String theory

পদার্থের চূড়ান্ত উপাদান কণা নয়, সুতোর মতো এনার্জির একটা কিছু! বললেন বিজ্ঞানী অশোক সেন

স্ট্রিং থিয়োরি অনুযায়ী, পদার্থের চূড়ান্ত উপাদান কোনও কণা নয়, সুতোর মতো এনার্জির একটা কিছু। তা বিভিন্ন মাত্রায় এনার্জির কাঁপন।

Advertisement

পথিক গুহ

শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২৩ ০৭:৩৯
Share:

অশোক সেন। ফাইল চিত্র।

স্ট্রিং থিয়োরি কবে পরীক্ষামূলক ভাবে প্রমাণিত হবে, তা এখনই না বলা গেলেও, এই তত্ত্বের অন্যতম প্রধান গবেষক অশোক সেন মনে করেন, এই তত্ত্ব ঠিক পথেই এগোচ্ছে। বিজ্ঞানে তত্ত্বে কিছু সুরাহা না-হলেও, একমাত্র পরীক্ষামূলক প্রমাণই সেই তত্ত্বে আস্থা বা অনাস্থার কারণ হলেও, অশোক মনে করেন, স্ট্রিং থিয়োরির অভ্যন্তরীণ সংযুক্তি (ইন্টারনাল কনসিস্টেন্সি) ঠিকই আছে।

Advertisement

স্ট্রিং থিয়োরি অনুযায়ী, পদার্থের চূড়ান্ত উপাদান কোনও কণা নয়, সুতোর মতো এনার্জির একটা কিছু। তা বিভিন্ন মাত্রায় এনার্জির কাঁপন। এক সময়ে বলা হত, এনার্জি ২৬টা মাত্রায় কাঁপে, এখন ধরা হয় এনার্জি ১০টা মাত্রায় কাঁপে। তার মধ্যে চারটে মাত্রা হল স্পেসটাইম। আলবার্ট আইনস্টাইন প্রমাণ করেন দৈর্ঘ্য, প্রস্থ বা উচ্চতা আর সময়— এ সবই এক জিনিসের রকমফের। তা থেকে চারটে মাত্রা এক হয়ে গিয়েছে। বাকি রইল ছয় মাত্রা।

পৃথিবীর তাবড় বিজ্ঞানীরা স্ট্রিং থিয়োরির গবেষণায় মজে আছেন। তার মধ্যে অশোকের স্থান উপরের সারিতে কেন? স্ট্রিং থিয়োরি যখন গাণিতিক জটিলতার মধ্যে পড়ে পাঁচটা তত্ত্ব হয়েছিল, তখন অশোক দেখান, সেই পাঁচটা তত্ত্ব আসলে এক, তাদের মধ্যে কোনও ভেদ নেই।

Advertisement

এই ব্রহ্মাণ্ড কনস্ট্যান্ট বা ধ্রুবকের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। যেমন, একটা ধ্রুবক হল, গ্র্যাভিটেশনাল কনস্ট্যান্ট (G)। সেই কনস্ট্যান্ট নির্ভর করে দু’টো বস্তুর মধ্যে আকর্ষণ বল কী হবে। এই কনস্ট্যান্ট বা G-কে স্ট্রিং থিয়োরি ব্যাখ্যা করেছে। এ রকম আরও কনস্ট্যান্ট বা ধ্রুবক আছে। সবগুলো ধ্রুবক স্ট্রিং থিয়োরি দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। এক সময়ে মনে করা হয়েছিল, সবগুলো ধ্রুবকই হয়তো স্ট্রিং তত্ত্বে ব্যাখ্যা করা যাবে। এখন দেখা গিয়েছে, তা নয়।

নোবেলবিজয়ী বিজ্ঞানী পল অ্যাড্রিয়েন মরিস ডিরাক ‘সুন্দর’ তত্ত্বের উপর ভরসা রাখতে বলেছিলেন। তিনি গবেষকদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, তত্ত্ব সুন্দর না-হলে তা বাতিল করতে হবে। স্ট্রিং থিয়োরি সুন্দর তত্ত্ব। কিন্তু তা কি ঠিক? অশোক মনে করেন, ইন্টারনাল কনসিস্টেন্সি দেখিয়ে দিচ্ছে তা ঠিক।

দক্ষিণ মেরুতে এক দূরবীক্ষণ যন্ত্র বসানো হয়েছিল। তার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘বাইসেপ২’। সেই পরীক্ষা প্রমাণ করতে গিয়েছিল, বিং ব্যাং-এর পরবর্তী মুহূর্তের ঘটনা— যা ইনফ্লেশন নামে পরিচিত —তা ঠিক নয়। তার মানে এই নয় যে, ইনফ্লেশন তত্ত্ব ভুল। অশোক মনে করেন, ইনফ্লেশন ঠিকই ঘটেছিল। বিং ব্যাং-এর পরবর্তী মুহূর্তে নয়, হয়তো কিছুটা পরে।

এখন স্ট্রিং থিয়োরির গবেষকরা মজে আছেন, কোয়ান্টাম এনট্যাঙ্গেলমেন্ট নিয়ে। গত বছরই তিন জন বিজ্ঞানী এ বিষয়ে গবেষণা করে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। কোয়ান্টাম এনট্যাঙ্গেলমেন্ট কী? এটি হল, দূরবর্তী কোনও দু’টো কণার মধ্যে অতীন্দ্রিয় যোগাযোগ। অতীন্দ্রিয় যোগাযোগটা কী? এই যোগাযোগ হল, একটা কণার ধর্ম কী হবে, তা অন্য কণার উপর নির্ভর করে। এই যোগাযোগটা আইনস্টাইন মানতে চাননি। তিনি এর বিরুদ্ধে পেপারও লিখেছিলেন। ১৯৩৫ সালে লেখা এই পেপারে তাঁর সহযোগী ছিলেন বরিস পোডোলস্কি এবং নাথান রোজ়েন।

অশোক এখন বেঙ্গালুরুতে ‘ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর থিয়োরিটিক্যাল সায়েন্সেস’ (আইসিটিএস)-এ গবেষণারত। কলকাতাতে এসেছিলেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারমশাই অমলকুমার রায়চৌধুরী স্মারক বক্তৃতা দিতে। রবিবারই বেঙ্গালুরু ফেরত যাওয়ার কথা ছিল। যেতে পারলেন না, ভাইপো (চিকু)-র জন্মদিন হওয়ায়। উল্টোডাঙ্গার কাছে ঈশ্বরচন্দ্র নিবাসের দোতলার ফ্ল্যাটে এই সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময়ে বলছিলেন, ‘‘আমি চিকুর জন্মদিনের জন্যই থেকে গেলাম।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement