মহিলাদের জন্য ভারতই কি সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশ? উঠছে প্রশ্ন। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
আফগানিস্তান নয়, সিরিয়া নয়, পাকিস্তান নয়, এমনকি, সৌদি আরবের মতো মুসলিম শাসনের দেশও নয়, শেষে কি না ভারত? মহিলাদের জন্য ভারতই নাকি সবচেয়ে নিরাপত্তাহীন, সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশ!
সম্প্রতি এক সমীক্ষায় এই দাবি করার পরই দেশ জুড়ে হইচই পড়ে যায়। তার পরে সমীক্ষা নিয়েই একাধিক প্রশ্ন উঠেছে। সমীক্ষার ধরন, নমুনা বাছাই, পদ্ধতি-সহ গোটা সমীক্ষাই ভুল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি, সামান্য একটি অংশের মতকে গোটা বিশ্বের মতামত বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে।
সমীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পরই তা নিয়ে খোঁজখবর শুরু করেন বিশেষজ্ঞরা। জানা যায়, ওই সমীক্ষায় সারা বিশ্বের বিভিন্ন ক্ষেত্রের মোট ৫৪৮ জন বিশেষজ্ঞের মতামত নেওয়া হয়। স্বাস্থ্য, সামাজিক বিভেদ, সংস্কৃতি, যৌনতা সংক্রান্ত ও সাধারণ অপরাধ, এবং মানব পাচার বিষয়ে তাঁদের প্রশ্ন করা হয়। প্রথমে তাঁদের রাষ্ট্রসঙ্ঘের তালিকাভুক্ত ১৯৩টি দেশের মধ্যে সামগ্রিক ভাবে সবচেয়ে খারাপ পাঁচটি দেশের নাম জিজ্ঞাসা করা হয়। এর পর এই ছ’টি বিষয়ে কোন দেশ সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে রয়েছে, সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়।
আরও পড়ুন
মাথায় দেনার পাহাড়, স্ত্রী-কন্যাকে বিক্রির চেষ্টা অটো চালকের
কিন্তু বিষয়টির আরও গভীরে খোঁজখবর নিতেই জানা যায়, ওই বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ৪১ জন ভারতীয়। কিন্তু বাকি বিশেষজ্ঞরা কোন দেশের, সে বিষয়ে কিছু স্পষ্ট নয় সমীক্ষার রিপোর্টে। তা ছাড়া, মোট ৭৫৯ জন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁদের মধ্যে ৫৪৮ জন অংশ নিয়েছেন। বাকিরা উত্তরই দিতে চাননি। যাঁরা অংশগ্রহণ করেননি, তাঁদের বিষয়েও সবিস্তার তথ্য নেই।
ভারতে স্বাধীন ভাবে গবেষণাকারী সংস্থাগুলির অন্যতম সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব ডেভেলপিং সোসাইটিজ (সিএসসডিএস)-এর ডিরেক্টর সঞ্জয় কুমারের মতে, এই সমীক্ষায় ‘স্বচ্ছতার অভাব’ রয়েছে। রয়েছে একাধিক প্রশ্ন। এই নমুনাগুলি কীসের ভিত্তিতে বাছাই করা হল, তাঁরা মহিলা নাকি পুরুষ, কোন দেশের— সমীক্ষার ক্ষেত্রে এই প্রশ্নগুলি অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু সে সব প্রশ্নের উত্তর নেই অথবা বিস্তর ধোঁয়াশা রয়েছে।
আরও পড়ুন
কাশ্মীরে শিশুদের বন্দুকের মুখে ঠেলে দিয়েছে হিজবুল-জৈশ, বলছে রাষ্ট্রপুঞ্জ
আবার এই বিশেষজ্ঞদের কারও সঙ্গে সরাসরি অথবা কারও সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলা হয়েছে। এটা নিয়েও প্রশ্ন তুলে সঞ্জয় কুমারের বক্তব্য, সাক্ষাৎকারের এই পদ্ধতি ভিন্ন হলে বা মিশে গেলে সমীক্ষার ফল সঠিক না হওয়ার আশঙ্কা প্রবল।
নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রক সমীক্ষা নিয়ে আগেই প্রশ্ন তুলেছিল। মন্ত্রকের বক্তব্য ছিল, দেশের দুর্নাম করতেই এই সমীক্ষা করা হয়েছিল।
জাতীয় মহিলা কমিশনেরও অভিমত, সিরিয়া, আফগানিস্তান, সৌদি আরবের মতো দেশে, যেখানে মহিলারা কার্যত কোনও কথাই বলতে পারেন না, তার থেকেও ভারতের স্থান নীচে? এটা ভাবনারও অতীত!