Congress

হরিয়ানায় হার! অন্য রাজ্যে বাকি শরিকদের সঙ্গে দূরত্ব, কংগ্রেসের প্রভাব কমায় খুশি ‘ইন্ডিয়া’ শরিকেরা

তৃণমূল শিবির মনে করছে, হরিয়ানায় কংগ্রেস বনাম বিজেপির মুখোমুখি লড়াইয়ে কংগ্রেস হেরে যাওয়ার পরে সমীকরণ বদলে গিয়েছে। এখন কংগ্রেসকে ফের অন্য বিরোধী দলগুলির কথা মতো চলতে হবে।

Advertisement

অগ্নি রায় ও প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:৫২
Share:

রাহুল গান্ধী। —ফাইল ছবি।

লোকসভা ভোটে কংগ্রেস ৯৯টি আসনে জেতার পরে সংসদের বাদল অধিবেশনে রাহুল গান্ধীই লোকসভার বিরোধী দলনেতা হিসেবে প্রচারের আলোয় ছিলেন। বিরোধী জোট ইন্ডিয়া-র বাকি দলগুলিকে রাহুল তথা কংগ্রেসের নেতৃত্বই মেনে নিতে হয়েছিল। কিন্তু হরিয়ানায় কংগ্রেসের হার, তার পরে মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচন ও উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গে উপনির্বাচন ঘিরে কংগ্রেসের সঙ্গে বাকি শরিকদের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। আসন্ন সংসদের শীতকালীন অধিবেশনেও তার প্রভাব পড়বে বলে ইন্ডিয়া-র শরিক দলগুলি মনে করছে।

Advertisement

ইন্ডিয়া মঞ্চের মধ্যে সমীকরণ এ ভাবে বদলে যাওয়ার ফলে তৃণমূল নেতৃত্ব যথেষ্ট খুশি। কারণ লোকসভায় তৃণমূল একা লড়ে ২৭টি আসনে জিতে এলেও লোকসভায় বিরোধী জোটে ছড়ি ঘোরাবে বলে যে আশা তারা করেছিল, তা সম্ভব হয়নি। কারণ ইন্ডিয়া মঞ্চের ভাল ফলের কৃতিত্ব পুরোটাই রাহুল গান্ধী তথা কংগ্রেসের ঝুলিতে চলে যায়। কিন্তু তৃণমূল শিবির মনে করছে, হরিয়ানায় কংগ্রেস বনাম বিজেপির মুখোমুখি লড়াইয়ে কংগ্রেস হেরে যাওয়ার পরে সমীকরণ বদলে গিয়েছে। এখন কংগ্রেসকে ফের অন্য বিরোধী দলগুলির কথা মতো চলতে হবে।

সমাজবাদী পার্টির এক নেতার মন্তব্য, ‘‘কংগ্রেস যে উত্তরপ্রদেশে বা তামিলনাড়ুতে ভাল ফল করেছে, তার অনেকটাই এসপি ও ডিএমকে-র মতো দলের বদান্যতায়। কংগ্রেস একা লড়ে যে বিশেষ কিছু করতে পারে না, তার প্রমাণ হরিয়ানায় হার। অথচ লোকসভা ভোটে কংগ্রেস ৯৯টি আসন জিতে যাওয়ার পরে কংগ্রেস এখন মহারাষ্ট্রে শরদ পওয়ারের এনসিপি, উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনার সঙ্গে আসন রফায় দর কষাকষি করছে। উত্তরপ্রদেশে উপনির্বাচনে ন’টি আসনের মধ্যে পাঁচটি আসন দাবি করছিল। অখিলেশ যাদব তাতে রাজি না হওয়ায় কংগ্রেস কোনও প্রার্থী না দিয়ে কার্যত হাত গুটিয়ে নিয়েছে। মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস এখন এসপি-কেও প্রতিশ্রুতি মতো আসন ছাড়তে চাইছে না।’’ কংগ্রেসের এই মনোভাব দেখে শরিকেরা নিজেদের মধ্যে সমন্বয় বাড়িয়েছে। শরদ পওয়ারের এনসিপি যেমন সমাজবাদী পার্টির নেতা, অভিনেত্রী স্বরা ভাস্করের স্বামী ফাওয়াদ আহমেদকে নিজের দল থেকে টিকিট দিয়েছেন।

