পুত্রহারা: দীনেশ পাটিদার
বুক চিরে এফোঁড়-ওফোঁড় করা বুলেট।
ভোট-নিলামে দাম উঠেছে এক কোটি টাকা। ভোট না থাকলে প্রাণের দামটিও হয়ত এভাবে মাপা হত না দাঁড়িপাল্লায়। কিন্তু রক্তমাখা বুলেট দিয়ে কি ব্যালট কেনা যায়? প্রশ্ন তুলছে মন্দসৌর। সাম্প্রতিক কৃষক আন্দোলনের আঁতুড়ঘর।
রাহুল গাঁধীকে নোটবন্দি নিয়ে খোঁচা দিতে নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, দু’বছরে পুত্রশোকও ভুলে যান বুড়ো বাপ। আর সাত মাস পরে দীনেশ পাটিদারের দোরগোড়ায় এসে কি তা নিজে যাচাই করে নেবেন প্রধানমন্ত্রী? অন্তত এক বছর পাঁচ মাসেও ছেলে অভিষেকের রক্তমাখা শরীরটা চোখে ভাসছে তাঁর। এখনও গলা জড়িয়ে আসে বলতে গিয়ে: “দুটো বুলেট— একটি বুক চিরে নিল, আর একটি পেট। এই বাড়িতে বসেই খবর পেলাম, ছেলে আর নেই।” রাজস্থান লাগোয়া হাইওয়ের পাশেই বড়খেড়া গ্রামে বাড়ি। যে বাড়ির আশেপাশে এখন উড়ছে বিজেপিরই পতাকা।
“পতাকা লাগিয়ে যাক, আমাদের ভোট পাবে না বিজেপি। ভোটে বদল চাই। ১ কোটি টাকা দিয়েছে সরকার। তাতে ছেলে ফিরবে?” অকপট সন্তানহারা বাবা। পড়শি প্রভুলাল পাটিদার। ঘরের ভিতর টেনে নিয়ে বললেন, “এই দেখুন, সয়াবিন। সব পড়ে আছে। চাষের খরচের কথা তো ভুলেই যান। বিক্রি করব, দাম নেই। ২৭০০ টাকা কুইন্টাল, কে বেচবে এত কম দামে? আট দিন ধরে ১ বিঘা জমির পেঁয়াজ পড়ে আছে। প্রতি কিলো ২-৩ টাকায় বেচতে বলছে। চাষিদের জন্য মোদী কিস্যু করেননি। দু’দিন আগে এসেছিলেন, সব কংগ্রেসের দোষ বলে চলে গেলেন।”
গত বছর জুন মাস। ফল, সবজি, সয়াবিন, রসুন, দুধ শহরে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেন নোটবন্দিতে নাজেহাল চাষিরা। হাইওয়ের দু-ধারেই চলছিল শান্তিতে বিক্ষোভ। স্লোগান উঠছিল, ‘জয় জওয়ান, জয় কিসান’। ফসলের দাম চাই। মধ্যপ্রদেশে সমস্যা এটাই, ফসল উদ্বৃত্ত। কিন্তু চাষিরা দাম পাননা। তাতেই খাপ্পা তাঁরা। হঠাৎ এল ‘জওয়ান’দের গাড়ি, আর বুলেট ছুটল ‘কিসান’দের উপর। প্রাণ হারালেন ছ’জন। উত্তাল হল গোটা দেশ। রাজস্থান সীমানা দিয়ে নিজেরই এসপিজি নিরাপত্তার চোখে ধুলো দিয়ে বাইকে চেপে রাহুল আসছিলেন এখানে। তাঁকেও মাঝপথে আটকে দেয় বিজেপি সরকার।
আরও পড়ুন: বিজেপির রথে রাজ্যে আসতে পারেন প্রধানমন্ত্রী
কৃষক আন্দোলনের নেতা অমৃতলাল পাটিদার বললেন, “আমরা কি জঙ্গি? শিবরাজ সিংহ চৌহানের সরকার এখনও কৃষকদের বিরুদ্ধে মামলা তোলেনি। একটি তদন্ত কমিশন করেছেন, তাতেও আমাদের ভরসা নেই। সেদিন বুলেটের কার্তুজগুলো কুড়িয়ে জমা না দিলে সরকার বলত, চাষিরা নিজেদের মধ্যে লড়াই করেছেন। আর এখন তো ফসলের দাম আরও কমে গিয়েছে। চাষিরা দামও পাচ্ছেন না।”
মধ্যপ্রদেশে ক্ষমতায় এলে দশদিনে কৃষি ঋণ মাফ করার কথা বলেছেন রাহুল। কিন্তু কৃষকরা বলছেন, ঋণ মাফ চাই না। স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ মেনে ‘সি টু’-র দাম দেওয়া হোক। অর্থাৎ, চাষের মোট খরচের উপর মজুরি, জমির ভাড়া ধরে দাম দেওয়া। মন্দসৌরের ক্ষত মেটাতে গত বছরেই চাষিদের থেকে বেশি দামে ফসল কিনে নিয়েছিল শিবরাজ সরকার। কিন্তু ভোটের টানে নেওয়া সে বাড়তি ফসলও পড়ে পড়ে পচেছে।
আরও পড়ুন: মোদীর অনুরোধেই বিজেপিতে যোগ দেবেন ‘নারেগা লেডি’
কৃষক রোষেই মন্দসৌরে সভা করতে ছুটে এসেছেন মোদী। কিন্তু পুলিশের গুলিতে চাষির মৃত্যুর কথা ভুলেও মুখে আনলেন না। বরং বললেন, শিবরাজ সরকার কৃষকদের জন্য যা করেছেন, আর কেউ করেননি। পাঁচ দশকের কংগ্রেসের ‘পাপ’ এখন ঘোচাতে হচ্ছে বিজেপিকে। আর রাহুল গাঁধীর প্রতিশ্রুতি নিয়ে শিবরাজ বলছেন, ‘‘কেউ যদি বলেন চাঁদ ধরে আনবেন, সে কি সম্ভব?’’
কিন্তু মন্দসৌরে যে ‘পদ্ম’ ডোবানোর পণ করেছেন চাষিরা। আর দু’রাত। শেষ রাতে তবে কী খেল দেখাবেন ‘কৃষক-পুত্র’ শিবরাজ?