গ্রাফিক: তিয়াসা দাস
অজিত পওয়ারকে ভাঙিয়ে রাতারাতি কার্যত সবার অলক্ষ্যে শপথগ্রহণ হয়েছিল মহারাষ্ট্রে। দেবেন্দ্র ফডণবীসকে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসিয়ে দিয়েছিলেন অমিত শাহ । এই বাজিমাতের পর অমিত হয়ে উঠেছিলেন চাণক্য। কিন্তু সেই সরকার তিন দিনের বেশি টেকেনি। সংখ্যা জোগাড় করতে না পেরে আস্থা ভোটের আগেই রণে ভঙ্গ দিতে হয়েছে বিজেপিকে। সরকার গড়ছে বিরোধী জোট। মহারাষ্ট্র নিয়ে বিজেপির প্রবল অস্বস্তির মধ্যেই দলের সভাপতি অমিত শাহ ফের সামনে নিয়ে এলেন এনআরসি ইস্যু। বুধবার ফের ঘোষণা করলেন, সারা দেশেই জাতীয় নাগরিকপঞ্জি হবে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এনআরসি-বিরোধিতা নিয়েও ফের প্রশ্ন তুললেন অমিত শাহ।
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, মহারাষ্ট্রের এই গরমাগরম রাজনৈতিক বাতাবরণের মধ্যে হঠাৎ এনআরসি ইস্যু কেন? রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন নিয়ে শুধু যে বিজেপির মুখ পুড়েছে তাই নয়, অমিত শাহের ‘চাণক্য’ তকমাও প্রশ্নের মুখে। গোয়া, মণিপুর, কর্ণাটক, হরিয়ানায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকা সত্ত্বেও অমিতের কৌশলে বিজেপি সরকার গড়েছে। কিন্তু সেই ‘অমিত বিক্রম’ মুখ থুবড়ে পড়েছে মহারাষ্ট্রে এসে। ফলে যে বিজেপি নেতৃত্ব অমিতকে ‘চাণক্য’ বলে জোরদার প্রচার চালিয়েছিলেন, তাঁরাই এখন ব্যাকফুটে। রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, সেই দিক থেকে দেশবাসীর নজর ঘুরিয়ে এনআরসির দিকে ঠেলে নিয়ে যাওয়াই কি অমিতের লক্ষ্য?
সংসদে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেছিলেন, সারা দেশেই এনআরসি হবে। অসমে ফের এনআরসি হবে। ৪০ হাজার কোটি টাকা খরচ করে যে এনআরসি হয়েছিল, তা কার্যত খারিজের ঘোষণা করেন অমিত। বুধবার ফের টুইটারে তাঁর ঘোষণা, ‘‘আমি স্পষ্ট করে দিতে চাই যে এনআরসি হবেই এবং সারা দেশেই হবে।’’
এনআরসি নিয়ে গোড়া থেকে সবচেয়ে বেশি সরব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নাগরিকপঞ্জির বিরুদ্ধে শুধু রাজনৈতিক বক্তব্য পেশ নয়, রীতিমতো কলকাতায় রাস্তায় নেমে মিছিল করেছেন মমতা নিজে। তা নিয়ে বিজেপিও মমতাকে তোপ দাগতে ছাড়েনি। যদিও অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই এনআরসির ঘোষণা করেছেন অমিত। বুধবার ফের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতার প্রসঙ্গ টেনে অমিত বলেন, ‘‘বাংলার নির্বাচন বা পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে এনআরসির কোনও সম্পর্ক নেই। যে সব দল এনআরসি বয়কট করছে, দেশের জনতার সামনে তাদের প্রশ্ন করতে চাই, একজন নাগরিকের নাম নথিবদ্ধ থাকা উচিত কি উচিত নয়।’’
আরও পড়ুন: শরদ-জয়ে ‘চাণক্য’ অমিতের দর্পচূর্ণ
আরও পড়ুন: কালও ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, আজ সাধারণ বিধায়ক হিসাবে শপথ ফডণবীসের
বিজেপির উগ্র হিন্দুত্ববাদের নীতি নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন ওঠে। রাজনৈতিক মহলের অনেকেই মনে করেন, একটি সম্প্রদায়ের কথা মাথায় রেখেই এনআরসি করা হচ্ছে। লোকসভায় ঘোষণার সময়ও এই প্রশ্ন উঠেছিল। সেখানেও তিনি বলেছিলেন, এনআরসির সঙ্গে হিন্দু-মুসলিমের কোনও সম্পর্ক নেই। বুধবার ফের বলেছেন, ‘‘এনআরসি-তে হিন্দু-মুসলিম বিভেদের কোনও প্রশ্ন নেই। আমরা নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আনছি। তাতে শুধু হিন্দু নয়, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, পাকিস্তানের মতো দেশ থেকে আসা হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পার্সি এবং খ্রিস্টান শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেব।’’ অর্থাৎ অমিতের কথাতেই স্পষ্ট, এই সব দেশ থেকে আসা মুসলিমরা নাগরিকত্ব পাবেন না।