ছবি: পিটিআই।
শেষ পর্যায়ে নাটকীয় কিছু না-ঘটলে অসমের বড়োল্যান্ড বিপিএফের হাতছাড়া হওয়া প্রায় নিশ্চিত। কিন্তু হারলেও বিজেপি-ইউপিপিএলকে জোর টক্কর দিল হাগ্রামা বসুমাতারির দল।
২০০৩ সালে দ্বিতীয় বড়ো শান্তি চুক্তির পর থেকেই বড়োভূমির শাসনভার হাগ্রামার হাতে ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা বিপিএফের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি, বিজেপির সঙ্গে শাসকজোটে থাকলেও বিজেপি এ বার বিপিএফের হাত ছেড়ে বিটিসি নির্বাচনে একলা লড়ছে। তৃতীয় বড়ো চুক্তির পরে প্রাক্তন আবসু সভাপতি প্রমোদ বড়োর নেতৃত্বে ইউপিপিএলও পুরোদমে বিটিসি দখলে নেমেছে। বিজেপি জানিয়ে দিয়েছে, ইউপিপিএলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তারা বিটিসি দখলে তৈরি।
এখন পর্যন্ত হওয়া ভোট গণনায় বিজেপি ১০টি, ইউপিপিএল ১০টি, বিপিএফ ১৬টি আসন পেয়েছে। অবড়োদের দল গণ সুরক্ষা পার্টির এগিয়ে মাত্র ১টি আসনে। এই ছবিতেই স্পষ্ট, বিপিএফকে যে ভাবে উৎখাত করার দাবি করেছিল বিজেপি, বাস্তবে তেমনটা হয়নি। বরং বারবার দৃশ্যপট বদল হয়েছে। কখনও বিপিএফ, কখনও ইউপিপিএল এগিয়েছে।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি রঞ্জিৎ দাস ফল ঘোষণার আগেই ঘোষণা করেন, বিজেপির সঙ্গে বিপিএফের আর কোনও সম্পর্ক নেই। আমরা ইউপিপিএল-কে সহযোগী দল হিসেবে নিয়ে পরিষদ গড়ব। সব ঠিক মতো চললে ১৫ ডিসেম্বর হবে শপথ গ্রহণ।
বিপিএফ প্রধান হাগ্রামা বলেছিলেন, “জোট ভাঙার সাহস থাকলে বিপিএফের তিন মন্ত্রীকে বার করে দেখাক বিজেপি।” রাজ্য সরকারের মুখপাত্র হিমন্তবিশ্ব শর্মা জানান, বড়োভূমির স্বশাসিত পরিষদের ফল ঘোষণা হওয়া পর্যন্তই তাঁদের মন্ত্রিত্বের মেয়াদ থাকবে।
এ দিকে বিটিসি নির্বাচনকে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের সেমিফাইনাল হিসেবেই ধরেছিল সব দল। তার উপরে শুধু বিজেপি-বিপিএফের মিত্রতা ভঙ্গই নয়, কংগ্রেস এবং এআইইউডিএফের নতুন হওয়া মিত্রতার ভবিষ্যৎও নির্ভর করছিল।
বিটিসি নির্বাচনের আগেই মিত্রতা ভঙ্গের কথা জানিয়েছিল রাজ্য বিজেপি। কিন্তু ফল ঘোষণার আগে মিত্রতা ভঙ্গে রাজি হয়নি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। আজ প্রদেশ বিজেপি নেতারা বলেন, বড়োভূমিতে বিপিএফের ভিত নড়বড়ে হয়েছে বুঝেই মিত্রতা ভঙ্গের কথা বলা হয়েছিল। আজ সেটাই প্রমাণিত হল।
কংগ্রেস ওবং এআইইউডিএফের রাজ্য নেতারা মিত্রতার কথা ঘোষণা করলেও এআইসিসি জানিয়েছিল বিধানসভার মিত্রতা নিয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বিটিসিতে তারা অবশ্য একসঙ্গে লড়েছে। কিন্তু মিত্রতার ফল মোটেই আশানুরূপ নয়। এখন পর্যন্ত মাত্র ১টি আসনে এগিয়ে কংগ্রেস-এআইইউডিএফ জোট। উল্টে তাদের হাতে থাকা ৪টি আসন ইউপিপিএলের দিকে গিয়েছে। কংগ্রেসের এক মুখপাত্র বলেন, “আমরা ৩টি আসন
আশা করেছিলাম। কিন্তু এআইইউডিএফের সংখ্যালঘু ভোট উগ্র জাতীয়তাবাদী ইউপিপিএলের ঝুলিতে কী ভাবে জমা পড়ল‒ তা চিন্তার বিষয়। বিধানসভাতেও তেমনটা ঘটলে বিপদ।”
দ্বিতীয় বড়ো চুক্তির পরে জঙ্গি দল বিএলটির সদস্যদের নিয়েই তৈরি হয়েছিল বিপিএফ। তৃতীয় বড়ো চুক্তির পরে এই নির্বাচনে আরও আলোচিত বিষয় ছিল সদ্য মূল স্রোতে ফেরা এনডিএফবির জঙ্গি নেতাদের রাজনীতির ময়দানের লড়াই। চিরাংদুয়ারে বিটিসি উপপ্রধান
খাম্ফা বরগয়ারিকে হারান ইউপিপিএলের প্রার্থী তথা বহু নাশকতার মাথা এনডিএফবির প্রাক্তন সেনাধ্যক্ষ বি ফেরেংগা। চিরাংয়ে চিরাংয়ে এনডিএফবির প্রাক্তন চেয়ারম্যান বি সাওরাইগাওড়াও জিতেছেন। এগিয়ে আছেন এনডিএফবির প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক গোবিন্দ বসুমাতারি।