বেজিংয়ে ওয়াং ই-র সঙ্গে বৈঠকে জয়শঙ্কর। ছবি: পিটিআই।
মত পার্থক্য থাকতেই পারে, কিন্তু তা যেন সঙ্ঘাতে পরিণত না হয়। চিন সফরে গিয়ে এমনই বার্তা দিলেন ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ইন্দো-চিন সীমান্তে অবস্থিত লাদাখকে সম্প্রতি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। এ নিয়ে নতুন করে তিক্ততা বেড়েছে দু’দেশের মধ্যে। ভারতীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে খোলাখুলি অসন্তোষও প্রকাশ করেছে চিন। তার মধ্যেই তিনদিনের বেজিং সফরে গিয়েছেন এস জয়শঙ্কর। সেখানেই সোমবার এমন মন্তব্য করেন তিনি। জয়শঙ্করের মতে, বিশ্বব্যাপী অনিশ্চয়তার মধ্যে দুই আঞ্চলিক শক্তির পারস্পরিক সম্পর্কে স্থিতিশীলতা বজায় থাকা অত্যন্ত জরুরি।
এ দিন বেজিংয়ে চিনের বিদেশমন্ত্রী তথা স্টেট কাউন্সিলর ওয়াং ই-র সঙ্গে বৈঠক করেন জয়শঙ্কর। সেই বৈঠকে ২০১৭ সালে কাজাখস্তানের আস্তানায় আয়োজিত সাংহাই সম্মেলনের ঐক্য চুক্তির কথা তুলে ধরেন তিনি। জয়শঙ্কর বলেন , ‘‘দু’বছর আগেই বাস্তব পরিস্থিতির আঁচ পেয়েছিলেন আমাদের রাষ্ট্রনেতারা। তাই আস্তানায় ঐক্য চুক্তি করেছিলেন যাতে, বিশ্বব্যাপী অনিশ্চয়তার মধ্যেও ভারত-চিনের পারস্পরিক সম্পর্কে স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। তাই মতপার্থক্য থাকলেও, দু’দেশের মধ্যে যাতে সঙ্ঘাতনা বাধে, তা নিশ্চিত করতে হবে।’’
এর আগে কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে ভারত সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছিল চিন। বিষয়টি যেহেতু ভারত-পাকিস্তানের ইতিহাসের সঙ্গেই জড়িত, তাই একতরফা ভাবে স্থিতাবস্থার পরিবর্তন ঘটানো বা উত্তেজনা বাড়ানোর মতো পদক্ষেপ এড়িয়ে চলা উচিত বলেই মন্তব্য করেছিল বেজিং। এ দিনের বৈঠকের পরেও একই সুর ধরা পড়ে ওয়াং ই-র গলায়। তিনি জানান, কাশ্মীর নিয়ে একই অবস্থানে রয়েছেন তাঁরা। আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ভারত গঠনমূলক ভূমিকা পালন করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। বৈঠকের পর চিনা বিদেশমন্ত্রকের তরফেও একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। তাতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের নিয়ম-নীতি মেনে এবং শিমলা চুক্তির কথা মাথায় রেখেই ভারতকে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করতে হবে।
আরও পড়ুন: ইদের নামাজ মিটতেই থমথমে কাশ্মীর, বিক্ষিপ্ত বিক্ষোভের কথা মানল কেন্দ্র
গত সপ্তাহের শুরুতে রাষ্ট্রপতির সম্মতিতে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা খারিজ করে নরেন্দ্র মোদী সরকার। উপত্যকাকে দু’টুকরো করে জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখ, দু’টি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলও গঠনের বিল পাশ হয় সংসদে। ভারতের এই সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করে চিন। চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র হুয়া চুনাইং বলেছিলেন, ‘‘ভারত-চিন সীমান্তের পশ্চিম অংশের চিনা ভূখণ্ডে,যা ভারতের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে রয়েছে,সেখানে ভারতের প্রবেশ নিয়ে চিন বরাবরই আপত্তি জানিয়ে এসেছে। এখন ভারত তার অভ্যন্তরীণ আইনে একতরফা পরিবর্তন করে চিনের ভূখণ্ডের সার্বভৌমত্বে আঘাত করেছে। সেটা কার্যকরী হবে না। চিন এটা মানবেও না।’’
আরও পড়ুন: ‘তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে যান’! ইদ এলেও স্বস্তি এল না উপত্যকায়
কিন্তু তাঁর আপত্তি উড়িয়ে দেন ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রবীশ কুমার। তিনি বলেন, ‘‘সংসদে যে জম্মু-কাশ্মীর পুনর্বিন্যাস বিল আনা হয়েছে, সেটা ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। ভারত কারও অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলায় না।আশা করা যায় বাকিরাও ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলাবে না।’’এ নিয়ে মন্তব্য-পাল্টা মন্তব্যের মধ্যেই চিন সফরে গিয়েছেন জয়শঙ্কর। বিদেশ দফতরের দায়িত্ব পাওয়ার আগে চিনে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি।