বলেন। ছত্তীসগড়ের রাজনীতিতে অজিতের অনুগত বলেই পরিচিত মন্টুরাম। টেলিফোনে এই সব চরিত্রগুলির কথোপকথন, হিসাবের বখরা, হিস্সা কম পাওয়া নিয়ে খেদ প্রকাশ— ইত্যাদি থেকে কেচ্ছার গোটা ছবিটাই এখন প্রকাশ্যে এসে পড়েছে।

স্বাভাবিক ভাবেই অজিত জোগী ও তাঁর ছেলেকে আজ নোটিস ধরিয়েছে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। সেই সঙ্গে নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে ছত্তীসগড়ের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে রমন সিংহের ইস্তফা চেয়ে আজ রায়পুরে তোলপাড় বাঁধিয়েছেন কংগ্রেস কর্মীরা। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অবশ্য নীরব! কারণ রমন সিংহ বা তাঁর জামাইয়ের বিরুদ্ধে যে অভিযোগই উঠুক, আখেরে রাজনৈতিক লাভ হয়েছে বিজেপিরই।

যদিও অজিত জোগী আজ সব অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন। এমনকী এ-ও দাবি করেছেন, অডিও টেপটি জাল। তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। কিন্তু টেপটি শোনার পর জোগীর সাফাইয়ে আর গলা মেলাতে পারছে না কংগ্রেস। দলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, ছত্তীসগড়ের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ভূপেশ বাঘেলকে ব্যর্থ প্রমাণ করার জন্যই এই খেলা খেলেছিলেন তিনি ও তাঁর পুত্র। ২০১৩ সালেরবিধানসভা ভোটে ছত্তীসগড়ের কাঁকের জেলায় ১২টি আসনের মধ্যে মাত্র চারটিতে জিতেছিল বিজেপি। বাকি ৮টিই ছিল কংগ্রেসের। অন্তগড়ের বিধায়ক বিক্রম উসেন্ডি লোকসভা ভোটে জেতার জন্য সেখানে উপনির্বাচন হয়েছিল। আসনটি জিতলে গোটা কাঁকের জেলায় কংগ্রেসের আধিপত্য বজায় থাকত, যার কৃতিত্ব পেতেন বাঘেল। কিন্তু সেই সম্ভাবনা ভেস্তে দিতেই রমন সিংহের সঙ্গে আঁতাত করেন জোগী ও তাঁর ছেলে, যাতে মোটা টাকাও লেনদেন হয়। মন্টুরাম পওয়ার পরে বিজেপিতেই যোগ দেন।

কিন্তু প্রশ্ন হল জোগীর ভবিষ্যৎ কী হবে? কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতাদের একাংশ বলছেন, ‘‘কী-ই বা হবে! ক’দিন হইচই হওয়ার পরে বিষয়টি এমনিই চাপা পড়ে যাবে। কংগ্রেসে এর থেকে বেশি কোনও দিনই হয়নি।’’ যদিও উল্টো মত রাহুল গাঁধীর ঘনিষ্ঠ নেতাদের। তাঁরা বলছেন, ‘‘সে দিন গিয়েছে! দলে এ ধরনের অন্তর্ঘাত রাহুল বরদাস্ত করবেন না!’’ বর্ষশেষের ছুটি কাটাতে রাহুল এখন ইউরোপে। বিষয়টি নিয়ে আজ তাঁর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন দলের ছত্তীসগড়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসি নেতা বি কে হরিপ্রসাদ। তার পর প্রদেশ কংগ্রেসের কাছ থেকে গোটা ঘটনার রিপোর্ট চেয়ে পাঠান হরিপ্রসাদ। এই রিপোর্ট পাওয়ার পরই কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি ও দলীয় সদস্য পদ থেকে সাসপেন্ড করা হতে পারে জোগীকে।

কংগ্রেসের কিছু নেতা বলছেন, গত লোকসভা ভোটের সময়ও কংগ্রেসের অনেক প্রার্থী রাতারাতি বিজেপিকে ময়দান ছেড়ে দিয়ে সরে গিয়েছেন। তাঁদের আশঙ্কা, সেখানেও হয়তো মাসতুতো ভাইদের কোনও বোঝাপড়া ছিল!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement