নিরাপদ আশ্রয়ে ফুজিতা পরিবার।—নিজস্ব চিত্র।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে কিছু একটা গন্ডগোলের জেরে ভারতে আসতে পারেননি শুনেছিলেন। কিন্তু তা-ও নিজেদের অসম সফর বাতিল করেননি জাপানের ইয়ামাগুচির বাসিন্দা হিরোসি ফুজিতা। উদ্দেশ্য ছিল অসম থেকে চায়ের গাছ সংগ্রহ করে নিজেদের বাগানে লাগাবেন। কিন্তু, অসমে এসে যে এমন সমস্যায় পড়বেন, ভাবতে পারেননি। ২২ ডিসেম্বর কলকাতা থেকে যোরহাটে আসেন হিরোসি। সঙ্গে স্ত্রী মিকি ফুজিতা আর দুই শিশু সন্তান।
প্রথমেই ধাক্কা। অনলাইনে যে হোটেল তাঁরা বুক করেছিলেন, অনেক খুঁজেও তেমন কোনও হোটেলের সন্ধানই পাননি আটিলাগাঁও এলাকায়। তার উপরে, সঙ্গে ছিল না পর্যাপ্ত ভারতীয় টাকা। বিদেশি মুদ্রা ভাঙানোর উপায় পাচ্ছিলেন না আন্দোলনে উত্তপ্ত উজানি অসমে। আবার স্থানীয় দোকানগুলি তাঁদের সঙ্গে থাকা ইন্টারন্যাশনাল ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডও নিচ্ছিল না। ফলে দুই সন্তান-সহ সোমবার দিনভর কিছু খেতে পারেননি ফুজিতা দম্পতি।
রাস্তায় বসে থাকা বিদেশি পরিবারকে দেখে এগিয়ে আসেন স্থানীয় যুবক ব্রজকমল গৌতম ও দীপজ্যোতি দাস। প্রথমেই তাঁরা চারজনকে একটি রেস্তোঁরায় নিয়ে গিয়ে খাওয়ান। কাজ চালানোর জন্য হিরোসির হাতে কিছু ভারতীয় টাকা তুলে দেন। যোগাযোগ করা হয় পুলিশ ও জেলাপ্রশাসনের সঙ্গে। জেলাশাসক রোশনি অপরাঞ্জি করাতির উদ্যোগে পরিবারটির থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। তিনি ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করে আজ মুদ্রা বদলের ব্যবস্থাও করে দেন। প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে, অসমবাসীর মানবিকতায় মুগ্ধ ফুজিতা পরিবার।
অসমবাসীর মানবিকতায় মুগ্ধ ফুজিতা পরিবার।
এ দিকে অসমে সংশোধনী বিরোধী আন্দোলন চলছে পুরোদমে। তার মধ্যেই রাজ্যের শিল্পী-বুদ্ধিজীবীদের একটি দল আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে আহ্বান জানান, যেহেতু সংশোধনীর বিরুদ্ধে মামলা সুপ্রিম কোর্টে উঠেছে। তাই সমাজের ভবিষ্যৎ ও মানুষের সমস্যার কথা মাথায় রেখে যেন আপাতত ছাত্র, শিক্ষক ও সরকারি কর্মীরা আন্দোলন থেকে দূরে থাকেন। অবশ্য ওই আবেদনের জবাবে আসু বলে, আন্দোলন যেমন চলছে চলবেই। আবেদনকারীরা আন্দোলনের আবেগ আঁচ করতে পারছেন না বলেই এমন আহ্বান জানিয়েছেন।
আজও গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন, তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে প্রতিবাদে নামেন। আসু ও ৩০টি সংগঠন আজ, বৃহস্পতি ও শনিবার রাজ্যজুড়ে আন্দোলনে ডাক দিয়েছে। তেজপুরের নেহরু ময়দানে আসুর উদ্যোগে বিরাট প্রতিবাদসভা হয়। ডিব্রুগড়ের চৌকিডিঙিতে জনতার গর্জন কর্মসূচিতে অংশ নেনে হাজার-হাজার মানুষ। কার্বি আংলংয়ের বোকাজানে প্রবীণ নাগরিকেরা সংশোধনীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিলে পা মেলান। আগামী কাল গুয়াহাটির লতাশিলে শিল্পী ও ভাস্করেরা ছবি এঁকে, মূর্তি গড়ে সংশোধনী বিরোধী আন্দোলনের শরিক হবেন।