তেলে-দলে সর্বময় অমিত, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকই এখন নতুন ক্ষমতার কেন্দ্র

আজকের পরে সরকারি মহল মনে করছে, দু’টি বার্তা স্পষ্ট। অমিত শাহ শুধু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে একটি মন্ত্রকের দায়িত্বই সামলাবেন না। সরকারের যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ, ঝক্কি সামলানোর দায়িত্বও এখন থেকে তাঁর কাঁধেই থাকবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৯ ০৩:০০
Share:

অমিত শাহ। ফাইল চিত্র

রাজনাথ সিংহকে সরিয়ে অমিত শাহই নতুন মোদী সরকারের ‘নম্বর টু’ হয়ে উঠেছেন। এ বার অরুণ জেটলি গত পাঁচ বছরে সরকারের যে সব জটিল কাজ সামলাতেন, তার ভারও নরেন্দ্র মোদী নিজের সব থেকে আস্থাভাজন অমিত শাহের হাতেই তুলে দিলেন।

Advertisement

আজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে বসে অমিত শাহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সরকারি সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ভারত পেট্রোলিয়ামের মোজাম্বিকের একটি বিরাট গ্যাসের খনিতে ২৪০ কোটি ডলারের লগ্নি প্রস্তাব নিয়ে চুলচেরা বিচার হয়। বৈঠকে হাজির ছিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, তেলমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান, বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল, নীতি আয়োগের সিইও অমিতাভ কান্ত এবং পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের শীর্ষকর্তারা।

আজকের পরে সরকারি মহল মনে করছে, দু’টি বার্তা স্পষ্ট। অমিত শাহ শুধু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে একটি মন্ত্রকের দায়িত্বই সামলাবেন না। সরকারের যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ, ঝক্কি সামলানোর দায়িত্বও এখন থেকে তাঁর কাঁধেই থাকবে। যার অর্থ, প্রধানমন্ত্রীর দফতরের পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকই এখন নতুন ক্ষমতার কেন্দ্র। আর এর মধ্যে দিয়েই অমিত শাহকে ভবিষ্যতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ‘গ্রুম’ করা হবে। শুধু সরকারি কাজ নয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে বসেই তিনি যে দলীয় কাজেরও দেখভাল করবেন, তা বুঝিয়ে আজ নর্থ ব্লকে ভূপেন্দ্র যাদব, উমা ভারতীকেও ডেকে পাঠিয়েছিলেন শাহ।

Advertisement

গত পাঁচ বছরে সরকারি ক্ষেত্রে বিভিন্ন জটিল ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সব দিক খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দেওয়া হত অরুণ জেটলিকে। তিনিই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের নিয়ে আলোচনা করতেন। তার পরে বিষয়টি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য পাঠানো হত। মনমোহন সিংহের জমানায় আবার প্রণব মুখোপাধ্যায় এই কাজটি করতেন। তাঁর নেতৃত্বে অসংখ্য মন্ত্রিগোষ্ঠী ছিল। মোদী জমানায় খাতায়-কলমে মন্ত্রিগোষ্ঠী তৈরি না-হলেও ঘরোয়া ভাবে জেটলি সেই কাজটিই করতেন। শারীরিক অসুস্থতার জন্য জেটলি এ বার মন্ত্রিসভায় যোগ দেননি। তাঁর বদলে কে এই কাজ করবেন, তা নিয়ে গোড়া থেকেই জল্পনা ছিল। আজ অমিত শাহ নিজেই বুঝিয়ে দিলেন, মোদীর পরে তাঁর হাতেই থাকবে ক্ষমতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের রাশ।

অমিত শাহের নেতৃত্বে আজকের বৈঠকে কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হল?

তেল মন্ত্রক সূত্রের খবর, ইরানের থেকে তেল কিনলে মে মাস থেকেই নিষেধাজ্ঞার কোপে পড়তে হবে বলে আমেরিকা জানিয়ে দিয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি, আর কোনও ছাড় দেওয়া হবে না। ফলে ভারতকে এখন পশ্চিম এশিয়ার অন্যান্য দেশের থেকে তেল আমদানি করে ইরানের থেকে পাওয়া তেলের ঘাটতি মেটানোর কথা ভাবতে হচ্ছে। এই ধরনের সমস্যার পাকাপাকি সমাধানেই পরিকল্পনা হয়েছিল, রাষ্ট্রায়ত্ত তেল ও গ্যাস সংস্থাগুলি আফ্রিকার মতো দেশের খনিগুলিতে লগ্নি করবে। যাতে অন্য দেশের উপর নির্ভরতা কমে। এর আগে ইউপিএ সরকারের আমলেই রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলি মোজাম্বিকের একটি খনির ৩০ শতাংশ মালিকানা কিনতে ৬০০ কোটি ডলার লগ্নি করেছিল। কিন্তু তা নিয়ে বর্তমান তেলমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের আপত্তি ছিল। কারণ
ওই খনি থেকে তেল উৎপাদন শুরু হতে অনেক দেরি হয়েছে। এ বার তাই নতুন লগ্নির আগে সব দিক দেখেশুনে ভারত পেট্রোলিয়ামকে ছাড়পত্র দিতে চাইছে মোদী সরকার। ওই খনিতে ভারত পেট্রোলিয়ামের ১০ শতাংশ মালিকানা রয়েছে। আজকের বৈঠকে তাই সংস্থার সিএমডি ডি রাজকুমারকেও ডেকে পাঠানো হয়েছিল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement