প্রতিবাদে সামিল জেট এয়ারওয়েজের পাইলটরা।—ফাইল চিত্র।
বেতন মেলেনি দু’ মাস। লাভ হয়নি চিঠি লিখেও। প্রতিবাদে নামলেন জেট এয়ারওয়েজের পাইলটরা। তাতে বিপাকে পড়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বেসরকারি বিমান সংস্থাটি। এমনিতেই লোকসানে চলছে তারা। তার উপর উড়ানে পাইলটদের এমন অসহযোগিতা, বাধ্য হয়ে রবিবার ১৪টি বিমানের উড়ান বাতিল করে তারা। সংবাদমাধ্যম সূত্রে বিষয়টি সামনে আসার পর যদিও তা অস্বীকার করেছেন জেট কর্তৃপক্ষ। পাইলটদের শারীরিক অসুস্থতার জেরেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে দাবি করেছেন তাঁরা।
সোমবার বিমান সংস্থার মুখপাত্রের তরফে একটি বিবৃতি জারি করা হয়। তাতে বলা হয়, ‘‘অসহযোগিতার প্রশ্নই ওঠে না। পাইলট, ইঞ্জিনিয়ার সহ সমস্ত কর্মীই বিমান সংস্থার সঙ্গে সবরকম সহযোগিতা করে চলেছেন। ২ ডিসেম্বর একাধিক বিমানের উড়ান বাতিল করা হয়েছিল বটে। তবে তার পিছনে অন্য কারণ রয়েছে। বিমান পরিচালনার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছিল। যা আগে থেকে বোঝা যায়নি। তাই বিমানের উড়ান বাতিল করা হয়। সময় থাকতেই মেসেজ করে যাত্রীদের তা জানিয়ে দেওয়া হয়। নিয়ম মেনে অন্য বিমানে যাত্রার ব্যবস্থা এবং টাকাও ফিরিয়ে দেওয়া হয় তাঁদের।’’ বেতন সংক্রান্ত যে সব সমস্যা রয়েছে, তা মেটাতে কর্তৃপক্ষ এবং সংস্থার কর্মীদের মধ্যে আলাপ আলোচনা জারি রয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে বিবৃতিতে।
কিন্তু তাঁদের সাফাই যুক্তিসঙ্গত ঠেকেনি কারওরই। বরং প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, এক সঙ্গে এত জন পাইলট অসুস্থ হয়ে পড়লেন? তা কেমন করে সম্ভব? বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গিয়ে সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে অন্য তথ্য উঠে এসেছে। জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে লোকসানে চলছে জেট এয়ারওয়েজ। টান পড়েছে নগদের জোগানে। যে কারণে পাইলট, ইঞ্জিনিয়ার তো বটেই ম্যানেজমেন্টের লোকজনদের বেতন দিতেও সমস্যা হচ্ছে। অগস্ট মাস থেকে সমস্যা গুরুতর হয়েছে। সেপ্টেম্বরে আংশিক বেতন দেওয়া হয় সকলকে। কিন্তু অক্টোবর এবং নভেম্বরে কানাকড়িও দেওয়া হয়নি কাউকে। তাই নিয়ে ইতিমধ্যেই সংস্থার চেয়ারম্যান নরেশ গয়ালকে চিঠি দিয়েছেন জনা কয়েক পাইলট। এ ভাবে কাজ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত চিঠির জবাব আসেনি। তাই প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন তাঁরা। শুধুমাত্র বিমান সংস্থাই নয়, তাঁদের রাগ গিয়ে পড়েছে অন্তর্দেশীয় পাইলটদের সংগঠন ন্যাশনাল এভিয়েটর গিল্ডের উপরও (এনএজি)। সংগঠনের তরফে বিমান সংস্থা কর্তৃপক্ষকে চাপ দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ তাঁদের।
আরও পড়ুন: কেজি প্রতি দেড় টাকারও কম! ৭৫০ কেজি পেঁয়াজ বিক্রির ১০৬৪ টাকা মোদীকে পাঠিয়ে প্রতিবাদ চাষির
আরও পড়ুন: আদালতের ইংরেজি নির্দেশ বুঝতেই পারল না পুলিশ! ব্যবসায়ীকে পুরল জেলে
দেশের অন্যতম জনপ্রিয় সংস্থাটি যে ধুঁকছে, গত কয়েকমাসে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে। শুধুমাত্র সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকেই তাদের মোট ১২৬১ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। যে কারণে বেশ কিছু পদক্ষেপ করতে বাধ্য হয়েছে তারা। দোহা, মাসকট, আবু ধাবি এবং দুবাইয়ের মতো উপসাগরীয় দেশগুলির বিভিন্ন শহরে এতদিন সপ্তাহে ৩৯টি বিমান পরিষেবা দিত তারা। যার মধ্যে ৭টি রুটে চলতি মাস থেকে বিমান পরিষেবা দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। কোচি, কোঝিকোড় ও তিরুঅনন্তপুরম থেকে দোহা, লখনউ ও মেঙ্গালুরু থেকে আবু ধাবি এবং মেঙ্গালুরু থেকে দুবাই রুটে ৫ ডিসেম্বর থেকে জেট এয়ার ওয়েজ আর পরিষেবা দেবে না। ডিসেম্বর মাস থেকেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে দিল্লি-মাসকট রুটের বিমান চলাচলও।