সচিন পাইলট ও অশোক গহলৌত। ছবি: পিটিআই।
রাজ্যের তরুণ প্রজন্ম চাইছেন সচিন-ই ধরুন রাজ্যের ‘হাল’। অন্য দিকে, প্রবীণ প্রজন্ম কিন্তু গহলৌতকেই মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকায় দেখতে চাইছেন। এখন কাকে মুখ্যমন্ত্রী বাছবেন কংগ্রেস সভাপতি সেটাই দেখার। যদিও দলের একটা সূত্র বলছে, পাল্লা ভারী কিন্তু গহলৌতেরই। কারণ গহলৌত এক জন দুঁদে রাজনীতিবিদ। মুখ্যমন্ত্রীর পদেও ছিলেন। ফলে তাঁর পক্ষে রাজ্যপাট সামলানোর কাজটা অনেকটাই সহজ হবে বলে মনে করছেন দলেরই ওই অংশ।
আবার, সচিনের জনপ্রিয়তাও রাহুলকে ভাবাচ্ছে। নতুন প্রজন্মের কাছে সচিনের গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি। প্রবীণ নয়, এখন কংগ্রেস যখন নবীনের দিকেই ঝুঁকছে, এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবিদারের অনেকটাই জুড়ে রয়েছেন সচিন। রাজস্থানে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার জন্য গহলৌত চাইছিলেন, কংগ্রেসের আসনে রাশ টেনে ধরতে। যাতে ভোটের পরে তাঁর কদর থাকে। বারো জন নির্দলের মধ্যে দশ জনই গহলৌতের সমর্থক। এখন কংগ্রেসের যা আসন সংখ্যা তাতে ছোট ছোট দলগুলিকেও সঙ্গে নিয়ে চলার জন্য গহলৌতের মতো অভিজ্ঞ নেতার প্রয়োজন বলে মনে করছেন দলের নেতাদের একাংশ। মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন এ নিয়ে রাহুল সরাসরি কোনও মন্তব্য না করলেও ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, ‘এর মানে এই নয়, সচিন পাইলট তাঁর যোগ্য মর্যাদা পাবেন না।’ রাহুলের এই মন্তব্যের পরই দলের অন্দরে গুঞ্জন শুরু হয়ে গিয়েছে, এ কথা বলে তা হলে কি রাহুল গহলৌতের দিকে ইঙ্গিতটা দিয়ে রাখলেন?
সামনেই লোকসভা নির্বাচন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিধানসভার পরও তাই লোকসভা নির্বাচনেও রাজস্থান থেকেবেশি সম্ভব আসন জিতে তুলে আনার চেষ্টা করবেন রাহুল। তাই গহলৌতের মতো এক জন অভিজ্ঞ রাজনীতিকতে মুখ্যমন্ত্রী করার পথে হাঁটতে পারেন তিনি।
আরও পড়ুন: ‘আব কি বার খো দি সরকার’, মোদীকে খোঁচা অখিলেশের
সবেমাত্র ‘রানি’র সাম্রাজ্য দখল করেছে তারা। তাই কংগ্রেস চাইছে আপাতত দ্বন্দ্বকে দূরে সরিয়ে রেখে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাকি পথটুকু চলুক সচিন-গহলৌত। মুখ্যমন্ত্রীর হওয়ার প্রশ্নে দু’জনের মধ্যে‘দ্বন্দ্ব’ থাকলেও সেটা যাতে এই চরম মুহূর্তে সামনে না আসে সেই চেষ্টাও চালাচ্ছে দল। মঙ্গলবারেই সচিনের বাড়িতে যান গহলৌত। তাঁর সঙ্গে দেখা করেন, এক সঙ্গে ছবিও তুলতে দেখা যায় তাঁদের।রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সচিনের সঙ্গে হাত মেলালেও মুখ্যমন্ত্রীর ‘তাজ’ তাঁর মাথাতেই যাতে ওঠে সে ই রাস্তাটা মসৃণ করার কাজ চালিয়ে যাবেন এবং এ ক্ষেত্রেও নিজের ‘অভিজ্ঞতা’কে কাজে লাগিয়েই!
মঙ্গলবারই গহলৌতকে সাংবাদিকদের কাছে বলতে শোনা যায়, ‘রাজস্থানে তো আমরা জিতব, কিন্তু…’। তিনি আরও বলেন, “সচিন যখন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হয়েছিলেন, তখন তিনি আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। ওঁকে বলেছিলাম, এটা মাথায় রাখবেন, সভাপতি হলেই কিছু মানুষ তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী বলতে শুরু করেন।” বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গহলৌতের এই ‘কিন্তু’ শব্দটি যথেষ্ট ইঙ্গিতবহ ছিল। নির্বাচনের পরই যে মুখ্যমন্ত্রীর পদ নিয়ে একটা লড়াই শুরু হতে চলেছে, সেটা তিনি ওই ছোট্ট শব্দটার মধ্য দিয়েই বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন। শুধু তাই নয়,প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি নিয়ে সচিনকে যে পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানান, তার মধ্যেও কিন্তু একটা দ্ব্যর্থক ইঙ্গিত ছিল।
আরও পড়ুন: মধ্যপ্রদেশে চূড়ান্ত ফল ঘোষণা হতেই সমর্থন মায়াবতীর, সরকার গড়ছে কংগ্রেস, পাশে অখিলেশও
আজ বুধবার, ৯৯ জন বিধায়ক নিয়ে বৈঠকে বসবেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। সেখানেই চূড়ান্ত হয়ে যাবে কার মাথায় উঠবে মুখ্যমন্ত্রীর ‘তাজ’। সচিন পাইলট সাংবাদিকদের বলেন, “বিধায়করা বৈঠকে তাঁদের মতামত জানাবেন। তবে কংগ্রেস সভাপতিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।” মুখ্যমন্ত্রীর পদের জন্য তাঁদের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকলেও, সচিন-গহলৌত দু’জনেই কিন্তু জানিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতির সিদ্ধান্ত তাঁরা নির্দ্বিধায় মেনে নেবেন। তবে সূত্রের খবর, কংগ্রেস কিন্তু চাইছে দু’জনকেই খুশি রাখতে। এক দিকে সচিনের জনপ্রিয়তা এবং অন্য দিকে গহলৌতের অভিজ্ঞতা, কোন দিকে ঝুঁকবেন রাহুল এখন সে দিকেই নজর গোটা রাজনৈতিক মহলের।
রাজস্থানে ৯৯টি আসন পেয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে উঠে এসেছে কংগ্রেস। শরিক রাষ্ট্রীয় লোক দল (আরএলডি) পেয়েছে একটি আসন। ফলে মোট ১০০ট আসন নিয়ে ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছেছে কংগ্রেস। সেখানে বিজেপি পেয়েছে ৭৩টি আসন।