শ্রীনগরে বিদেশি প্রতিনিধিদের কনভয়। ছবি: পিটিআই
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের বাছাই করা সদস্যদের কাশ্মীর ঘুরিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছিল কেন্দ্র তথা বিজেপি সরকার। ফের প্রায় একই পরিকল্পনা কেন্দ্রের। আজ দু’দিনের সফরে ইইউ দেশগুলির পার্লামেন্টের সদস্যদের আসার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তাঁরা আসেননি। ভারত সরকারের নির্ধারিত সফরসূচিতে (গাইডেড ট্যুর) আপত্তি জানিয়েই ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা উপত্যকায় এলেন না বলে সূত্রের খবর। একটি সূত্রে এমনও খবর, জম্মু-কাশ্মীরের ‘বন্দি’ তিন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চান চেয়েছিলেন তাঁরা। তবে সফরে এসেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত-সহ ১৫ জনের বিদেশি প্রতিনিধি দল।
তবে ‘গাইডেড ট্যুর’-এর জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা আসেননি, সে বিষয়টি মানতে চায়নি ভারতীয় বিদেশনমন্ত্রক। সাংবাদিক সম্মেলন করে বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র রবীশ কুমার বলেন, ‘‘আমরা চেয়েছিলাম, ওই প্রতিনিধি দলটি যাতে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যায় থাকে। বিরাট সংখ্যক না হয়ে যায়। আমরা চেয়েছিলাম অঞ্চলভিত্তিক বিভিন্ন এলাকার প্রতিনিধিরা থাক।’’
গত ৫ অগস্ট সংসদে ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদের ঘোষণার পর থেকেই উপত্যকাকে কার্যত বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছিল। গোটা উপত্যকায় ইন্টারনেট, মোবাইল, ল্যান্ডলাইন, কেবল পরিষেবা পুরোপুরি বন্ধ করে রেখেছিল কেন্দ্র। অধিকাংশ জায়গায় কার্ফু জারি করে মোতায়েন করা হয়েছিল প্রচুর অতিরিক্ত সেনা। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের জেরে আন্তর্জাতিক মহলে চাপের মুখে পড়ে কেন্দ্র। এ ভাবে উপত্যকাকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা কার্যত মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল বলে অভিযোগ উঠেছিল আন্তর্জাতিক নানা মহল থেকে।
সেই পরিস্থিতিতেই আন্তর্জাতিক মহলকে তুষ্ট করতে ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদের প্রায় তিন মাস পর অক্টোবরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাছাই করা সদস্যদের কাশ্মীর ঘোরানোর বন্দোবস্ত করেছিল কেন্দ্র। কিন্তু তা নিয়ে বিতর্কের ঝড় ওঠে। প্রথমত, সরকারের নির্ধারিত রুটে তাঁরা সফর করেছেন। ফলে উপত্যকার প্রকৃত অবস্থা তাঁরা কতটা বুঝতে পেরেছেন, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। আবার বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছিলেন, দেশের কোনও রাজনৈতিক নেতাকে যখন কাশ্মীরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না, সেখানকার শীর্ষ নেতাদের ‘বন্দি’ করে রাখা হয়েছে, অথচ বিদেশি প্রতিনিধিদের ঘোরানো হচ্ছে।
এই বিতর্কের আঁচ আন্তর্জাতিক মহলের কাছেও অজানা নয়। তাই এ বারের প্রতিনিধিরা দাবি করেছিলেন, গাইডেড ট্যুর নয়, তাঁরা স্বাধীন ভাবে উপত্যকায় ঘুরতে চান। তাঁদের নিজেদের পছন্দমতো সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলতে চান। তা ছাড়া ‘বন্দি’ জম্মু-কাশ্মীরের তিন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লা, ওমর আবদুল্লা ও মেহবুবা মুফতি-সহ অন্য নেতাদের সঙ্গেও দেখা করে এবং কথা বলে উপত্যকার পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করতে চান তাঁরা। এই যুক্তি দেখিয়েই ইইউ প্রতিনিধিরা সফরে যোগ দেননি বলে প্রতিনিধিদের একাধিক সূত্রে খবর।