কালো টাকা

যা বলতেন প্রণব, জেটলি বলছেন এখন

ক্ষমতায় থাকার সময় কালো টাকা উদ্ধারের দাবিতে তাঁদের আন্দোলনকে সমর্থন করে মনমোহন সরকারকে বেজায় চাপে ফেলেছিল বিজেপি। অচল করে রেখেছিল সংসদও। কংগ্রেস এখন জানতে চায়, সেই রামদেব বা অণ্ণা হজারে কি এ বার মোদী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামবেন? কালো টাকা উদ্ধারের প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সমালোচনা করে আজ এই প্রশ্নই তুলেছে কংগ্রেস। তাদের অভিযোগ, কালো টাকা উদ্ধারের প্রশ্নে দ্বিচারিতা করছে বিজেপি ও নরেন্দ্র মোদীর সরকার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৪ ০১:৫৯
Share:

ক্ষমতায় থাকার সময় কালো টাকা উদ্ধারের দাবিতে তাঁদের আন্দোলনকে সমর্থন করে মনমোহন সরকারকে বেজায় চাপে ফেলেছিল বিজেপি। অচল করে রেখেছিল সংসদও। কংগ্রেস এখন জানতে চায়, সেই রামদেব বা অণ্ণা হজারে কি এ বার মোদী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামবেন? কালো টাকা উদ্ধারের প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সমালোচনা করে আজ এই প্রশ্নই তুলেছে কংগ্রেস। তাদের অভিযোগ, কালো টাকা উদ্ধারের প্রশ্নে দ্বিচারিতা করছে বিজেপি ও নরেন্দ্র মোদীর সরকার। কংগ্রেস যখন তাঁর নাম করে বিজেপিকে বিঁধছে, তারই মধ্যে মোদী সরকারকে আক্রমণ শুরু করে দিয়েছেন অণ্ণাও। সুইস ব্যাঙ্কে কাদের কালো টাকা রয়েছে সেই সব নাম প্রকাশে সরকার আপারগ জেনে বিস্মিত অণ্ণা প্রধানমন্ত্রীকে এক চিঠিও লিখেছেন। অণ্ণা লিখছেন, “আইনি বাধা থাকলে সেটা প্রতিশ্রুতি দেওয়ার আগে ভাবা উচিত ছিল মোদীর।” ক্ষমতায় আসার পরে এই ক’মাসে মোদী সরকার লোকপাল নিয়োগ বা দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করার ক্ষেত্রে কিছুই করেনি বলে অভিযোগ করেছেন অণ্ণা।

Advertisement

কেন্দ্রে ক্ষমতায় এলে বিদেশে গচ্ছিত কালো টাকা উদ্ধার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু গত কাল সুপ্রিম কোর্টে মোদী সরকার জানিয়েছে, দ্বৈত কর ব্যবস্থা রোধে বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের যে দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা রয়েছে তার শর্ত মানার বাধ্যবাধকতার কারণেই সব তথ্য প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তবে এ জন্য নিজেদের ঘাড়ে দোষ না নিয়ে কংগ্রেসি জমানা, বিশেষ করে পূর্বতন নরসিংহ রাওয়ের আমলের দিকে আঙুল তুলেছেন জেটলি। তাঁর বক্তব্য, বিগত জমানায় সই হওয়া বিভিন্ন দ্বৈত কর রোধ চুক্তিতে গোপনীয়তা রক্ষার ধারা রাখা হয়েছিল। সেটাই তথ্য প্রকাশে মূল বাধা।

কিন্তু জেটলির যুক্তি খণ্ডন করে কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র অজয় মাকেন আজ বলেন, কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের ওয়েবসাইটেই লেখা রয়েছে জার্মানির সঙ্গে দ্বৈত কর ব্যবস্থা রোধ চুক্তি সই হয়েছিল ১৯৯৬-এ। তখন ক্ষমতায় ছিল যুক্তফ্রন্ট সরকার, নরসিংহ রাও নন। তা ছাড়া ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত কেন্দ্রে বাজপেয়ী সরকার ১৪টি দেশের সঙ্গে দ্বৈত কর ব্যবস্থা রোধ চুক্তি সই করে। সেই সব চুক্তিতেই গোপনীয়তা রক্ষার ধারা ছিল। এনডিএ আমলে সরকার তিনটি চুক্তি সংশোধন করেছিল। তখনও কিন্তু গোপনীয়তার ধারায় কোনও পরিবর্তন করা হয়নি। সুইস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তিটি ওই তিনটির অন্যতম।

Advertisement

কংগ্রেসের সমালোচনা সত্ত্বেও অর্থমন্ত্রী জেটলি অবশ্য অনড়ই। চুক্তির শর্ত ভেঙে কালো টাকার তথ্য বা তার মালিকের নাম প্রকাশ করে দিলে যে ভবিষ্যতে কোনও তথ্যই পাওয়া যাবে না, সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেছেন, “সরকার দ্বৈত কর চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে কোনও অ্যাডভেঞ্চারিজমে যেতে চায় না। বরং পরিণত বুদ্ধি নিয়েই এগোতে চায়। কারণ, কালো টাকা উদ্ধারে এনডিএ সরকার দায়বদ্ধ।”

মজার বিষয় হল, জেটলি এখন সেটাই বলছেন, এক সময় অর্থমন্ত্রী হিসেবে প্রণব মুখোপাধ্যায় যা বলে এসেছেন। মনমোহন সিংহের জমানায় বিজেপি যখন কালো টাকা উদ্ধারের প্রশ্নে সরকারকে চেপে ধরেছিল, সে সময় অর্থমন্ত্রী হিসেবে প্রণববাবু বার বার দ্বৈত কর চুক্তির ওই শর্তগুলির কথা বলতেন। তখন বিজেপি কান দেয়নি তাতে। সেই প্রসঙ্গ টেনেই কংগ্রেস মুখপাত্র অজয় মাকেন আজ প্রশ্ন ছোড়েন, বিজেপির মুখে দ্বৈত কর ব্যবস্থার দোহাই কি মানায়? তাঁর কথায়, “ভোট প্রচারে বিজেপি এ-ও জানিয়েছিল বিদেশের ব্যাঙ্কে এত কালো টাকা গচ্ছিত রয়েছে যে, তা উদ্ধার হলে দেশের প্রতিটি মানুষের অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা পৌঁছে যাবে। মোদী সরকার এ বার সেই প্রতিশ্রুতি পালন করে দেখাক।”

বিজেপির দ্বিচারিতা প্রমাণে মাকেন আজ একটি তালিকাও প্রকাশ করেন। তাতে ইউপিএ জমানায় কালো টাকা উদ্ধার নিয়ে বিজেপি নেতারা কে কী মন্তব্য করেছিলেন তার একটি তালিকাও আজ প্রকাশ করেন মাকেন। বর্তমান কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ ২০১১ সালে, বলেছিলেন, “বিদেশের ব্যাঙ্কে যাঁরা কালো টাকা গচ্ছিত রেখেছেন তাঁদের নাম প্রকাশে দ্বৈত করের যে যুক্তি সরকার দিচ্ছে তা ভিত্তিহীন।” আবার তৎকালীন বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ী বলেছিলেন, “সরকার নামের তালিকা প্রকাশ না করায় সরকারের শীর্ষস্থানে বসে থাকা নেতাদের সম্পর্কেই সংশয় তৈরি হচ্ছে।” অন্য দিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তখন প্রশ্ন তুলেছিলেন, “বেআইনি ভাবে টাকা লেনদেনের আইন প্রয়োগ করে মনমোহন সরকার কেন কালো টাকা উদ্ধার করছে না?”

কংগ্রেস মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি আজ বলেন, “দেশের মানুষকে ধোঁকা দিয়ে নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় এসেছেন। সেগুলি একে একে ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর উচিত মানুষকে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার জন্য তাঁদের কাছে ক্ষমা চাওয়া।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement