ফিকির বার্ষিক অনুষ্ঠানে অমিত শাহ। ছবি: পিটিআই
বৃদ্ধির হার নামতে নামতে তলানিতে এসে ঠেকেছে। এপ্রিল থেকে জুনের ফল আসার পরে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে, সরকারের নোট বাতিল-জিএসটি চালু করার মতো নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েও। এই পরিস্থিতিতে আজ ফিকির বার্ষিক অনুষ্ঠানে বণিক সভাকে আশ্বস্ত করতে নোট বাতিলের পক্ষে মুখ খুললেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। দাবি করলেন, গত এপ্রিল থেকে জুন মাসের রিপোর্টটি ‘টেকনিক্যাল’ কারণে ছেড়ে দিলে তাদের সরকারের আমলে জাতীয় গড় বৃদ্ধি হয়েছে ৭ শতাংশ হারে। তাঁর মতে, নোট বাতিলের মতো সিদ্ধান্তে লাভ হবে দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে।
আরও পড়ুন: কাশ্মীরে রাজনাথ ও মনমোহন, জারি জঙ্গি হামলাও
কী সেই ‘টেকনিক্যাল’ কারণ সেই ব্যাখ্যা অবশ্য অমিত শাহ দেননি। তবে সরকারের যুক্তি, যেহেতু জিএসটি জুলাই থেকে চালু হয়েছে তাই তার আগে সংস্থাগুলি নতুন পণ্য উৎপাদন বন্ধ রেখে পুরনো পণ্য বিক্রি করছিল। মজুত পণ্য বিক্রি করতে দেওয়া হয় বিপুল ছাড়। তাই জুলাই থেকে জিএসটি চালুর আগের মাসগুলিতে উৎপাদন প্রায় বন্ধ রাখা হয়েছিল। ফলে উৎপাদন কমেছে। বিজেপির যুক্তি, অমিত শাহ সেই কারণেই এই সময়ের রিপোর্টটিকে বাদ দিতে চেয়েছেন। সরকারের প্রাক্তন চিফ স্ট্যাটিস্টিশিয়ান প্রণব সেনের বক্তব্য, ‘‘এটা জিএসটি চালুর আগের প্রভাব বলে সরকার যুক্তি দিচ্ছে। এ বার জিএসটি চালুর পরে নয়া করব্যবস্থা, কাঁচামালের আগেই মেটানো কর ছাড় পাওয়ার যে কী প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে তা কিন্তু আমরা জানি না। এই প্রক্রিয়াটি যতদিন না মসৃণ ভাবে কাজ করতে শুরু করবে ততদিন উৎপাদনে ধাক্কা লাগবে।’’ প্রণববাবুর মতে, ‘‘অন্য একটি সমস্যাও আছে। সেটা হলো টাকা ও ডলারের বিনিময় মূল্য। যার জেরে বাণিজ্য ঘাটতি তিনগুণ বেড়ে গিয়েছে।’’ আর নোট বাতিল? প্রণববাবুর জবাব, ‘‘এর ধাক্কা কাটতে দেড় থেকে দু’বছর লাগবে।’’
প্রণববাবুর মতোই অর্থনীতিবিদদের একটি বড় অংশের মতে, ভারতের জাতীয় বৃদ্ধি সূচকের এই নিম্নমুখী যাত্রার জন্য দায়ী নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত। সেই প্রভাব যে কতটা সুদূরপ্রসারী তা প্রমাণিত হয়েছে এপ্রিল থেকে জুনের ফল আসার পরে। স্বভাবতই আজ তাই নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত কতটা ঠিক ছিল সেই যুক্তি তুলে ধরতে কসুর করেননি অমিত শাহ। তাঁর কথায়, ‘‘এই সিদ্ধান্তের সুফল আগামী ত্রিশ বছর ধরে পাওয়া যাবে। নোট বাতিলের ফলে করদাতার সংখ্যা বেড়েছে। অর্থনীতির সংগঠিত ক্ষেত্রের প্রসার হয়েছে। উদ্ধার হওয়া কালো টাকা মানুষের কল্যাণে ব্যবহার হচ্ছে।’’ শাহের দাবি, ভারতীয় অর্থনীতি সম্পর্কে নিরাশাজনক ছবি তুলে ধরার চেষ্টা করা হলেও আসলে অর্থনীতি ইতিবাচক দিকেই এগোচ্ছে।