এ দেশেও অ্যাপল তাদের নিজস্ব বিপণি খুলতে চলেছে।
নিউ ইয়র্কের ফিফ্থ অ্যাভিনিউ, লন্ডনের রিজেন্ট স্ট্রিট, সিঙ্গাপুরের অর্চার্ড রোডের মতো এ বার এ দেশেও অ্যাপল তাদের নিজস্ব বিপণি খুলতে চলেছে। দিনক্ষণ এখনও ঠিক হয়নি। আজ অ্যাপল জানিয়েছে, ‘ভারতের প্রথম অ্যাপল স্টোরে ক্রেতাদের স্বাগত জানানোর জন্য আমরা অপেক্ষা করছি।’
এত দিন এ দেশে অ্যাপল-এর নিজস্ব বিপণি খোলার পিছনে প্রধান বাধা ছিল, একই ব্র্যান্ডের পণ্যের খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির ক্ষেত্রে নানা রকম শর্ত। বুধবার নরেন্দ্র মোদী সরকার সেই শর্ত শিথিল করে দেওয়ার পরে অ্যাপল-এর লগ্নির ক্ষেত্রে বাধা অনেকটাই কেটে গিয়েছে। এর পরেই অ্যাপল বিবৃতি দিয়ে জানায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রী মোদী ও তাঁর টিমের সমর্থন ও কঠোর পরিশ্রমের আমরা প্রশংসা করি। আমরা ভারতের ক্রেতাদের ভালবাসি। বিশ্বে অ্যাপল-এর ক্রেতাদের যেমন অভিজ্ঞতা হয়, ভারতের ক্রেতাদের অনলাইনে ও বিপণিতে সেই একই পরিষেবা দেওয়া ওঁদের জন্যই সম্ভব হবে।’’
অ্যাপল খুশি হলেও আজ কংগ্রেস আপত্তি তুলে বলেছে, মোদী সরকারের সিদ্ধান্ত দেশের তিন কোটি দোকানদার এবং সেখানে কর্মরত ১৫ কোটি কর্মীদের উপর কুঠারাঘাত। এঁদের রুটি-রুজি প্রশ্নের মুখে। আরএসএসের স্বদেশি জাগরণ মঞ্চের নেতা অশ্বিনী মহাজন আজ তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করে বলেছেন, ‘‘এই বিদেশি লগ্নি-নির্ভর কৌশল ক্ষতিকারক। ছোট ও মাঝারি শিল্প এবং স্টার্ট-আপ থেকে আর্থিক বৃদ্ধি হওয়া দরকার। গত ৩০ বছরের ভুল নীতিতে বেকারি এবং অসাম্য বেড়েছে। নিরক্ষরতা, ক্ষুধার সমস্যার কোনও সমাধানই হয়নি।’’
কংগ্রেস নেতা রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘এই সিদ্ধান্ত থেকে স্পষ্ট, মোদী সরকার শুধু বিদেশি সংস্থার উপকারে লেগে রয়েছে। নতুন নিয়মের জেরে খুচরো ব্যবসা করা সংস্থাগুলি যদি ৩০% দেশের বাজার থেকে কিনে বিদেশে রফতানি করতে পারে, তা হলে দেশে বেচার জন্য ১০০% পণ্যই বিদেশ থেকে আমদানি করতে পারবে। এ তো মোদীর মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্পেরই বিরোধী!’’
অ্যাপল-এর লগ্নিতে প্রধান বাধা ছিল— ভারত থেকে ৩০ শতাংশ পণ্য কেনার শর্ত। অ্যাপল এখন অন্য সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করে এ দেশে আইফোন তৈরি করছিল। চুক্তির ভিত্তিতে পণ্য তৈরির জন্য কারখানাতেও ১০০ শতাংশ বিদেশি লগ্নির ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য শর্তও শিথিল করা হয়েছে। বিপণি খোলার আগে অনলাইনে বেচার অনুমতিও দেওয়া হয়েছে। রণদীপ বলেন, ‘‘বিদেশি সংস্থাগুলি বিপণি খোলার আগে দু’বছর অনলাইনে বেচতে পারবে। তার পরেও পাঁচ বছরে ৩০ শতাংশ পণ্য দেশের বাজার থেকে কেনার শর্ত পূরণ করলেই চলবে। এর অর্থ, সাত বছর পর্যন্ত তাদের কেউ কোনও প্রশ্ন করতে পারবে না।’’
কংগ্রেস আপত্তি তুললেও আইফোন-ভক্তরা খুশি। কারণ ২০১৮-র সিরিজের আইফোন কিনতে এখন আমেরিকার তুলনায় প্রায় ২০ হাজার টাকা বেশি খরচ করতে হয়। আর তা হবে না। নতুন আইফোন বাজারে এলে তা সঙ্গে সঙ্গে এ দেশে মিলবে। বিপণি খোলার দিনক্ষণ নিয়ে অ্যাপল-এর বক্তব্য, সব পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে কিছু সময় লাগবে। ভবিষ্যতে আরও ঘোষণা হবে।
খুচরো ব্যবসার পাশাপাশি কয়লা খননে ১০০ শতাংশ বিদেশি লগ্নি নিয়ে আপত্তি তুলেছে সিপিএম এবং এআইটিউসি। অভিযোগ, এর ফলে দেশের খনিজ সম্পদ নিয়ে বিদেশি সংস্থাগুলি নয়ছয় করবে। কোল ইন্ডিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হবে।