সেই দেব হাঁস। নিজস্ব চিত্র।
প্রাগ থেকে প্রাগজ্যোতিষপুর (গুয়াহাটি) পাড়ি দিল ওরা চার জন। পূর্বপুরুষের ভিটে বলে কথা! স্বভূমে যখন বংশ প্রায় নির্বংশ হওয়ার মুখে, তখনই ভিনদেশ থেকে বংশধরদের এনে ফের অসমের গৌরব দেব হাঁসের বংশবৃদ্ধির উদ্যোগ হাতে নিল বন দফতর।
অসমের জাতীয় পাখি হিসেবে পরিচিত দেব হাঁস বা ‘হোয়াইট উইঙ্গড উড ডাক’। কিন্তু এখন অসম, অরুণাচল মিলিয়ে তাদের সংখ্যা খুবই কম। আইইউসিএনের লাল তালিকায় থাকা বিপন্ন এই প্রজাতির বংশধরেরা টিঁকে গিয়েছিল কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে, পশ্চিমের দেশে। সৌজন্যে চা বাগানের সাহেবরা। পাখি বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বহু বছর আগে বাগান মালিক সাহেবরা এই হাঁসেদের সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন ইউরোপে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন ইউরোপে দেখা মেলা দেব হাঁসরা মূলত সেই হাঁসেদেরই উত্তরপুরুষ। অতএব, বংশরক্ষার ভার বর্তায় বংশধরদের উপরেই।
রাজ্যের প্রতীকী পাখিকে রাজ্যে ফেরাতে চিড়িয়াখানায় কৃত্রিম প্রজননের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল ২০১৯ সালে। খবর নিয়ে দেখা যায়, বিশ্বে একমাত্র চেক সাধারণতন্ত্রের প্রাগ চিড়িয়াখানায় ওই প্রজাতির বহু হাঁস রয়েছে। অসম চিড়িয়াখানার তদনীন্তন ডিএফও তেজস মারিস্বামীর উদ্যোগে দেব হাঁসকে গুয়াহাটি আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক ভাবে প্রাণী আনা নেওয়ায় অনেক লাল ফিতের ফাঁস পার করতে হয়। তার মধ্যেই আসে করোনা। শুরু হয় লকডাউন।
করোনা কমে আসা ও আন্তর্জাতিক বিমান ফের চালু হওয়ার পরে আবারও চেক সাধারণতন্ত্রের জ্ল়িন চিড়িয়াখানা থেকে দেব হাঁস আনার কাজ শুরু হয়। চিড়িয়াখানার ডিএফও অশ্বিনী কুমার জানান, রাজ্য বন দফতর, কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রক ও গুয়াহাটি চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের মিলিত প্রয়াসে শেষ পর্যন্ত সবুজ সঙ্কেত মেলে। চারটি পাহাড়ি ময়নার বিনিময়ে প্রাগ থেকে দোহা হয়ে গুয়াহাটি পৌঁছয় চারটি দেব হাঁস।
কালো শরীর ও কালো বিন্দু ভরা সাদা মাথার এই হাঁসগুলির বাস মূলত ক্রান্তীয় চিরহরিৎ অরণ্যের ভিতরে প্রবাহিত জলধারায়। নির্জনতাপ্রিয় এই হাঁসেরা একসঙ্গে চার থেকে দশটি পর্যন্ত থাকে। ভারতের কোনও চিড়িয়াখানায় এই হাঁস নেই। বন দফতরের পরিকল্পনা, গুয়াহাটি চিড়িয়াখানায় কৃত্রিম প্রজননের পরে দেব হাঁসকে ফের জঙ্গলের প্রাকৃতিক পরিবেশে ফেরানো হবে।