কড়া সংস্কারের পথে হাঁটেননি ঠিকই, কিন্তু শিক্ষা ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও ছক ভাঙার চেষ্টা করলেন অরুণ জেটলি।
কেন্দ্রের বাজেটে এ যাবৎ উচ্চশিক্ষার চেয়ে প্রাথমিক শিক্ষাই বেশি গুরুত্ব পেয়ে এসেছে। তবে এ বার বাজেটে উচ্চশিক্ষার সার্বিক উন্নতিতেই বেশি জোর দিলেন অর্থমন্ত্রী। দেশের বিভিন্ন রাজ্যে পাঁচটি আইআইটি ও পাঁচটি আইআইএম নির্মাণের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে জেটলি বুঝিয়ে দিয়েছেন, সার্বিক ভাবে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রটি শক্তিশালী করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে চাইছে মোদী সরকার। তুলনায় প্রাথমিক শিক্ষায় যে হারে আর্থিক সাহায্য বৃদ্ধির প্রয়োজন, সে হারে অনুদান বাড়াননি বলেই মনে করছেন শিক্ষা মন্ত্রকের কর্তারা।
বাজেটে কেন্দ্র ও রাজ্য যৌথ ভাবে রূপায়িত হওয়া প্রকল্পে যে হারে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ বাড়ানোর কথা ছিল, তা হয়নি বলেই অভিযোগ বিরোধীদের। এর ফলে ভবিষ্যতে রাজ্যগুলির বাড়তি অর্থের দাবিতে সরব হওয়ার সম্ভাবনাও পূর্ণমাত্রায় রয়েছে। বাজেট প্রস্তাবে দেখা যাচ্ছে শিক্ষা, স্বাস্থ্যের মতো বিষয়গুলিতে যেখানে কেন্দ্র ও রাজ্য যৌথ ভাবে খরচ বহন করে থাকে, সেখানে কেন্দ্রীয় অনুদান কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদী প্রশাসন। এর কারণ ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় এই ধরনের যৌথ পরিকল্পনা খাতে কেন্দ্রীয় অনুদান ক্রমশ কমে আসবে বলে আগেই স্থির হয়ে আছে। পরিবর্তে বাড়বে রাজ্যের অংশ। যদিও সব ক’টি রাজ্যই ওই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে। রাজ্যগুলি যেখানে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য তৎপর, সেখানে অর্থের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে স্বাভাবিক ভাবেই বিতর্ক বাড়বে।
বাজেটে জেটলি জোর দিয়েছেন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে নারী শিক্ষার উন্নতির দিকে। মেয়েদের স্কুলছুট রুখতে নতুন প্রকল্পও হাতে নিয়েছে সরকার। একটি বিষয় স্পষ্ট, সর্বশিক্ষা অভিযান বা রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযান যেমন চলছে তেমনই চলবে আগামী দিনে। কিন্তু কেন্দ্র তথা শিক্ষা মন্ত্রকের মূল লক্ষ্য হবে সামগ্রিক ভাবে উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন। এর কারণও রয়েছে। একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বিশ্বের প্রথম দু’শো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় স্থান পায়নি এ দেশের কোনও প্রতিষ্ঠান। যা নিয়ে একাধিক বার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। দেশীয় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির মান নিয়ে উদ্বিগ্ন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। তাই এ বার উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রের সার্বিক উন্নতিতে নজর দিয়েছে সরকার। জেটলি জানিয়েছেন, গোটা দেশে ৫টি আইআইটি ও ৫টি আইআইএম গড়ে তোলা হবে। যার জন্য প্রাথমিক ভাবে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। আইআইটির শিকে ছিঁড়েছে জম্মু, ছত্তীসগঢ়, গোয়া, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং কেরলে। আর আইআইএম গড়া হবে হিমাচল প্রদেশ, পঞ্জাব, বিহার, ওড়িশা ও মহারাষ্ট্রে। এ ছাড়া একটি কলা উৎকর্ষ কেন্দ্র গড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে মধ্যপ্রদেশে। কৃষি ক্ষেত্রের বিকাশে একটি আলাদা শিক্ষামূলক টিভি চ্যানেল শুরু করার পাশাপাশি পুসার কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের ধাঁচে অসম ও ঝাড়খণ্ডে দু’টি প্রতিষ্ঠান খোলারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ ও রাজস্থানে। উদ্যানসংক্রান্ত বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা হবে তেলঙ্গানা ও হরিয়ানায়। সব মিলিয়ে বরাদ্দ ধরা হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা।
উচ্চশিক্ষার নতুন পদক্ষেপের তুলনায় প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে চমক অনেক কম। তবে শিক্ষকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের উপর জোর দিয়েছে মন্ত্রক। ‘পণ্ডিত মদনমোহন মালবীয় নতুন শিক্ষক প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা’ খাতে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। গোটা দেশের প্রায় কুড়ি হাজার শিক্ষক এতে লাভবান হবেন বলে দাবি করেছেন জেটলি। এ ছাড়া সর্বশিক্ষা খাতে গত বারের চেয়ে বরাদ্দ বেড়েছে এক হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে ওই খাতে কেন্দ্রীয় সাহায্য বেড়ে দাঁড়াল ২৮,৬৩৫ কোটি টাকা। ৪,৯৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা মিশন খাতে।