ঘরে-বাইরে প্রবল চাপে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত। ফাইল চিত্র।
তার ‘অপরাধ’ দলিত হয়েও তথাকথিত উচ্চ বর্ণের জন্য রাখা কলসির জল খেতে চাওয়া। আর তার জেরেই রাজস্থানের জালোর জেলার সুরানা গ্রামের ইন্দ্র মেঘওয়ালকে শিক্ষক বেধড়ক মেরেছিলেন বলে অভিযোগ। ইন্দ্রের মৃত্যুর পরেই জটিল হচ্ছে রাজস্থানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। ঘরে-বাইরে প্রবল চাপে মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত। এক দিকে বিরোধী দল বিজেপি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছে। অন্য দিকে কংগ্রেসে গহলৌতের বিরোধী শিবির সচিন পাইলটেরাও মুখ্যমন্ত্রীর উপরে চাপ বাড়াচ্ছেন বলে রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন।
এই পরিস্থিতিতে গহলৌত নাম না-করে তাঁর প্রাক্তন ডেপুটি পাইলটকে আক্রমণ করে জানান, দলের কিছু নেতা দলীয় কর্মী-সমর্থকদের এই বলে উস্কানি দিচ্ছেন যে, তাঁদের পর্যাপ্ত সম্মান দেওয়া হচ্ছে না। এর পরেই গহলৌতের আক্রমণ, ‘‘আপনারা কখনও কর্মীদের সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছেন? সম্মান ও মর্যাদা কী তা আপনারা জানেন?’’
দু’বছর আগে গহলৌতের বিরুদ্ধে পাইলটের বিদ্রোহ শোরগোল ফেলেছিল। এ বার গহলৌত সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠতেই পাইলট সুযোগের সদ্ব্যবহার করছেন কি না, শুরু হয়েছে গুঞ্জন। আজ জালোরে ওই দলিত ছাত্রের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন পাইলট। তিনি জানিয়েছেন, জালোরের মতো ঘটনার শেষ দেখতে চান। সঙ্গে বলেন, ‘‘দলিত সমাজকে আশ্বস্ত করছি, আমরা তাঁদের পাশে রয়েছি।’’ তবে ছাত্রের পরিবারকে মারধর করায় অভিযুক্ত পুলিশদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেরি হচ্ছে কেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন পাইলট। তাঁর জালোর-যাত্রার পরে গহলৌতও তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্য তথা প্রদেশ কংগ্রেসের প্রধান গোবিন্দ সিংহ দোতাসরাকে জালোর পাঠিয়েছেন।
এ দিকে দলিত ছাত্রের মৃত্যুতে মুখ্যমন্ত্রীকে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন বারোঁ-অটরু কেন্দ্রের কংগ্রেস বিধায়ক পানা চন্দ মেঘওয়াল। তিনি জানিয়েছেন, ৯ বছরের ছাত্রের মৃত্যুতে শোকাহত। পুলিশি সক্রিয়তার অভাবে রাজ্যে জাতিগত হিংসা বাড়ছে বলে কার্যত গহলৌত সরকারকেই নিশানা করেছেন ওই বিধায়ক। এর পিছনেও পাইলটের ইন্ধন রয়েছে কি না, সেই নিয়েও শুরু হয়েছে চর্চা। কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ চাপান-উতোরের মধ্যেই ময়দানে নেমেছে বিরোধী বিজেপিও। রাজ্য বিজেপির তরফে দলিতদের জন্য সুবিচারের দাবি জানানো হয়েছে। এ দিকে জালোরের বিজেপি বিধায়ক যোগেশ্বর গর্গ আবার জানিয়েছেন, ইন্দ্র মেঘওয়াল সম্প্রদায়ের হওয়া সত্ত্বেও জলের কলসি ছুঁয়ে দেওয়াতেই শিক্ষক মেরেছিলেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তবে ওই শিক্ষকের মারেই যে ইন্দ্রের মৃত্যু হয়েছে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই বলেও জানান যোগেশ্বর।
রাজনৈতিক বাদানুবাদের মাঝেই দলিত ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় কংগ্রেস নেত্রী ও লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার মীরা কুমার জানিয়েছেন, ১০০ বছর আগে তাঁর বাবা বাবু জগজীবন রামকে স্কুলে কলসি থেকে জল খেতে দেননি তথাকথিত উচ্চবর্ণের হিন্দুরা। ‘‘অবাক কাণ্ড হল বাবা বেঁচে গিয়েছিলেন। কিন্তু একই কারণে ৯ বছরের ছাত্রটি আর বাঁচল না,’’ টুইট মীরার।