ব্যপম-মৃত্যুবাড়ির দেওয়ালে নেতাদের সহাস্য পোস্টার

দরজার ওপার থেকে প্রশ্ন শুনে ভিতরটা ছ্যাঁত করে উঠল। এঁদো গলি কতরকম বাঁক নিয়ে যেন থমকে দাঁড়িয়েছে বাড়িটির সামনে।

Advertisement

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়

গ্বালিয়র শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:৫৯
Share:

বাড়ির দেওয়ালে সেই পোস্টার।—নিজস্ব চিত্র।

কাকে চাই?

Advertisement

দরজার ওপার থেকে প্রশ্ন শুনে ভিতরটা ছ্যাঁত করে উঠল। এঁদো গলি কতরকম বাঁক নিয়ে যেন থমকে দাঁড়িয়েছে বাড়িটির সামনে।

বছর চারেক আগে এমনই এক হাল্কা শীতের রাতে সিলিং ফ্যানে ফাঁস লাগিয়েছিলেন ঘরের ছেলে। পুত্রশোকে চারদিনের মাথায় তাঁর মা-ও অ্যাসিড খেয়ে আত্মহত্যা করেন। কাঁচমিলের এই গলিতে তখন নিত্য যাতায়াত ছিল পুলিশের। পরে সিবিআইও আসত নোনাধরা বাড়িটিতে।

Advertisement

সদ্য সন্ধ্যে নেমেছে। পাশের দোকানে হাতরুটির সেঁকে ভাপ নিচ্ছেন ক’জনে। বাড়ির সামনে নতুন অতিথিকে দেখে চোখ-কান খাড়া হল তাঁদের। ঘেঁষাঘেঁষি বাড়ির বারান্দা থেকেও উঁকি দিচ্ছে কৌতূহলী চোখ। দরজা খুলতেই ঘুটঘুটে অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এল একটি আবছা মুখ। তবে টিমটিমে স্ট্রিট লাইটে যাঁর মুখটি একটু স্পষ্ট হল, তিনি বয়সে নবীন।

“নারায়ণ সিংহ ভাদোরিয়া আছেন?”

“উনি তো এখানে আর থাকেন না। আপনি?”

কয়েক সেকেন্ড আগেও যে চোখগুলি কৌতূহলী ছিল, এ বারে কাছে আসতে শুরু করল। নিমেষে জটলা। তারপরেই প্রশ্ন, “কাকে খুঁজছেন বলুন তো? কে আপনি? এ বাড়িতে নায়ারণ সিংহ আর থাকেন না। ব্যপমের নাম শুনেছেন? সব কেড়ে নিয়েছে এ পরিবারের। এখন বাড়ি ভাড়া দিয়ে মোরেনা চলে গিয়েছেন।”

আরও পড়ুন: অনাপ-শনাপ পয়সা! কৃষক হত্যার মন্দসৌরেও উদ্বেগে থাকতে হচ্ছে কংগ্রেসকে

কিছু তথ্য আগাম জানা ছিলই। সে খোঁজেই আসা। সরকারি ব্যাঙ্কের সিকিওরিটি গার্ডের কাজ করতেন নারায়ণ সিংহ। ধার-দেনা করে সংসার চলত। সেভাবেই ছেলে রমেন্দ্রকে ডাক্তারি পড়িয়েছেন। হাসপাতালে কাজ করাও শুরু করেছিলেন। চাকরি করে বাবার দেনাও মেটাচ্ছিলেন। কিন্তু ব্যপম কেলেঙ্কারিতে হঠাৎ নাম এল রমেন্দ্রর। অভিযোগ উঠল, টাকা দিয়ে না কি পরীক্ষা পাশ করেছেন তিনি!

সাংবাদিক পরিচয় দিতে জমে থাকা ক্ষোভ আরও ফেটে পড়ল। পড়শি রবীন্দ্র সিংহ বললেন, “সাদামাঠা পরিবার। ছোটবেলা থেকে দেখছি। ধার করে ছেলেকে পড়িয়েছেন, লক্ষ টাকা খরচ করে সিট কিনবেন কী? চাপ আর নিতে পারল না ছেলেটি। রাঘববোয়ালদের বাঁচাতে ওকে ফাঁসাল। রমেন্দ্র গলায় ফাঁস দিল। চারদিনে আর একটি লাশ। দুটো জীবন ‘খতম’ করে পুলিশ বলল, রমেন্দ্র নির্দোষ। সে না কি ফাঁস দিয়েছে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে! সব মিথ্যে। সব সাজানো।”

আরও পড়ুন: ফ্যাক্স মেশিনই এখন সবচেয়ে বড় খলনায়ক উপত্যকার রাজনীতিতে!

মধ্যপ্রদেশ ব্যবসায়িক পরীক্ষা মণ্ডল। সংক্ষেপে ব্যপম। বড় অঙ্কের ঘুষ নিয়ে আসন কেনাবেচার বিস্তর অভিযোগ। কেলেঙ্কারির শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে উপর থেকে নীচে। রহস্যের কিনারা এখনও হয়নি। কিন্তু ৫০ জনের মতো রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। কেউ গলায় ফাঁস লাগিয়ে, কারও বা ‘আকস্মিক’ পথ দুর্ঘটনায়।

ভোটে রোজ ব্যপম তুলছে কংগ্রেস। এলাকার ‘মহারাজা’ জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া বলেছেন, “কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে ফাস্ট ট্র্যাক তদন্ত হবে। নিস্তার নেই শিবরাজ সিংহ চৌহানের।” আর শিবরাজ বলছেন, “সব কংগ্রেসের নোংরা রাজনীতি। মানুষ উন্নয়নে ভোট দেবে।”

নারায়ণদের বাড়িটিতেই বিজেপি সেঁটে দিয়েছে প্রার্থীর পোস্টার। তাতে অবশ্য দিব্য হাসছেন নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ, শিবরাজ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement