ফাইল চিত্র।
ব্লক থেকে জেলা, জেলা থেকে রাজ্য, রাজ্য থেকে দেশ— ‘চাপা পড়া’ ইতিহাস খুঁজে বের করতে চায় আরএসএস।
সঙ্ঘ পরিবারের বিরুদ্ধে প্রায়শই ইতিহাসের গৈরিকীকরণের অভিযোগ ওঠে। কিন্তু এ বার ভাষার খানিকটা বদল ঘটিয়ে সঙ্ঘ তৃণমূল স্তর থেকে উঠে আসা ইতিহাসে জোর দেওয়ার কথা বলছে।
আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত যখন আজ দিল্লিতে, সেই সময়েই সঙ্ঘের ‘অখিল ভারতীয় ইতিহাস সংকলন যোজনা’র সংগঠন সচিব বালমুকুন্দ জানান, ইতিহাসের পাঠ্যক্রমে বদল আনার জন্য তাঁরা বিস্তারিত পরিকল্পনা করেছেন। গোটা দেশে ৪২টি সাংস্কৃতিক অঞ্চল গড়া হয়েছে। ব্লক স্তর থেকে জেলা স্তর, তার পর রাজ্য স্তরে আলোচনার মাধ্যমে খুঁজে বের করা হবে চাপা পড়ে থাকা ইতিহাস। সামনে আনা হবে উপেক্ষিত চরিত্রদের।
ইতিহাসবিদদের অনেকেই এ কথা শুনে বলছেন, তার মানে গৈরিকীকরণের চেনা ভাষ্য থেকে বেরিয়ে এসে সঙ্ঘ আরও সূক্ষ্ম, আরও বিকেন্দ্রিক হওয়ার দিকে হাঁটছে। গোদা ভাবে হিন্দুত্বের প্রচার না করে অশ্রুত স্বর খোঁজার কথা বলছে।
কিন্তু আঞ্চলিক ইতিহাস, নিম্নবর্গের ইতিহাস, সামাজিক ইতিহাসের চর্চা তো নিয়মিতই হচ্ছে শিক্ষাজগতে। সেখানে সঙ্ঘকে আলাদা ভাবে সক্রিয় হতে হবে কেন? ইতিহাসবিদ গৌতম ভদ্র বললেন, ‘‘আরএসএস কী নকশা করছে তা আগে ভাল করে জানতে হবে। এক নায়কের জায়গায় অন্য নায়কের কথা তুলে ধরলেই ইতিহাসের প্রেক্ষিত সঠিক হবে এমন কোনও মানে নেই।’’
‘নতুন’ ইতিহাসের পাতায় সঙ্ঘের রাজনীতি কী থাকবে? বালমুকুন্দই তার হদিস দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘এত দিন যে দৃষ্টিতে ইতিহাস তৈরি হয়েছে, তার বদল হবে। একটি পরিবারের নামে ইতিহাস কুক্ষিগত থাকতে পারে না। ভারতপন্থী ইতিহাস লেখা দরকার।’’ অর্থাৎ সঙ্ঘের নিশানা যে মূলত গাঁধী-নেহরু পরিবার, এ কথায় তার ইঙ্গিত রয়েছে। ‘ভারতপন্থী’ ইতিহাসের সূত্রে প্রশ্ন উঠেছে, এত দিন কি ভারত-বিরোধী ইতিহাস লেখা হচ্ছিল?
ইতিহাসবিদ তথা তৃণমূল সাংসদ সুগত বসু যেমন বললেন, ‘‘স্বাধীনতার আগে ব্রিটিশরা তাদের মতো করে ইতিহাস পড়াত। তার বিপরীতে জাতীয়তাবাদী ইতিহাস লেখার প্রয়োজন ছিল। স্বাধীনতার ৭০ বছর পরে ভারতপন্থী ইতিহাসের কথা উঠছে কেন?’’ এতে ইতিহাসের বদলে মতাদর্শের পাঠই থাকবে, আশঙ্কা তাঁরা। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক ডি এন ঝা-রও প্রশ্ন, ‘‘আরএসএস এত দিন কী করছিল? কে বাধা দিয়েছিল ইতিহাস লিখতে?’’
ঘটনা হল, মোদী ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আরএসএসের পক্ষ থেকে পাঠ্যপুস্তক বদলের জন্য নানা ভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছিল। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছে তারা। অধ্যাপক মহলকেও প্রভাবিত করার চেষ্টা হচ্ছে।
তবে কাজটা যে সহজ না, সেটাও সঙ্ঘ জানে। বালমুকুন্দই বলেন, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্যক্রম বদলানোর চেষ্টা হয়। সেখানে ইতিহাস বিভাগের দায়িত্বে থাকা উপেন্দ্র সিংহ তা করতে দেননি। উপেন্দ্র প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের কন্যা। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘২০১৬ সালের সিলেবাস বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে গণতান্ত্রিক পথেই তৈরি হয়েছে। এটা কারও একার ব্যাপার নয়।’’