অমিত শাহ। ফাইল চিত্র।
৫৭ বছর পূর্ণ করার পরের দিনেই উপদ্রুত কাশ্মীরে উড়ে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ২০১৯ সালে বিজেপি কেন্দ্রে দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসেই জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। একই সঙ্গে রাজ্যের মর্যাদা হারিয়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত হয় জম্মু-কাশ্মীর। সেই বিতর্কিত সিদ্ধান্তের প্রায় দু’বছর কেটে যাওয়ার পরে এই প্রথম উপত্যকায় পা রাখতে চলেছেন অমিত। সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জম্মু-কাশ্মীরের উন্নয়ন প্যাকেজে যে সমস্ত পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছিলেন, সেগুলির অগ্রগতি খতিয়ে দেখতেই কাশ্মীর যাত্রা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর।
নিজের জন্মদিনটা আজ বাড়িতেই কাটান অমিত। সকালে একশো কোটি টিকাকরণের সাফল্য নিয়ে বক্তৃতা শেষ করেই অমিতকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান নরেন্দ্র মোদী। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক জীবনে তাঁর দীর্ঘদিনের সঙ্গী সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি অমিতভাইয়ের সঙ্গে কাজ করার সুবাদে দেখেছি, কী ভাবে তিনি দল ও সরকারকে মজবুত করার জন্য অসামান্য অবদান রেখেছেন। আমি আশা করব উনি আগামী দিনেও একই উৎসাহের সঙ্গে দেশের সেবা করে যাবেন। তাঁর দীর্ঘ জীবন ও সুস্বাস্থ্য কামনা করি।’’ প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও বিজেপির রাজনাথ সিংহ, জে পি নড্ডা, দেবেন্দ্র ফডণবীশ, সর্বানন্দ সোনোয়াল জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান অমিতকে। বিরোধী নেতাদের মধ্যে শিবসেনার প্রিয়ঙ্কা চর্তুবেদী, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আপ নেতা অরবিন্দ কেজরীবালও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে টুইট করে শুভেচ্ছা জানান। পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল নেতা-নেত্রীরা কেউ টুইটারে অভিনন্দন না জানালেও, মমতা
বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষ থেকে ফুল, মিষ্টি ও শুভেচ্ছা-কার্ড পাঠানো হয় অমিতকে। প্রধানমন্ত্রীকেও ফি-বছর ফুল ও মিষ্টি পাঠিয়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে থাকেন মমতা। ৫৭ বছরের জন্মদিন উপলক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ৫৭টি লাল গোলাপ পাঠিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার মুহাম্মদ ইমরান।
অমিত শাহ এমন একটি সময়ে জম্মু-কাশ্মীরে যাচ্ছেন, যখন নতুন করে জঙ্গি হামলার ঘটনায় সন্ত্রস্ত হয়ে রয়েছে গোটা উপত্যকা। প্রায় রোজই জঙ্গিদের সঙ্গে সংঘর্ষ হচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনীর। জঙ্গিরা যে ভাবে কৌশল বদলে উপত্যকার শিখ ও হিন্দু সংখ্যালঘুদের নিশানা করা শুরু করেছে, তাতে রীতিমতো অস্বস্তিতে কেন্দ্র। গত দু’সপ্তাহে জঙ্গি হামলায় ১১ জন সাধারণ নাগরিকের হত্যার জেরে ইতিমধ্যেই কাশ্মীর ছেড়ে চলে আসার ঢল নেমেছে পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে। সারা বছরে উপত্যকায় খুন হয়েছেন ৩২ জন নিরীহ মানুষ। সন্ত্রাসের এই আবহেই ২৩ থেকে ২৫ অক্টোবর, তিন দিনের সফরে জম্মু-কাশ্মীর যাচ্ছেন অমিত।
জঙ্গিদের অতিসক্রিয়তা ও শ্রীনগরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর রাত্রিবাসের কথা মাথায় রেখে ইতিমধ্যেই গোটা এলাকা মুড়ে দেওয়া হয়েছে নিরাপত্তার চাদরে। সূত্রের মতে, অমিতের সফরে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা থাকায় শ্রীনগর জুড়ে বাড়ানো হয়েছে আধাসেনার সংখ্যা। সূত্রের খবর, আগামিকাল থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত বুলেভার্ড রোডে সমস্ত রকম যান চলাচলে
নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বন্ধ থাকছে সংলগ্ন নিশাত বাগ এবং গুপকর রোড। উপত্যকার স্পর্শকাতর এলাকাগুলিতে বন্ধ রাখা হয়েছে ইন্টারনেট। সূত্রের মতে, একাধিক সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন অমিত। এ ছাড়া জঙ্গি সমস্যা রুখতে কাশ্মীরে সক্রিয় সব ক’টি গোয়েন্দা বাহিনীর শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করার কথা রয়েছে তাঁর। সম্প্রতি জঙ্গিরা নিরীহ মানুষকে হত্যা করে উপত্যকায় অস্থিরতা তৈরির যে কৌশল নিয়েছে, তা কী ভাবে রোখা যায়, সেই বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।