বিধানসভা নির্বাচন

‘গোমাতা’ অস্ত্র কংগ্রেসেরও, গরু-প্রেমের টক্করে ঘুম উড়েছে শিবরাজের

কংগ্রেসের নিচুতলায় এই গো-প্রেমই ঘুম ছুটিয়েছে নরেন্দ্র মোদী-শিবরাজ সিংহ চৌহানের। রাজ্যের গো-সংবর্ধন বোর্ড ছিলই। যার প্রধান স্বামী অখিলেশ্বরানন্দ আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, গরু নিয়েই নাকি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে।

Advertisement

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়

ছতরপুর শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:১৩
Share:

একটি ল্যাজ, দু’টি শিং, চারটি পা…। ছোটবেলায় গরুর রচনা শুরু হত এ ভাবে।

Advertisement

এখন? নিছক নিরীহ গৃহপ্রালিত প্রাণী নয়, গরু এখন ‘গোমাতা’। তিনি গোবর দেন, গোমূত্র দেন, দুধ দেন। সব মিলিয়ে, ভোট দেন।

মোদী-শিবরাজের ছবি ‘পাঞ্জা’য় ঢেকে দিয়ে বেশ যুদ্ধজয়ের ভাব রামস্বরূপ তিওয়ারির। বড় রাস্তার পাশে কংগ্রেসের ক্যাম্প অফিসে এলানো চেয়ারে অনবরত পা নাড়াচ্ছেন। আর গড়গড় করে নামতার মতো মুখস্থ বলছেন নব্য গরুর রচনা: “রাহুল গাঁধী কী বলেছেন? কৃষকদের মূলস্রোতে ফেরাতে হবে। প্রথম কাজ, চাষের খরচ কমানো। দুই, সার এখন দূষিত। তার থেকেও মুক্তি চাই। তাই গরু। এ বারে প্রশ্ন করুন, কী ভাবে?”

Advertisement

ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলুম। মগজ তখনও ‘মিসিং লিঙ্ক’ খুঁজে বেড়াচ্ছে। কয়েক সেকেন্ড চুপ দেখে ফের প্রশ্নটি ধেয়ে এল। এ বারে বেশ ধমকের সুরে। “কী হল, প্রশ্ন করুন, কী ভাবে?”

কী ভাবে? “মধ্যপ্রদেশের ২০১৩ সালের সুমারি দেখেছেন? ২৪ লক্ষ গোমাতা কমেছে। শিবরাজের শুধু ঘোষণা আছে, কাজ নেই। গরু পিছু খরচের কথা ছিল ১৭ টাকা, হচ্ছে কত?” রামস্বরূপের প্রতি লাইনেই পাল্টা প্রশ্ন আসছে। তড়িঘড়ি মাথা নাড়িয়ে বললাম, “জানা নেই।” জবাব শুনে আরও বিরক্ত হলেন। মুখ কুঁচকে বললেন, “দেড় টাকা। গরু বাঁচলেই গোবর সার হবে। উৎপাদন খরচ কমবে। চাষবাসে মুনাফা হবে। এই বিজ্ঞানকেই আমরা স্বীকার করেছি।”

গরুর গায়ে ভোটের রং। ছবি: টুইটার

কংগ্রেসের নিচুতলায় এই গো-প্রেমই ঘুম ছুটিয়েছে নরেন্দ্র মোদী-শিবরাজ সিংহ চৌহানের। রাজ্যের গো-সংবর্ধন বোর্ড ছিলই। যার প্রধান স্বামী অখিলেশ্বরানন্দ আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, গরু নিয়েই নাকি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে। কিন্তু যখন থেকে কংগ্রেসের কমল নাথ ভোটে জিতলে সব গ্রামপঞ্চায়েতে গোশালা বানানোর কথা বলেছেন, পড়ি কি মরি অবস্থা শিবরাজের। এই ছতরপুরে দাঁড়িয়েই তিনি ঘোষণা করেছেন, গো-মন্ত্রক হবে। গরুর অভয়ারণ্যও হবে।

তখন থেকেই শুরু গরু নিয়ে টানাহেঁচড়া। যে ‘গোমাতা’ আগে গেরুয়া শিবিরের একচেটিয়া ছিল, সেখানেও থাবা বসাল কংগ্রেস। ইস্তাহারে গোমূত্র থেকে গোবর— কিছুই বাকি রাখলেন না কমল নাথ। যে কারণে কমলের কেন্দ্রে গিয়ে কংগ্রেসের গো-প্রেমের কটাক্ষ করতে হল খোদ মোদীকেও। বজরং দলের দেবেন্দ্র রাওয়াত বলছেন, “কংগ্রেস গোশালা করবে, রামমন্দিরও করবে কি? যদি না করে, লোকদেখানো হিন্দুত্ব কেন?” রাহুল-কমলের মধ্যেও ফাঁক খুঁজে পেয়েছেন ভূপেশ সোনি। বিজেপির কর্মীটির পর্যবেক্ষণ, “রাহুল গাঁধীকে শুনেছেন গরু নিয়ে বলতে? কমল নাথের ইস্তাহার প্রকাশে তাঁকে আসতে দেখেছেন? জেনে রাখুন, মধ্যপ্রদেশে গোমাতা নিয়ে মাতামাতিতে সায় নেই রাহুলেরও।”

গরু তবে কার? যাকে নিয়ে এত হইচই, ভোট আসরে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই, সে গরু কিন্তু অনাদরে রাজ্যের পথে পথে ঘুরপাক খাচ্ছে। আর টুইটারে ঘুরপাক খাচ্ছে গরুর এক ছবি। ভোপালের গলিতে গরুর পেটে পদ্ম আঁকা। গরুও এখন ‘প্রচারক’?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement