সংবিধানের সীমার মধ্যে অযোধ্যায় রাম মন্দির হবেই: অমিত শাহ

ভোটমুখী উত্তরপ্রদেশে আগামিকাল এক সঙ্গে মাঠে নামছেন রাহুল গাঁধী-অখিলেশ যাদব জুটি। সপা-কংগ্রেসের যুব নেতৃত্বের এই জোট নিয়ে রীতিমতো উদ্বিগ্ন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:০৩
Share:

নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশে অমিত শাহ। ছবি: পিটিআই।

ভোটমুখী উত্তরপ্রদেশে আগামিকাল এক সঙ্গে মাঠে নামছেন রাহুল গাঁধী-অখিলেশ যাদব জুটি। সপা-কংগ্রেসের যুব নেতৃত্বের এই জোট নিয়ে রীতিমতো উদ্বিগ্ন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই কাল রাহুল-অখিলেশের প্রচার শুরুর আগে আজ দলীয় ইস্তাহার প্রকাশ করতে গিয়ে ঝুলি থেকে সব তাসই টেনে বের করে ফেললেন নরেন্দ্র মোদীর প্রধান সেনাপতি তথা বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ।

Advertisement

বিজেপির ইস্তাহার ‘সঙ্কল্প পত্র’-য় কী নেই! এক দিকে ঋণ মকুবের আশ্বাস, বিনা সুদে ঋণ, আখ চাষিদের বকেয়া মেটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে কৃষকদের কাছে টানার চেষ্টা করা হয়েছে। আবার অখিলেশের কায়দাতেই পড়ুয়াদের জন্য বিনামূল্যে ল্যাপটপ-ইন্টারনেট, কলেজ চত্বরে ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবস্থার কথা বলে যুব সম্প্রদায়ের মন জিততে চেয়েছে দল। মহিলাদের মন পেতে রয়েছে রোমিও দমন বাহিনী, মহিলা থানার সংখ্যা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি। গরিবদের জন্য জীবনবিমা, বিধবাদের জন্য ভাতা, বুন্দেলখণ্ড ও পূর্বাচল উন্নয়ন পর্ষদ— আরও কত। কিন্তু এত কিছু করেও পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাই উত্তরপ্রদেশের হিন্দু ভোট টানতে ঝুলি হাতড়ে রাম মন্দিরও ফিরিয়ে আনলেন অমিত শাহ। তাঁর কথায়, ‘‘সংবিধানের সীমার মধ্যে অযোধ্যায় রাম মন্দির হবেই।’’ সেই সঙ্গেই বলে দিলেন, উন্নয়নের সঙ্গে রাম মন্দিরের কোনও বিরোধ নেই।

স্বাভাবিক ভাবেই রাম মন্দির ঘোষণা ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিরোধীরা বলছেন, উত্তরপ্রদেশে গত লোকসভা ভোটে ঝড় তুললেও এ বারে বিজেপি বুঝতে পারছে, সামান্য হাওয়াও তাদের পক্ষে নেই। সে কারণেই রাম মন্দিরের জিগির তুলেছে পদ্ম-শিবির। কিন্তু তাতেও বিশেষ লাভ হবে না।

Advertisement

এরই মধ্যে আগামিকাল প্রথম বার যৌথ ভাবে পথে নামছেন রাহুল-অখিলেশ। কাল দুপুর একটা নাগাদ লখনউয়ে সাংবাদিক বৈঠক করবেন দুই নেতা। তার পর শুরু হবে যৌথ প্রচারাভিযান। মুসলিম ভোটকে একত্রিত করতে প্রথম রোড-শো’র জন্য বাছা হয়েছে লখনউয়ের হজরতগঞ্জের মতো সংখ্যালঘু এলাকা। কংগ্রেস জানিয়েছে, এই ধরনের প্রায় ডজনখানেক যৌথ সভা হবে।

পদ্ম-সঙ্কল্প

• বাবা অম্বেডকর তহবিলে ৫০০ কোটি

• সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনামূল্যে ওয়াইফাই

• পাকা বাড়ি ও শৌচাগার গড়তে ৬ লক্ষ

• দারিদ্র সীমার নীচে ২ লক্ষ টাকার জীবনবিমা

• সব বাড়িতে ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ

• বুন্দেলখণ্ড ও পূর্বাচল উন্নয়ন পর্ষদ

• গরিব ঘরে কন্যা সন্তান জন্মালে ৫ হাজার

• ১০০০ টাকার বিধবা ভাতা

• সমস্ত কৃষিঋণ মকুব। এর পর বিনা সুদে ঋণ

• সংবিধানের সীমার মধ্যে যত শীঘ্র সম্ভব রাম মন্দির

পারিবারিক কোন্দলে জয়ী অখিলেশের পক্ষে এখন যে সহানুভূতির হাওয়া, তা বিলক্ষণ টের পাচ্ছে বিজেপি। যে হাওয়া গত পাঁচ বছরে সপা সরকারের বিরুদ্ধে জমে থাকা প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার মেঘকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছে। ভোটের মুখে তাই অখিলেশের পালের হাওয়া কাড়তে মরিয়া বিজেপি এখন তুলে ধরতে চাইছে সপা সরকারের দুর্নীতি, অনুন্নয়ন-অপশাসনের মতো বিষয়গুলিকে। অমিত শাহের বক্তব্য, বিহার, মধ্যপ্রদেশ বা রাজস্থানের মতো পিছিয়ে পড়া রাজ্যগুলি উন্নতির পথে হাঁটা শুরু করলেও গত ১৫ বছরে উত্তরপ্রদেশের কোনও উন্নয়নই হয়নি। পাশাপাশি, দলীয় কর্মীদের মনোবল বাড়াতে কংগ্রেস-সপা জোট এবং রাহুলকে প্রকাশ্যে গুরুত্ব না দিয়ে অমিত বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের কোনও সংগঠনই নেই। তাই অখিলেশের সঙ্গে শূন্য যোগ হলে সপা’র কোনও লাভই হবে না।’’

মুখে এ কথা বললেও বিজেপির মূল সমস্যাই হল রাহুল ও অখিলেশ— এই নতুন প্রজন্মের একসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে মাঠে নামা। দলগত ভাবে কংগ্রেস বা ব্যক্তিগত স্তরে মুলায়ম-শিবপালের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও ব্যক্তিগত ভাবে রাহুল বা অখিলেশ দু’জনেই সৎ ভাবমূর্তির। পাশাপাশি অখিলেশের রয়েছে উন্নয়নমুখী ভাবমূর্তি। ফলে এ যাবৎ প্রতিপক্ষ শিবিরের প্রধানদের (মায়াবতী, মুলায়ম) বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ বনাম নিজের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি— এই তুলনা টেনে মোদীর যে প্রচার কৌশল, তা-ও এ বারে বিশেষ কাজে লাগছে না। উল্টে প্রধানমন্ত্রী কেন পঞ্জাবে প্রকাশ সিংহ বাদলের মতো দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের হয়ে প্রচারে নামছেন, তা নিয়ে রাহুলের কটাক্ষ শুনতে হচ্ছে তাঁকে। ফলে মোদী এখন অনেক বেশি রক্ষণাত্মক। বিজেপি নেতৃত্বও মেনে নিচ্ছেন, উত্তরপ্রদেশ নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন মোদী। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘না হলে কেন গত কাল পঞ্জাবের জনসভায় অখিলেশ সরকারের সমালোচনায় করবেন প্রধানমন্ত্রী!’’

জোট ঘোষণার পরে বিএসপি নেত্রী মায়াবতীর হতোদ্যম হয়ে পড়াটাও উদ্বেগ বাড়িয়েছে বিজেপির। মায়াবতী সক্রিয় হলে বিজেপির লাভ। তাই দল চাইছে, মায়াবতী আরও সুর চড়া করুন। দলের ব্যাখ্যা, সপা’র উপর ক্ষুব্ধ সংখ্যালঘু ভোট যাতে অন্তত কংগ্রেসের ঘরে যায়, সেই পরিকল্পনা নিয়েই মূলত জোট করেছেন অখিলেশ। সপা শিবিরের এই পরিকল্পনা খেটে গেলে লখনউ দখল কার্যত অসম্ভব বিজেপির পক্ষে। তাই বিজেপি চাইছে, রাহুল-অখিলেশের সংখ্যালঘু ভোটে ভাগ বসান মায়াবতী। সে ক্ষেত্রে মন্দিরের জিগির তুলে হিন্দু ভোটের মেরুকরণ হলে ফায়দা পাবে পদ্ম-বাহিনী। সে কারণে বিএসপি নেত্রীকে চাঙ্গা করতে কখনও ব্যক্তিগত স্তরে, আবার কখনও তাঁর ভাইয়ের বিরুদ্ধে আয়কর তদন্ত শুরু করে মায়াবতীকে তাতিয়ে দিতে চাইছে বিজেপি।

এত অস্বস্তির মধ্যে অমিত শাহদের কাছে বাড়তি সমস্যা হয়ে উঠেছেন গোরক্ষপুরের বিজেপি সাংসদ যোগী আদিত্যনাথ। আজ তাঁর হাতে গড়া সংগঠন ‘হিন্দু যুব বাহিনী’ গোরক্ষপুর এলাকায় ছ’টি আসনে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এ দিন ইস্তাহার প্রকাশ অনুষ্ঠানে অমিত শাহের পাশে বসে আদিত্যনাথ অবশ্য জানিয়েছেন, এই ঘটনায় তাঁর কোনও ভূমিকা নেই। তবে বিজেপি সূত্র বলছে, ওই রাজ্যের প্রার্থী বাছাই কমিটিতে স্থান না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়েই আদিত্যনাথ এ কাজ করেছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement