জম্মু-কাশ্মীরে শান্তি বজায় রয়েছে, কেন্দ্রকে রিপোর্ট দিলেন অজিত ডোভাল। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
জম্মু-কাশ্মীরে বন্ধ ইন্টারনেট-কেবল পরিষেবা। মোবাইল-ল্যান্ডলাইনও কাজ করেছে না। চালু রয়েছে শুধুমাত্র সেনার স্যাটেলাইট ফোন। তাই ৩৭০ ধারা তুলে নেওয়ার পর আম কাশ্মীরীদের মনোভাব জানার উপায় কার্যত বন্ধ। এই পরিস্থিতিতে প্রথমবার উপত্যকার সামগ্রিক একটা ছবি পাওয়া গেল জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ)- অজিত ডোভালের রিপোর্টে।
গত কয়েক দিন ধরেই শ্রীনগরে ঘাঁটি গেড়েছেন অজিত ডোভাল। কেন্দ্রকে পাঠানো রিপোর্টে তিনি জানিয়েছেন, কাশ্মীরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক। সাধারণ মানুষও সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। যদিও ইন্টারনেট-কেবল চালু হওয়ার পর নতুন করে অশান্তির আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না কেন্দ্র। সেইরকম পরিস্থিতি মোকাবিলায় এবং প্রশাসনিক ও নিরাপত্তা প্রক্রিয়া মসৃণ করতে বেশ কিছুদিন অজিত ডোভালের অস্থায়ী ঠিকানা যে শ্রীনগরই হবে, সেই রকমই ইঙ্গিত মিলেছে কেন্দ্রের একটি সূত্রে।
৩৭০ ধারা তুলে নেওয়ার ঘোষণার পর অশান্তির আশঙ্কা করে কেন্দ্র যে অনেক আগে থেকেই কোমর বেঁধে নেমেছিল তার প্রমাণ মিলেছে একাধিক সিদ্ধান্তে। দফায় দফায় বিপুল সংখ্যায় সেনা মোতায়েন করে উপত্যকাকে কার্যত দুর্ভেদ্য করে তোলা, অমরনাথ যাত্রী ও পুণ্যার্থীদের কাশ্মীর ছাড়ার নির্দেশ, ইন্টারনেট-কেবল পরিষেবা বন্ধ,রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার-গৃহবন্দি করা— সবই ছিল এই পরিকল্পনার অঙ্গ। ৩৭০ ধারা তুলে নেওয়ার পরেও এই সব বন্দোবস্ত বজায় রাখা হয়েছে। আর গোটা পরিস্থিতির উপর নিয়ন্ত্রণ ও নজর রাখতে শ্রীনগরে পাঠানো হয়েছিল অজিত ডোভালকে।
সোমবার ৩৭০ ধারা রদ হওয়ার পর এনএসএ ডোভাল এই প্রথম কেন্দ্রকে রিপোর্ট পাঠালেন। রিপোর্টে তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘‘কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন জম্মু-কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ। গোটা উপত্যকায় শান্তি, স্বাভাবিক পরিস্থিতি রয়েছে। কোনও বিক্ষোভ-প্রতিরোধের ঘটনা নেই এবং সাধারণ মানুষ নিজেদের দৈনন্দিন কাজে বেরোচ্ছেন।’’
আরও পডু়ন: পাক অধিকৃত কাশ্মীর ও আকসাই চিন ভারতের অংশ, লোকসভায় বিল পেশ করে বললেন অমিত
রাজ্যের মর্যাদা থেকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করা কার্যত অবনমন বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একটা বড় অংশ। এই নিয়ে ভূস্বর্গের বাসিন্দাদের মধ্যেও ক্ষোভ-অসন্তোষ দানা বাঁধতে পারে। তাই সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আশ্বস্ত করেছেন, এটা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নয়। কাশ্মীরে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরলেই ফের রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া হতে পারে জম্মু-কাশ্মীরকে। ডোভাল তাঁর রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্যে খুশি উপত্যাকাবাসী। তাঁরা অনেকটাই আশ্বস্ত। কেন্দ্রকে সহযোগিতার মনোভাবই ফুটে উঠেছে আম কাশ্মীরীদের মধ্যে।
পর্যবেক্ষকরা অবশ্য বিষয়টি এতটা সহজ-সরল ভাবে দেখতে রাজি নন। তাঁদের বড় একটা অংশের মত, ডোভাল কেন্দ্রের প্রতিনিধি হয়েই শ্রীনগরে রয়েছেন। তিনি কেন্দ্রের পক্ষে রিপোর্ট দেবেন, এর মধ্যে নতুন কিছু নেই। এখনই এত উচ্ছ্বসিত হওয়ার মতো পরিস্থিতিও তৈরি হয়নি। সব রকম যোগাযোগ ব্যবস্থা কার্যত স্তব্ধ। সেই সব ব্যবস্থা চালু হলে সেখানে ফের অশান্তি ছড়াতেই পারে। তাতে মদত দিতে পারে পাকিস্তানপন্থী শক্তিগুলি। ইসলামাবাদও চেষ্টা করবে ইন্ধন দিতে। সব মিলিয়ে অশান্ত হয়ে উঠতে পারে গোটা উপত্যকা।
আরও পড়ুন: ‘বেআইনি’ বলে নিন্দায় পাকিস্তান, ৩৭০ নিয়ে বাকি সব দেশের মুখে কুলুপ
অশান্তির আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না কেন্দ্রও। সেই কারণেই গোটা পরিস্থিতির উপর নজর রাখা এবং নিয়ন্ত্রণের জন্যই ডোভালকে আপাতত শ্রীনগরেই রেখে দিতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহরা। তাঁকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে অভ্যন্তরীণ হোক বা নিয়ন্ত্রণরেখায় পাকিস্তানের বাড়বাড়ন্ত— কোনও রকম অশান্তি বরদাস্ত করা হবে না। ৩৭০ ধারা উঠে যাওয়ার পর সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক কাঠামোয় যে রদবদল আসন্ন, সেই প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করা এবং নিরপত্তাজনিত যে কোনও পরিস্থিতির মোকাবিলায় দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন তিনি।সব মিলিয়ে গোটা প্রক্রিয়া যাতে সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হয় এবং দ্রুত কাশ্মীরে স্বাভাবিক ছন্দ ফিরে আসে, সেই কাজের দায়িত্বভার বর্তেছেডোভালের উপরই।