Advertisement

শুক্রবার মহারাষ্ট্রের প্রার্থী তালিকা নিয়ে কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির বৈঠকে রাহুল গান্ধী মহারাষ্ট্রের নেতা বালাসাহেব থোরাটকে রীতিমতো তোপ দেগেছিলেন। প্রশ্ন করেছিলেন, কেন তিনি মুম্বই ও বিদর্ভের দলিত ও ওবিসি অধ্যুষিত আসনগুলি এনসিপি (শরদ পওয়ার), শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে)-র মতো শরিক দলকে ছেড়ে দিয়েছেন? শরিক দলের নেতাদের মতে, রাহুলের এই অবস্থান থেকে স্পষ্ট, কংগ্রেস শরিকদের বদান্যতায় নিজের শক্তি বৃদ্ধির পরে এখন শরিকদেরই জমি ছাড়তে চাইছে না। একই মনোভাব থেকে পশ্চিমবঙ্গের ছ’টি আসনের বিধানসভা উপনির্বাচনে বামেদের সঙ্গে আসন রফায় উৎসাহ দেখায়নি তারা।

এই অভিযোগের জবাবে কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির সদস্য টি এস সিংহদেওর দাবি, ‘‘রাহুল গান্ধী এমন কোনও কথাই শুক্রবারের বৈঠকে বলেননি। তিনি মূলত প্রার্থী তালিকায় সকলকে জায়গা দেওয়ার কথা বলেছিলেন। তফসিলি জাতি, জনজাতিদের জন্য সংরক্ষিত আসনেও কংগ্রেস সম্পন্ন বা প্রভাবশালী গোষ্ঠী থেকেই প্রার্থী করছে, না কি দলিত, আদিবাসীদের মধ্যেও যাঁরা একেবারে অনগ্রসর, তাঁদের তুলে আনতে পারছে, সে বিষয়ে নীতিগত প্রশ্ন তুলেছিলেন। সংবাদমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচার করা হচ্ছে।’’

শরিক দলের নেতারা মনে করছেন, রাহুল গান্ধী আসলে বুঝতে পারছেন, মহারাষ্ট্রের পরিস্থিতি এখন পুরোপুরি মহা বিকাশ আঘাড়ীর পক্ষে নয়। গত এক মাসে পরিস্থিতি অনেক পাল্টে গিয়েছে। বিজেপি, একনাথ শিন্দের শিবসেনা, অজিত পওয়ারের এনসিপি জোট সরকার ‘লড়কি বহিন যোজনা’-য় প্রায় আড়াই কোটি মহিলাকে মাসে দেড় হাজার টাকা করে দিতে শুরু করায় জনসমর্থন মিলছে। অজিত পওয়ার নিজের পালে হাওয়া টানছেন। সেই তুলনায় শরদ পওয়ার-সুপ্রিয়া সুলেকে দিল্লির নেতানেত্রী হিসেবে দেখছে মানুষ। তা বুঝে রাহুল গান্ধী আগে থেকেই আসন বণ্টন ও প্রার্থী তালিকা নিয়ে রাজ্যের নেতাদের ঘাড়ে দায় ঠলে দিতে চাইছেন বলেও শরিকদের ধারণা।

তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, যদি মহারাষ্ট্রেও এমভিএ জোট হারে, তা হলে সংসদে ইন্ডিয়া জোটের দাপট অনেকটাই কমে যাবে। বিরোধী জোটের মধ্যে কংগ্রেসের মনোবল ধাক্কা খাবে। সেই তুলনায় আর জি কর কাণ্ডের ধাক্কা সত্ত্বেও তৃণমূল রাজ্যের ছ’টি আসনের উপনির্বাচনে অন্তত পাঁচটি জিততে পারলেও ভাল অবস্থানে থাকবে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন শুধু বলছেন, ‘‘আমরাই ইন্ডিয়া জোটের একমাত্র শরিক, যারা লোকসভায় ৪২টি আসনে একা লড়েছি। বিধানসভায় ২৯৪টি আসনেও একাই লড়ব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement