ব্যথিত বন্ধু চার্লস

বিকল্প পথে ভিসার ভাবনা আমজাদ আলি খানকে

দু’জনের সখ্য আজকের নয়। যুবরাজ চার্লস এবং উস্তাদ আমজাদ আলি খান।চব্বিশ বছর আগে চার্লস এবং ডায়ানার ভারত সফরের সময়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পি ভি নরসিংহ রাও তাঁদের সম্মানে নৈশভোজের আয়োজন করেছিলেন নিজের বাড়ির লনে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে একই টেবিলে বসিয়েছিলেন সরোদ সম্রাটকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৬ ০২:৪১
Share:

আমজাদ আলি খান

দু’জনের সখ্য আজকের নয়। যুবরাজ চার্লস এবং উস্তাদ আমজাদ আলি খান।

Advertisement

চব্বিশ বছর আগে চার্লস এবং ডায়ানার ভারত সফরের সময়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পি ভি নরসিংহ রাও তাঁদের সম্মানে নৈশভোজের আয়োজন করেছিলেন নিজের বাড়ির লনে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে একই টেবিলে বসিয়েছিলেন সরোদ সম্রাটকে। আমজাদের পরনের শালটির সে দিন এতই উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছিলেন ডায়ানা, যে সরোদিয়া তৎক্ষণাৎ তা উপহার দিতে চেয়েছিলেন তাঁকে।

সম্পর্ক যেখানে এই তারে বাঁধা, সেখানে গত কাল আমজাদের ওয়ার্ক ভিসার আবেদন নাকচের বিষয়টি স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষুব্ধ করেছে যুবরাজকে। লন্ডনের সরকারি সিদ্ধান্তে রাজপ্রাসাদ নাক গলাতে পারে না। চার্লস সেটা করছেনও না। কিন্তু ব্যক্তিগত স্তরে বন্ধুর এই হেনস্থায় তিনি গভীর দুঃখিত বলেই জানা গিয়েছে। সেন্ট জেমস প্যালেস এবং হাইগ্রোভ হাউস— লন্ডন এবং গ্লস্টারশায়ারে যুবরাজের দু’টি বাসস্থানেই বাজিয়ে এসেছেন উস্তাদ। চার্লস পাঁচ বার ভারত সফর করেছেন, প্রায় প্রত্যেক বারই তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে আমজাদের।

Advertisement

শুধু রাজপরিবার নয়, ব্রিটেনের সাধারণ মানুষের মধ্যেও আমজাদ-অনুরাগী অসংখ্য। সরোদিয়া নিজেই টুইট করে জানিয়েছেন, সত্তরের দশক থেকে প্রতি বছরই তিনি ব্রিটেনে অনুষ্ঠান করে আসছেন। পেয়েছেন একাধিক ব্রিটিশ সম্মান। সরকারি সূত্রের খবর, বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে চেষ্টা চলছে এমন কোনও ব্যবস্থা করার, যাতে লন্ডনে আমজাদের নির্ধারিত অনুষ্ঠান বাতিল না হয়। সাউথ ব্যাঙ্ক সেন্টারের কেন্দ্রবিন্দু রয়্যাল ফেস্টিভ্যাল হল-এ আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর বাজানোর কথা তাঁর। ফলে এখনও যথেষ্ট সময় রয়েছে। সাউথ ব্যাঙ্ক সেন্টারেরই এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘‘এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে, উস্তাদ আমজাদ আলি খানের ভিসার আবেদন বাতিল হয়েছে। সম্প্রতি ভিসা সংক্রান্ত নিয়মের কিছু পরিবর্তনের কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে বলে আমাদের কাছে খবর। ভারতীয় হাইকমিশনের সঙ্গে একযোগে কাজ করছি আমরা। আশা করছি, পরিকল্পনা মাফিক তিনি ১৭ সেপ্টেম্বর উপস্থিত থাকতে পারবেন।’’

ব্রিটেনের স্বল্পমেয়াদি ওয়ার্ক ভিসা বা ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করেছিলেন আমজাদ। ব্রিটিশ হাইকমিশন সূত্রের খবর, ব্রেক্সিট-এর পর বিদেশি নাগরিকদের ওয়ার্ক পারমিট দেওয়ার প্রশ্নে এখন কিছুটা কড়া নীতি নিয়ে চলছে ব্রিটেন। অথচ ওয়ার্ক পারমিট না চেয়ে শুধুমাত্র পর্যটকের ভিসা নিয়ে (উস্তাদজির সঙ্গেই আবেদন করে যা পেয়ে গিয়েছেন তাঁর স্ত্রী শুভলক্ষ্মী) সে দেশে গিয়ে অনুষ্ঠান করা সম্ভব নয়। ব্রিটেন, আমেরিকার মত দেশগুলিতে অনুষ্ঠান করতে গেলে ওয়ার্ক পারমিট একান্ত জরুরি।

সূত্রের বক্তব্য, ব্রিটেনে তাঁর ভাবমূর্তি এতটাই উজ্জ্বল যে, ওয়ার্ক পারমিট পাওয়া নিয়ে কোনও সমস্যা হবে বলে ভাবেননি আমজাদ। অতীতে কখনও তা হয়ওনি। তবে এটা ঠিক যে, পাকিস্তান-সহ বেশ কিছু দেশের শিল্পীরা এর আগে ব্রিটেনের ওয়ার্ক ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়েছেন। সে দেশের অভিবাসন দফতরের অফিসারদের অভিযোগ, অনেক সময় ব্রিটেনে অনুষ্ঠান করতে এসে সেখানেই থেকে যাওয়ার প্রবণতা দেখা গিয়েছে বেশ কিছু শিল্পীর। তবে নয়াদিল্লির ব্রিটিশ হাইকমিশনের এক কর্তা জানান, ব্রিটিশ সরকার ‘নিজস্ব ক্ষেত্রে খ্যাতিমান’ ব্যক্তিদের একটি বিশেষ ধরনের এবং নির্দিষ্ট সময়ভিত্তিক ওয়ার্ক ভিসা দিয়ে থাকে, যার নাম ‘পারমিটেড পেড এনগেজমেন্ট’ ভিসা। এর জন্য সংশ্লিষ্ট অনুষ্ঠানের আয়োজক সংস্থার আমন্ত্রণপত্রটি প্রয়োজন হয়। সূত্রের খবর, এই প্রক্রিয়াতেই আমজাদকে ওয়ার্ক পারমিট দেওয়ার কথা পুনর্বিবেচনা করছে ব্রিটেন। ওই বিশেষ ভিসার জন্য ফের আবেদন করলে তিনি লন্ডনে গিয়ে বাজাতে পারবেন, অর্থোপার্জনও করতে পারবেন। কিন্তু সেই ভিসায় নির্দিষ্ট করে বলা থাকবে যে, তিনি এক মাসের বেশি ব্রিটেনে থাকতে পারবেন না। ঘটনাচক্রে, ব্রিটিশ হাইকমিশনের এক মুখপাত্র আজ সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন, ‘‘কোন ক্ষেত্রে কী ভাবে ভিসার আবেদন করলে আর কোনও সমস্যা হবে না, সে বিষয়ে ওঁর সঙ্গে আমরা কথা বলতে চাইব।’’

আমজাদ নিজে গোটা বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাইছেন না। শুভলক্ষ্মীও বলেছেন, ‘‘আমরা এই নিয়ে আর কিছু বলতে চাই না। যা ঘটেছে সবাই জানেন। তাঁরাই বিচার করবেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement