Manipur

মণিপুরে মোদীর বিরুদ্ধে স্লোগান, শনিবার সর্বদল

মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার জন্য বিরোধীরা বার বার দাবি জানিয়েছে। স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কুকি ও মেইতেই প্রধান এলাকা সফর করে কিছু পদক্ষেপ করার পরেও পরিস্থিতি বদলায়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০২৩ ০৭:৪৮
Share:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।

বিশ্ব যোগ দিবসে প্রধানমন্ত্রী যখন আমেরিকায় শান্তির বার্তা প্রচার করছেন, সেই সময়ে মণিপুরে তাঁর কুশপুতুল পোড়ানো হল। ‘মন কী বাত’ বয়কট করে মণিপুরবাসী যেমন আছড়ে রেডিয়ো ভেঙেছিলেন, এ দিনও তেমনই মোদী-বিরোধী স্লোগান ওঠে রাজ্যে। থৌবাল আপুন বা লুপ বিবৃতি দিয়ে প্রশ্ন তোলে, “মণিপুরে গত দেড় মাস আগুন জ্বলছে, শতাধিক প্রাণ গিয়েছে, অশান্তি চলছে। তা নিয়ে মুখ বুজে থাকা প্রধানমন্ত্রী কোন মুখে বিদেশে গিয়ে বিশ্বশান্তির বুলি আওড়াচ্ছেন?” তারা বলে, “আমাদের মঙ্গলয়েড দেখতে বলে কি আমরা ভারতীয় নই? না হলে কেন প্রধানমন্ত্রীর এমন অবহেলা। আর কত প্রাণ গেলে, আর কত বাড়ি পুড়লে তবে মণিপুর নিয়ে তাঁর ঘুম ভাঙবে? প্রধানমন্ত্রীর শুধু ভোটের সময় মণিপুরের কথা মনে পড়ে। তবে কি পরের ভোট পর্যন্ত আমরা এ ভাবেই একে অন্যকে মারতে থাকব?”

Advertisement

মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার জন্য বিরোধীরা বার বার দাবি জানিয়েছে। স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কুকি ও মেইতেই প্রধান এলাকা সফর করে কিছু পদক্ষেপ করার পরেও পরিস্থিতি বদলায়নি। চাপে পড়ে শনিবার বিকেল তিনটেয় সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছেন শাহ।

মণিপুর নিয়ে এ দিন মুখ খুললেন সনিয়া গান্ধীও। নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে সনিয়া বলেন, “এক জন মা হিসেবে স্বজন হারানোর বেদনা আমি বুঝতে পারছি। মণিপুরবাসী আজ তাঁদের ঘর, সর্বস্ব হারিয়ে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। একে অপরের সঙ্গে এত বছর ধরে মিলেমিশে থাকার পরে এখন একে অন্যের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছেন।” মণিপুরের মহিলা, বিশেষ করে মায়েদের কাছে শান্তি ফেরানোর ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানান সনিয়া।

Advertisement

মণিপুর নিয়ে নীরব থেকে আমেরিকায় গিয়ে শান্তির কথা বলায় মোদীর সমালোচনায় সরব হয়েছে তৃণমূলও। দলের টুইটে বলা হয়েছে— মণিপুর জ্বলছে, তিনি নীরব। সেখানে মানুষ বিপর্যস্ত, তিনি তাকিয়েও দেখেন না। এখন বিদেশে গিয়ে শান্তির কথা বলছেন প্রধানমন্ত্রী।

মণিপুরে গত রাতে দুই এলাকায় সংঘর্ষ ও গুলির লড়াই হলেও প্রাণহানির খবর নেই। রাজার আমলের টাট্টু বাহিনী এ দিন শান্তি ফেরানোর বার্তা নিয়ে রাস্তায় নামে। মণিপুর ঘোড়সওয়ারি ও পোলো সংগঠনের সদস্যরা ইম্ফলের রাস্তায় আজ মণিপুরি টাট্টুতে সওয়ার হয়ে শান্তি মিছিল বের করেন। হাতে ছিল শান্তি ফেরানো, অখণ্ডতা রক্ষা ও এনআরসি তৈরির দাবির প্ল্যাকার্ড।

জনজাতি ও পার্বত্য এলাকা উন্নয়ন দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী লেটপাও হাওকিপের নেতৃত্বে তৈরি মন্ত্রিসভার সাব-কমিটি সংঘর্ষ শুরুর আগে রিপোর্ট দিয়েছিল— টেংনৌপাল, চান্ডেল, চূড়াচাঁদপুর ও কামজং জেলার মিলিয়ে রাজ্যে মোট ২১৮৭ জন অবৈধ অনুপ্রবেশকারীকে চিহ্নিত করা হয়েছে। অনুপ্রবেশকারীদের শরণার্থী শিবিরে রাখার প্রস্তাব দেওয়া হলেও তারা রাজি হয়নি, বরং তারা কুকি এলাকায় নিজেদের মতো গ্রাম বানিয়ে নিয়েছে। রাজ্য সরকার দাবি করে, প্রথম পর্যায়েই এত অনুপ্রবেশকারী শনাক্ত হওয়া ও মাদকের বিরুদ্ধে চলা যুদ্ধের জন্যেই পাহাড় থেকে অশান্তি শুরু হয়েছে। এর পিছনে আছে মায়ানমার থেকে ঢোকা ও আফিম চাষে মদত দেওয়া মাদক চক্রের পাণ্ডারা।

সরকারের এই দাবি প্রসঙ্গে জনজাতি মঞ্চের মুখপাত্র গিনঝা ভুয়ালঝং বলেন, মায়ানমারের শরণার্থীরা প্রাণভয়ে পালিয়ে মণিপুরে আশ্রয় নিয়েছেন মাত্র। তাঁদের সংখ্যা কয়েকশো। সংঘর্ষের জন্য তাঁদের দায়ী করাটা অমানবিক। মায়ানমারের ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট বা এনইউজি অবশ্য দাবি করেছে, মণিপুরে কুকি-মেইতেইদের সংঘর্ষে তাদের নাগরিকদের কোনও ভূমিকা নেই। এনইউজি-র বক্তব্য, মায়ানমারের গ্রামবাসী ও নাগরিকেরা অনুপ্রবেশকারী নন, শরণার্থী। তাদের সকলের নাম নথিবদ্ধ করার জন্য এনইউজি দিল্লির সঙ্গে সহযোগিতা করছে।

মণিপুরের কুকি এলাকাগুলিতে সেনা সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য মণিপুর জনজাতি ফোরাম সুপ্রিম কোর্টে জরুরি শুনানির দাবি জানিয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট দাবি খারিজ করে জানায়, সেনা বা আধাসেনা মোতায়েন করা, সেনার সুরক্ষা নিশ্চিত করার মতো ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ জারির দরকার নেই। পরের শুনানি হবে ৩ জুলাই। মণিপুর থেকে মিজোরামে আশ্রয় নেওয়া ১১ হাজারের বেশি শরণার্থীর মধ্যে অনেক স্কুলপড়ুয়া রয়েছে। তাদের শিক্ষাবর্ষ যাতে নষ্ট না-হয়, তাই মিজোরাম সরকার এমন ১৫০০ ছাত্রছাত্রীকে তাদের বিভিন্ন স্কুলে নাম অন্তর্ভুক্ত করে পড়াশোনা চালানোর ব্যবস্থা করেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement