ছেলের শোকে ছাদ থেকে ঝাঁপ দম্পতির

অসুস্থ ছেলেকে ফিরিয়ে দিয়েছিল দু’টি বড় হাসপাতাল। তৃতীয় হাসপাতালে ভর্তি করার কয়েক ঘণ্টা পরে মৃত্যু হয় সাত বছরের ওই বালকের। পুত্রসন্তানের মৃত্যুর শোক সহ্য করতে না পেরে আত্মঘাতী হলেন দিল্লির এক দম্পতি।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:৩০
Share:

অসুস্থ ছেলেকে ফিরিয়ে দিয়েছিল দু’টি বড় হাসপাতাল। তৃতীয় হাসপাতালে ভর্তি করার কয়েক ঘণ্টা পরে মৃত্যু হয় সাত বছরের ওই বালকের। পুত্রসন্তানের মৃত্যুর শোক সহ্য করতে না পেরে আত্মঘাতী হলেন দিল্লির এক দম্পতি।

Advertisement

ঘটনা গত বৃহস্পতিবার মাঝ রাতের। মৃত দম্পতির নাম লক্ষ্মীচন্দ্র এবং ববিতা রাউত। লক্ষ্মীচন্দ্ররা আদতে ওড়িশার কেন্দ্রপড়ার বাসিন্দা। গত কয়েক বছর ধরে দিল্লির লাডো সরাই এলাকায় একটি দু’কামরার ভাড়ার ফ্ল্যাটে থাকতেন রাউত দম্পতি। সঙ্গে থাকত একমাত্র ছেলে অবিনাশ। একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন লক্ষ্মাচন্দ্র। প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, দিন কয়েক আগে জ্বর হয়েছিল অবিনাশের। স্থানীয় এক নার্সিংহোমের ডাক্তারকে দেখাচ্ছিলেন রাউত দম্পতি। কিন্তু গত মঙ্গলবার আচমকা শরীর খারাপ হতে শুরু করে অবিনাশের। ডেঙ্গি ধরা পড়ে তার। অবিনাশকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে গিয়ে এর পর চরম হেনস্থা হতে হয় লক্ষ্মীচন্দ্র ও ববিতাকে। পর পর দু’টি হাসপাতালে শয্যা নেই বলে প্রত্যাখ্যাত হন তাঁরা। অবশেষে প্রায় পাঁচ ঘণ্টার চেষ্টায় অন্য একটি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করানো হয় অবিনাশকে। কিন্তু তত ক্ষণে অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে তার। শেষমেশ ৮ তারিখ দুপুর একটা নাগাদ মারা যায় অবিনাশ।

প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, একমাত্র ছেলের মৃত্যুর শোক মেনে নিতে পারেননি ববিতা। হাসপাতালের ছাদ থেকেই ঝাঁপ দেওয়ার কথা বলছিলেন তিনি। স্বামী লক্ষ্মীচন্দ্রই তাঁকে সামলান। পরে গত বৃহস্পতিবার রাতে আচমকা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান রাউত দম্পতি। সেই সময় ববিতার বাবা বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, ‘একটু হেঁটে আসছি’ বলে ফ্ল্যাট থেকে বেরোন তাঁর মেয়ে-জামাই। দীর্ঘক্ষণ তাঁরা ফিরে না আসায় প্রতিবেশীদের ডাকেন ববিতার বাবা। কিছু ক্ষণ পরে তাঁদের বাড়ির ঠিক পাশে একটি স্কুলের চত্বরে লক্ষ্মীচন্দ্র আর ববিতার রক্তাক্ত দেহ পাওয়া যায়। পুলিশ জানিয়েছে, একটি ওড়না দিয়ে হাত বাঁধা ছিল রাউত দম্পতির। পুলিশের মতে, নিজেদের চার তলা ফ্ল্যাটের ছাদ থেকেই ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন তাঁরা। লিখে গিয়েছেন একটি সুইসাইড নোটও। তাতে লেখা, ‘‘কারও কোনও দোষ নেই। এই সিদ্ধান্ত আমাদের।’’

Advertisement

সংবাদমাধ্যমে রাউত দম্পতির মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হওয়ার পরে নড়েচড়ে বসেছে খোদ কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে পি নড্ডা গোটা ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। যে হাসপাতালগুলি অবিনাশের চিকিৎসা না করে ফিরিয়ে দিয়েছিল, তাদের কাছে জবাবদিহি চেয়েছেন দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈনও। নড্ডা বলেছেন, ‘‘দোষী কাউকে ছেড়ে দেওয়া হবে না।’’ দিল্লি পুরসভা সূত্রে খবর, চলতি বছরে মোট ১২৫৯ জন দিল্লিবাসী ডেঙ্গির কবলে পড়েছেন। যার মধ্যে চলতি মাসেই ডেঙ্গির উপসর্গ ধরা পড়েছে ৪২৮ জনের দেহে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement