কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। —ফাইল চিত্র।
প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে দেশের আর্থিক পরিকাঠামোর পাশাপাশি সামাজিক সম্প্রীতির আবহকেও নষ্ট করতে তৎপর রয়েছে বিদেশি শক্তি। কেবল ভারত নয়, এ ধরনের শক্তি সক্রিয় রয়েছে অন্য দেশেও। এই যুক্তিকে হতিয়ার করেই সাইবার অপরাধ রুখতে বিশ্বের সব দেশকে এক মঞ্চে নিয়ে আসার প্রশ্নে সওয়াল করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আজ জি২০ সম্মেলনের সাইবার ক্ষেত্রে অপরাধ ও সুরক্ষা সংক্রান্ত বৈঠকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ওই মন্তব্য করেন তিনি। বৈঠকে জি২০ গোষ্ঠীর দেশগুলি ছাড়াও ৯টি দেশের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
প্রাত্যহিক জীবনের সঙ্গে ইন্টারনেট যত জড়িয়ে পড়েছে, ততই বাড়ছে সাইবার অপরাধের সংখ্যা। ভারতে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির সংগঠন ‘ন্যাসকম’-এর সভানেত্রী দেবযানী ঘোষ আজ সম্মেলনে বলেন, ২০২৫ সালে সাইবার অপরাধের পরিমাণ ১০.৫ ট্রিলিয়ন ডলারে গিয়ে দাঁড়াবে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে কেবল আর্থিক অপরাধ নয়, জঙ্গিরা নিজেদের পরিচয় লুকিয়ে মৌলবাদেও ইন্ধন দিয়ে চলেছে। জঙ্গি দলে নিয়োগও চলছে এ ভাবে। এমনকি মেটাভার্সের প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে জঙ্গি প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। আগামী দিনে এ ধরনের সাইবারভিত্তিক অপরাধ কয়েক গুণ বাড়ার আশঙ্কা করছে নিরাপত্তা সংস্থাগুলি। অমিত শাহের কথায়, ‘‘আগে যা কল্পবিজ্ঞান ছিল, মেটাভার্সের কারণে আজ তা বাস্তব। জঙ্গি সংগঠনগুলিকে প্রচার চালানো, নতুন সদস্য নিয়োগ করা বা প্রশিক্ষণ দেওয়ার ক্ষেত্রে নতুন সুযোগ করে দিচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি। মেটাভার্সের মাধ্যমে কোনও ব্যক্তিকে হুবহু নকল করে তাঁর বিষয়ে যাবতীয় তথ্য হাতিয়ে নিতে পারবে অপরাধীরা।’’ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মতে, ভবিষ্যতের ডিজিটাল যুদ্ধ কোনও স্থাবর পরিকাঠামো ধ্বংসের জন্য হবে, এমন নয়। বরং কোনও অনলাইন নেটওয়ার্ক যদি ১০ মিনিটের জন্য থমকে দেওয়া যায়, তা হলে তার ফল অনেক বেশি মারাত্মক হতে পারে।
সাইবার অপরাধ গোটা বিশ্বের সমস্যা। তা রুখতে সব দেশে একই ধাঁচের আইন দরকার বলে বৈঠকে সওয়াল করে ভারত। শাহের মতে, সাইবার অপরাধের কোনও সীমান্ত নেই। তাই সব দেশ দায়বদ্ধ থাকে, এমন একটি আইন ব্যবস্থার উপরে জোর দিয়েছেন তিনি। বিভিন্ন দেশের শ্রেষ্ঠ আইনগুলিকে একত্রিত করে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে একটি মাপকাঠি তৈরি করার কথা বলেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মতে, সমমনস্ক দেশের সাইবার সংস্থাগুলির মধ্যে রিয়েল-টাইম সমন্বয় দরকার, যাতে আন্তর্জাতিক তদন্তের ক্ষেত্রে উভয় দেশ পরস্পরের সাহায্যে এগিয়ে আসে। আজকের দিনে সাইবার অপরাধের বড় অংশই আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত। তাই আর্থিক অপরাধ রোখা বা তদন্তের প্রশ্নে বিভিন্ন দেশের মধ্যে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি থাকার প্রয়োজন রয়েছে। শাহের কথায়, ‘‘একক ভাবে এ ধরনের অপরাধ রোখা কোনও দেশের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই সব দেশকে সংযুক্ত মঞ্চ গড়ে তুলতে হবে। তা সার্বিক ভাবে সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করবে সব দেশকেই।’’