—ফাইল চিত্র।
জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়ার পাঁচ মাস পরে দেশের সুপ্রিম কোর্ট আজ রায় দিল, অনির্দিষ্টকালের জন্য ইন্টারনেট বন্ধ করার অনুমতি দেওয়া যায় না। এ-ও জানিয়ে দিল, ইন্টারনেটে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাও সংবিধানের মৌলিক অধিকারে সুরক্ষিত।
গত ৫ অগস্ট ৩৭০ রদের পর বিক্ষোভ সামলাতে কার্যত কাশ্মীর উপত্যকা জুড়েই ১৪৪ ধারা জারি হয়েছিল। এখনও শ্রীনগর-সহ অনেক জায়গায় ১৪৪ ধারা রয়েছে। দেশের শীর্ষ আদালত আজ বলেছে, বারবার ১৪৪ ধারা জারি করা ক্ষমতার অপব্যবহার এবং যুক্তিসঙ্গত মত প্রকাশ, বিক্ষোভ রুখতে ১৪৪ ধারা জারি করা চলে না। তবে ইন্টারনেট বন্ধ বা ১৪৪ ধারা জারির রাজনৈতিক যৌক্তিকতা বিচারপতি এন ভি রমণের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ বিচার করতে চায়নি।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বিরোধী বিক্ষোভ ঠেকাতে দেশের নানা অংশে প্রায়ই ১৪৪ ধারা জারি করতে হচ্ছে বা ইন্টারনেট বন্ধ রাখতে হচ্ছে। সে দিক থেকে এই রায়কে আইনজীবী ও সমাজকর্মীরা তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন। কারণ, সুপ্রিম কোর্ট মত বা ক্ষোভ প্রকাশের অধিকার ও বিধিনিষেধের মধ্যে ভারসাম্যের পক্ষে বলেছে। বলেছে, ভবিষ্যতে নির্দেশ জারি হলে তার যুক্তি দেখাতে হবে। এবং ইন্টারনেট বন্ধ বা ১৪৪ ধারা সংক্রান্ত যাবতীয় নির্দেশ প্রকাশ করতে হবে। যাতে এই নির্দেশ হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করা যায়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভারের যুক্তি, ‘‘এত দিন ইন্টারনেট বন্ধ বা ১৪৪ ধারা জারির সমস্ত নির্দেশই গোপন রাখা হত। সরকার যুক্তি দিয়েছিল, বিধিনিষেধের ব্যাপারটা পুলিশ-প্রশাসন-সেনার উপরে ছেড়ে দেওয়া হোক। আদালত আজ স্পষ্ট করে দিয়েছে, এই ধরনের নির্দেশ সংবিধানের কষ্টিপাথরে যাচাই করতে হবে।’’
আরও পড়ুন: মুসলিম ভোট পেতেই মমতার বিরোধিতা: বিজেপি
তবে আইনজীবীদের একাংশের মতে, এরপরও কেন্দ্র বা রাজ্যের সরকার দেশের নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলার ঝুঁকির কথা বলে ইন্টারনেট বন্ধ বা ১৪৪ ধারা জারি করতে পারে। কারণ, আজকের নির্দেশ অনুযায়ী নির্দিষ্ট কারণ দেখিয়ে ১৪৪ ধারা জারির সুযোগ থাকছেই। আজকের রায়ে কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতিও বা কতটা বদলাবে, তা নিয়েও প্রশ্ন থাকছে। কারণ, তিন বিচারপতির বেঞ্চ আজ শুধুমাত্র কাশ্মীরের ব্যাঙ্ক, হাসপাতাল ও সরকারি পরিষেবায় অবিলম্বে ইন্টারনেট চালু করার নির্দেশ দিয়েছে।
সমস্ত ইন্টারনেট চালু করার নির্দেশ দেয়নি। সব জায়গা থেকে ১৪৪ ধারা তোলারও নির্দেশ দেয়নি আদালত। তবে তা চালিয়ে যাওয়ার দরকার রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে বলেছে। তবে রায়কে স্বাগত জানিয়ে এই মামলার অন্যতম পক্ষ— কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদের মত, ‘‘জম্মু-কাশ্মীরের মানুষের অবস্থা নিয়ে এই প্রথম সুপ্রিম কোর্ট কথা বলল।’’
ইন্টারনেট বন্ধ রাখার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন কাশ্মীর টাইমস’ পত্রিকার সম্পাদক অনুরাধা ভাসিন। তাঁর অভিযোগ ছিল, এমন ভয়ের পরিবেশ বা ‘চিলিং এফেক্ট’ তৈরি করা হয়েছে যে কাশ্মীরের মানুষ মুখ খুলতেই ভয় পাচ্ছেন। আজ সুপ্রিম কোর্ট সংবাদমাধ্যমের বাক্স্বাধীনতার কথা বললেও, ‘চিলিং এফেক্ট’-এর কথা মানতে চায়নি। প্রসঙ্গত, ৩৭০ রদ করার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে একগুচ্ছ মামলার শুনানি ২১ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে হবে।