বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের চাপে রাজ্যের জনসংখ্যা বাড়ছে বলে অসমের বিভিন্ন সংগঠন সরব। ঠিক সেই সময়েই রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের সমীক্ষা রিপোর্ট জানাচ্ছে: অসমে জন্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছে বাংলাদেশ-ই! সমীক্ষা বলছে, অসমের মহিলারা, বিশেষত, বিস্তীর্ণ সীমান্ত এলাকায় গর্ভনিরোধক হিসেবে ভারতীয় ‘মালা-ডি’ নয়, নির্ভর করে বাংলাদেশি ‘সুখী’-র উপরেই।
ওপার থেকে পাচার হয়ে আসা এই গর্ভনিরোধক ট্যাবলেট ‘সুখী’ কিন্তু এ দেশে স্বীকৃত নয়। কিন্তু তাতে সাধারণ মানুষের কীই বা এসে যায়! চাইলেই মালা-ডি তো পাওয়া যায় না। সরবরাহ প্রায় নেই। অথচ হাতের কাছে অঢেল ‘সুখী’। বাংলাদেশে বিনামূল্যে দেওয়া হলেও এ দেশে পাচার হয়ে আসা দশটি ট্যাবলেটের ‘সুখী’র একটি পাতার দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা। অন্য দিকে, বাজার চলতি গর্ভনিরোধকের প্রতি পাতার দাম পড়ে ৭৫ থেকে ১০০ টাকা।
রাজ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ, প্রসূতি মৃত্যু-সহ মহিলা স্বাস্থ্যের উপরে সাম্প্রতিক এক আলোচনাচক্রের সূত্র ধরে সামনে এসেছে এই তথ্য। গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজের স্ত্রীরোগ বিভাগের প্রধান আর কে তালুকদার জানান, রাজ্যের হাসপাতালে ভারতীয় গর্ভনিরোধক বড়ির অনিয়মিত সরবরাহ এবং ওই বড়ি নিয়ে ছড়ানো বিভিন্ন গুজবের ফলে বিস্তীর্ণ এলাকার মহিলারা বাংলাদেশ থেকে আসা সুখীকেই বেছে নিচ্ছেন। তাঁর কথায়, ‘‘সুখীর রাসায়নিক গঠন মালা-ডির মতো হলেও যেহেতু ভারতীয় পরীক্ষাগারে ওই ট্যাবলেটকে যাচাই করে শংসাপত্র দেওয়া হয়নি, তাই সুখী না খাওয়াই বাঞ্ছনীয়।’’
সরকারি সমীক্ষা বলছে, জন্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অসমের ২২ শতাংশ মহিলা গর্ভনিরোধক বড়িতেই আস্থা রাখেন। কন্ডোমের ব্যবহার মাত্র ২.৭ শতাংশ। রাজ্যে প্রসূতি মৃত্যুর হার প্রতি লক্ষে ৩০০ জন যা জাতীয় হার ১৬৭ জনের প্রায় দ্বিগুণ। আলোচনাচক্রে বিশেষজ্ঞরা দু’বার গর্ভধারণের মধ্যে ব্যবধান বৃদ্ধি, জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার, বিভিন্ন ভুল ধারণা ও অন্ধবিশ্বাস কাটাতে গ্রামে গ্রামে প্রচার ও হাসপাতালে প্রসবের উপরে জোর দেন।
সুখীর ব্যবহার শুধু অসম নয়, পশ্চিমবঙ্গেও প্রচুর। মা ও শিশু স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্তা সুজয় রায় জানান, উত্তরবঙ্গেও বিভিন্ন এলাকায় সুখী বহুল প্রচলিত। সেখানকার দোকানগুলি ‘বেআইনি’ জেনেও সুখী বিক্রি করছেন। জানা গিয়েছে, নদীয়া, মুর্শিদাবাদ, উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকায় ভারতীয় মালা-ডি’র চেয়ে অনেক বেশি জনপ্রিয় ‘সুখী’। বাংলায় গেদে, বানপুর, বনগাঁ হয়েও ঢুকছে সুখী। যদিও পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্যকর্তারা অবশ্য রাজ্যে সুখী-র রমরমা মানতে চাননি।