শ্রীনগরের রাস্তায় স্কুলপড়ুয়ারা। ছবি: টুইটার থেকে
দু’সপ্তাহ টানা ‘ঘরবন্দি’ থাকার পর স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার চেষ্টা করছে কাশ্মীর উপত্যকা। সোমবার কিছু স্কুল, সব সরকারি অফিস খুললেও তাতে যেন স্বতঃস্ফূর্ততার অভাব। অধিকাংশ স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। সরকারি অফিসেও হাজিরা নামমাত্র। কার্ফু উঠলেও মোড়ে মোড়ে সেনার কড়া নজরদারি বহাল রয়েছে। মোবাইল ইন্টারনেট এখনও বন্ধ। ছাড়া হয়নি গ্রেফতার হওয়া শতাধিক রাজনৈতিক নেতাকে। সব মিলিয়ে শ্রীনগর-সহ গোটা উপত্যকা জুড়ে এখনও থমথমে পরিবেশ।
প্রশাসনের তরফে শনিবারই ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছিল, সোমবার থেকে সব সরকারি অফিসে স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু হবে। তালা খুলবে উপত্যকার প্রায় ২০০ স্কুলের। সোমবার দেখা গেল, সরকারি অফিসে কর্মীদের হাজিরা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম। তার চেয়েও নগণ্য সাধারণ মানুষের উপস্থিতি। হাতে গোনা দু’-একজন কাজে এসেছিলেন কিছু অফিসে। তার বাইরে সিংহভাগ অফিস ছিল সুনসান।
স্কুলগুলির অবস্থা আরও শোচনীয়। শ্রীনগরের ৯০০ স্কুলের মধ্যে খুলেছিল ১৯৬টি। কিন্তু সেখানে পডু়য়াদের উপস্থিতি অত্যন্ত কম। শিক্ষকদের হাজিরাও পর্যাপ্ত ছিল না। অনেক স্কুলে নির্ধারিত সময়ের আগেই ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই সব স্কুলে শিক্ষকরাও বাড়ির পথ ধরেছেন নির্ধারিত সময়ের আগেই। একজন পড়ুয়াও আসেনি, এমন স্কুলও রয়েছে কয়েকটি। তবে বেসরকারি কোনও স্কুল খোলেনি। গত দু’দিনে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের জেরে অভিভাবকরা ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে রাজি হননি। সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর, শুধুমাত্র বেমিনাতে পুলিশ পাবলিক স্কুল এবং কিছু কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে পড়ুয়ার সংখ্যা কিছুটা বেশি ছিল।
শ্রীনগরের ডেপুটি পুলিশ কমিশানার শাহিদ ইকবাল বলেন, ‘‘নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করার পর একাংশ স্কুল খুলে দেওয়া হয়েছিল। অভিভাবকদের কাছে আমরা আবেদন জানিয়েছি, যে সব স্কুল খুলেছে, সেখানে নির্ভয়ে সন্তানদের পাঠান। নিরাপত্তার দায়িত্ব আমাদের।’’ কিন্তু সেই আশ্বাস এবং আবেদনে যে তেমন কাজ হয়নি, উপস্থিতির হারেই তার প্রমাণ।
শ্রীনগরের লালচকের ক্লকটাওয়ার এলাকা সুনসান। সোমবার। ছবি: এএফপি
আরও পড়ুন: কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে কিসের কথা! কথা হলে হবে ‘পিওকে’ নিয়ে, বললেন রাজনাথ
কেন কাজ হয়নি, উপত্যকার সামগ্রিক ছবিটা বোঝার চেষ্টা করলেই তার উত্তর মিলবে। জম্মু-কাশ্মীর শান্ত ও স্বাভাবিক রয়েছে বলে প্রশাসন যতই দেখানোর চেষ্টা করুক, বিচ্ছিন্ন প্রতিবাদ-বিক্ষোভ যে চলছেই, তার প্রমাণ মিলেছে রবিবার রাতেও। শ্রীনগরে রাতভর দফায় দফায় সঙ্ঘর্ষ হয়েছে নিরাপত্তা কর্মী ও বিক্ষোভকারীদের। তার জেরে শ্রীনগরের বেশ কিছু এলাকায় ফিরে এসেছে কার্ফুর মতো পরিস্থিতি। মোবাইল-ইন্টারনেট চালু করেও বহু জায়গায় ফের বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছেন।
তবে প্রশাসনের দাবি, উপত্যকার এক তৃতীয়াংশ ল্যান্ডলাইন খুলে দেওয়া হয়েছে। যদিও তার সঙ্গে বাস্তবের খুব একটা মিল খুঁজে পাননি কাশ্মীরিরা। নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কয়েক দফা পর্যালোচনা করার পরই মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে প্রশাসনের শীর্ষ সূত্রে খবর। যদিও নির্দিষ্ট কোনও দিন-তারিখ এখনও জানানো হয়নি প্রশাসনের তরফে।
আরও পড়ুন: ফুঁসছে যমুনা, উত্তরাখণ্ডে মেঘভাঙা বৃষ্টি, হিমাচলে মৃত ২৪, মৃত্যু পঞ্জাব-উত্তরাখণ্ডেও
জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা ও মেহবুবা মুফতি-সহ যে শতাধিক রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেফতার করে রাখা হয়েছে, তাঁদের এখনও ছাড়া হয়নি। কবে ছাড়া হবে, সে বিষয়েও মুখ খুলতে চাইছেন না প্রশাসনিক আধিকারিকরা। জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যসচিব রোহিত কানসাল বলেন, পুরো পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার পরই দীর্ঘস্থায়ী ভাবে নিয়ন্ত্রণ শিথিল করা হবে। দু’-তিনটি বিক্ষোভের ঘটনার কথা স্বীকার করেও কানসালের দাবি, মাত্র দু’জন অল্পবিস্তর আহত হয়েছেন।