আম আদমি পার্টির সর্বময় নেতা অরবিন্দ কেজরীওয়াল। —ফাইল চিত্র।
নতুন বছরের শুরুতেই দিল্লিতে বিধানসভা নির্বাচন। তাতে একাই লড়বে শাসকদল আম আদমি পার্টি। রবিবার এমনটাই ঘোষণা করে দিলেন দলের সর্বময় নেতা অরবিন্দ কেজরীওয়াল। তিনি জানিয়েছেন, বিধানসভা নির্বাচনে কোনও জোটের সঙ্গে থাকছে না আপ। অর্থাৎ, সব ক’টি কেন্দ্রেই প্রার্থী দেবে তারা। লোকসভা নির্বাচনে দিল্লিতে কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ‘ইন্ডিয়া’র শরিক হয়েছিল আপ। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। লোকসভায় আপের ভরাডুবি হয়েছে খাস দিল্লিতেই! সব আসনেই বিজেপি জিতেছে। এ বার বিধানসভা নির্বাচনের মুখে জোটে না থাকার কথা ঘোষণা করে দিলেন কেজরী। ফলে মনে করা হচ্ছে, আরও এক বার ধাক্কা খেল কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’।
আগামী বছরের শুরুতেই দিল্লিতে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। ফেব্রুয়ারির আগেই ভোট হতে পারে। তার আগে এখন রাজধানীর রাজনীতিতে পারদ ঊর্ধ্বমুখী। চলছে নেতাদের দলবদলও। সম্প্রতি একাধিক বড় মাপের নেতা আপ ছেড়ে অন্য দলে গিয়েছেন। আবার অনেকে কংগ্রেস এবং বিজেপি ছেড়ে যোগ দিয়েছেন শাসকদলে। এর মাঝেই রবিবার একটি সাংবাদিক বৈঠকে কেজরীকে বিধানসভা নির্বাচনে দলের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে আপ কোনও জোটে থাকবে না। একা লড়াই করবে।’’
মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচনে ধাক্কা খেয়েছে ‘ইন্ডিয়া’। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সেখানে ক্ষমতায় এসেছে বিজেপি-শিন্ডেসেনা-এনসিপি (অজিত) জোট ‘মহাজুটি’। যদিও ঝাড়খণ্ডে ‘ইন্ডিয়া’ জিতেছে। কিন্তু ‘ধারে ও ভারে’ ঝাড়খণ্ডের চেয়ে এগিয়ে থাকা মহারাষ্ট্রে জিততে না পারা ‘ইন্ডিয়া’কে পিছিয়ে রেখেছে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের একাংশের। এ বার দিল্লিতে কেজরীর ‘একলা চলো’ নীতি নতুন করে ধাক্কা দিল বিরোধী জোটকে।
‘ইন্ডিয়া’কে অবশ্য এই প্রথম ‘না’ করলেন না কেজরী। এর আগে লোকসভা নির্বাচনের সময়ে পঞ্জাবে আপ একা লড়বে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। হরিয়ানার ভোটেও কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও আসন সমঝোতা হয়নি আপের। দিল্লির বিধানসভা ভোটেও একার লড়াইয়ের উপরেই আস্থা রাখছেন কেজরী।
উল্লেখ্য, ভোট প্রচারের আবহে শনিবার দিল্লিতে পদযাত্রার সময়ে কেজরীওয়ালকে লক্ষ্য করে এক ব্যক্তি তরল পদার্থ ছোড়়েন। পুলিশের দাবি, জল ছোড়া হয়েছে কেজরীর দিকে। তবে আপের অভিযোগ, অ্যাসিড ছুড়ে আপ প্রধানকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করা হয়েছে। তাদের অভিযোগের তির বিজেপির দিকে। রবিবার ওই ‘হামলা’ প্রসঙ্গে কেজরী বলেন, ‘‘আমার দিকে যে তরল ছোড়া হয়েছিল, তাতে কোনও ক্ষতি হয়নি। তবে এর থেকে বড় বিপদ ঘটতে পারত। গত ৩৫ দিনে এটা আমার উপর তৃতীয় হামলা।’’
দিল্লির আবগারি দুর্নীতি মামলায় গত ২১ মার্চ কেজরীওয়ালকে গ্রেফতার করেছিল ইডি। তিনি মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেননি। ফলে কেজরী হয়েছিলেন ভারতের ইতিহাসে প্রথম মুখ্যমন্ত্রী, যাঁকে পদে থাকাকালীন গ্রেফতার করা হয়। তার পর দীর্ঘ দিন তিনি জেলে ছিলেন। জুন মাসে বন্দি অবস্থাতেই এই মামলায় তাঁকে ‘শোন অ্যারেস্ট’ করেছিল সিবিআই। পরে দুই সংস্থার করা মামলা থেকেই কেজরী জামিন পান। সুপ্রিম কোর্ট তাঁর জামিন মঞ্জুর করার সময়ে জানিয়েছিল, সরকারি দফতরে তিনি যেতে পারবেন না, সই করতে পারবেন না কোনও সরকারি ফাইলে। এর পরেই তিনি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন। মুখ্যমন্ত্রী হন আপ নেত্রী অতিশী। মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে কেজরীর চেয়ারেও তিনি বসেননি। আগামী নির্বাচনে জনগণের রায়ে ক্ষমতায় ফেরা নিয়ে আশাবাদী কেজরীওয়াল। ‘ইন্ডিয়া’র হাত ছেড়েই তিনি তাই লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।