শূন্যস্থান পূরণ করতে দ্বিতীয় শর্মিলা হতে চান রোবিতা

অনশন ভেঙে তীব্র প্রতিবাদের মুখে পড়েছেন ইরম শর্মিলা চানু। শর্মিলার সিদ্ধান্তে খানিকটা ছন্নছাড়া রাজ্যের আফস্পা বিরোধী আন্দোলনও। এই পরিস্থিতিতে শর্মিলার আশীর্বাদ নিয়েই তাঁর শূন্যস্থান পূরণ করতে আমরণ অনশনে বসার সিদ্ধান্ত নিলেন মণিপুরের মানবাধিকার নেত্রী রোবিতা লেইমা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৬ ০৩:২৫
Share:

রোবিতা লেইমা

অনশন ভেঙে তীব্র প্রতিবাদের মুখে পড়েছেন ইরম শর্মিলা চানু। শর্মিলার সিদ্ধান্তে খানিকটা ছন্নছাড়া রাজ্যের আফস্পা বিরোধী আন্দোলনও। এই পরিস্থিতিতে শর্মিলার আশীর্বাদ নিয়েই তাঁর শূন্যস্থান পূরণ করতে আমরণ অনশনে বসার সিদ্ধান্ত নিলেন মণিপুরের মানবাধিকার নেত্রী রোবিতা লেইমা। অবশ্য দুই সন্তানের জননী রোবিতার পরিবার এবং মহিলা সংগঠনগুলো তাঁর সিদ্ধান্ত সমর্থন করেনি।

Advertisement

৯ অগস্ট অনশন ভঙ্গ করেন শর্মিলা। জামিনও পান। তারপর থেকেই ক্ষুব্ধ সহযোদ্ধারা তাঁর সঙ্গ ছেড়েছেন। শর্মিলা কানবা লুপের নাম থেকে মুছে ফেলা হয়েছে তাঁর নামও। তবু সব প্রতিবাদ, বিক্ষোভের জবাবে শর্মিলার সমর্থকরা একটাই কথা বলে এসেছেন— যদি শর্মিলা অনশন ভেঙে অন্যায় করে থাকেন, তবে অন্য কেউ তাঁর স্থানে অনশন আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন না কেন?

সেই কথাই উদ্বুদ্ধ করে আরাম্বাম ওংবি কোনথৌজাম রোবিতা লেইমাকে। পূর্ব ইম্ফলের কোংবার বাসিন্দা রোবিতা ‘ইন্ডিয়ান উইমেন এগেনস্ট ক্রাইম’ নামে একটি সংগঠন চালান। প্রকাশ করেন ‘উইমেন অ্যান্ড ক্রাইমস’ নামে একটি মাসিক পত্রিকাও। মানবাধিকার কর্মী রোবিতা অনেক দিন ধরে নারীদের বিরুদ্ধে হওয়া অপরাধ নিয়ে লড়ছেন। দুঃস্থ মেয়েদের জন্য একটি আবাসও বানিয়েছেন তিনি।

Advertisement

রোবিতা এ দিন ইম্ফলে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে ঘোষণা করেন, কাল রাজ্যের ‘দেশপ্রেমিক দিবস’-এর দিন সকাল ১০টা থেকে কেইশমপাত এলাকায় তিনি আমরণ অনশন শুরু করতে চলেছেন। শর্মিলার দাবি ছিল আফস্পা প্রত্যাহার। রোবিতার দাবিতে আফস্পা প্রত্যাহারের পাশাপাশি থাকছে ইনারলাইন পারমিট চালু করার দাবিও।

১৮৯১ সালে ১৩ অগস্ট ইংল্যান্ডের রানির বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামায় মণিপুরের যুবরাজ টিকেন্দ্রজিৎ ও থঙ্গল সেনাপতিকে ফাঁসিতে ঝোলায় ইংরেজরা। সেই দিনটিকে স্মরণ করেই দেশপ্রেমিক দিবস পালন করে মণিপুর সরকার। এ বারের দেশপ্রেমিক দিবসেও বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। কিন্তু শর্মিলার অনশন আন্দোলন থেকে ‘মুক্তি’ পাওয়ার চার দিনের মধ্যেই ফের শর্মিলার বিকল্প এসে যাওয়ায় বিড়ম্বনায় পড়েছে পুলিশ-প্রশাসনও।

রোবিতা এ দিন বলেন, “আমি দিদি (শর্মিলা)-র রাস্তা অনুসরণ করেই অনশনের পথে নামছি। দিদির এত দিনের আন্দোলন বিফল হতে দেওয়া যায় না। কাল সকালে হাসপাতালে গিয়ে দিদির
আশীর্বাদ নিয়ে অনশন শুরু করব আমি।” অবশ্য, শর্মিলার জুতোয় পা গলাতে তিনি তৈরি থাকলেও মণিপুরের মানবাধিকার সংগঠনগুলো কেউই তাঁকে সমর্থন করছে না। আপুনবা লুপ, মেইরা পইবি, আপুনবা নুপি লুপের নেত্রীরা জানিয়ে দিয়েছেন, স্বামী ও সন্তান থাকা রোবিতাকে এই ধরনের আন্দোলনে বসার অনুমতি তাঁরা দেবেন না। ‘আপুনবা মণিপুর কানবা ইমা লুপ’-এর নেত্রী ইমা নাংবি জানান, রোবিতা আন্দোলনে বসলে তাঁরা তাঁকে উঠিয়ে দিতে যাবেন। রোবিতার সংগঠনের উপদেষ্টা এ সবিতারও জানিয়েছেন, এই সিদ্ধান্তে তাঁদের কারও সমর্থন নেই। নেহাতই ঝোঁকের মাথায় এমন কাজ
করছেন রোবিতা।

শর্মিলা এ নিয়ে মুখ খোলেননি। তাঁর সহযোদ্ধা বাবলু লোইতংবামও বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। মণিপুরের নাগরিক সংগঠন ও ছাত্র সংগঠনগুলোর সিংহভাগই মনে করছে, শর্মিলার অনশনভঙ্গের পরে যে অশান্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তা পুরোপুরি থিতিয়ে যাওয়ার পরে ভেবেচিন্তে রোবিতার সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল।

কিন্তু পরিবার, সহকর্মী, সংগঠনের আপত্তিতেও দমছেন না রোবিতা দেবী। তিনি স্পষ্ট বলেন, ‘‘যে যাই বলুক, আমি একলা চলতে তৈরি।’’ এমনকী, তার জন্য তিনি পরিবার ছেড়ে দিতেও প্রস্তুত। ৩২ বছরের রোবিতার ১০ বছরের ছেলে আর চার বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। স্বামী আরাম্বাম হীরা এই সিদ্ধান্ত মেনে নেননি। জানিয়েছেন, ঘর ছেড়ে এমন আন্দোলন করা চলবে না। রোবিতা দেবীর জবাব, “আমিও পাল্টা বলেছি, দরকার হলে দ্বিতীয় বিয়ে করে, নতুন বউ, ছেলে-মেয়ে নিয়ে সুখে সংসার করো। কারণ, আমার সংগ্রাম অনির্দিষ্ট কাল
ধরে চলবে!”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement