ফাইল চিত্র।
ভোটের বছরে বাংলার মন পেতে রাজ্যের মেট্রো প্রকল্পের জন্য দরাজ-হস্ত হল নরেন্দ্র মোদীর সরকার। মেট্রো রেলের পিঙ্ক বুক অনুযায়ী, কলকাতা মেট্রোর জমে থাকা কাজে গতি আনতে গত বারের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ টাকা বরাদ্দ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত বার মেট্রোর বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য যেখানে ৬৪১ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল, এ বছর সেখানে ওই অঙ্ক বাড়িয়ে বরাদ্দ করা হয়েছে ১২২১ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে কলকাতার মেট্রোপলিটন ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্টে এ বছর ধার্য করা হয়েছে ১২২১.৩০ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৩০ লক্ষ টাকা ব্যবহার করা হবে চক্ররেলের আধুনিকীকরণ ও র্যাপিড ট্র্যানজ়িট সিস্টেমে।
রেলের ভাঁড়ার এমনিতেই খালি। করোনাকালে যাত্রী পরিবহণ বাবদ আয় কমেছে ৪৬ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। এই টানাটানির বাজারে কলকাতার মেট্রো রেলের জন্য দ্বিগুণ টাকা বরাদ্দ করেছে রেল। রেল সূত্রে র মতে, মূলত সরকারের শীর্ষ স্তরের নির্দেশেই ওই পদক্ষেপ করা হয়েছে।
ভোটের বছরে কলকাতা ও শহরতলিকে সংযুক্ত করছে, এমন মেট্রো প্রকল্পগুলির কাজ দ্রুত শেষ করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভোটের দিন ঘোষণার আগেই দক্ষিণেশ্বর-নোয়াপাড়া মেট্রো পরিষেবা চালু করে দিতে চাইছে কেন্দ্র। তাই সেখানে শুরু হয়ে গিয়েছে মেট্রোর পরীক্ষামূলক দৌড়ও। কাজ প্রায় শেষ হয়ে যাওয়ায় এক কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে ওই প্রকল্পে। ওই প্রকল্প ছাড়াও এ বছর মার্চের মধ্যে নোয়াপাড়া থেকে কলকাতা বিমানবন্দর পর্যন্ত মেট্রোর কাজ শেষ করার নির্দেশ ইতিমধ্যেই দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী চার বছরের মধ্যে নিউ ব্যারাকপুর পর্যন্ত মেট্রোর লাইনের কাজ সেরে ফেলারও পরিকল্পনা করা হয়েছে। সেই কারণে ওই প্রকল্পে গত বার যেখানে ২০৪ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল, এ বার সেই বরাদ্দ বেড়ে হয়েছে ৫২০ কোটি টাকা। ওই প্রকল্পে জমি-জট এড়াতে নিউ ব্যারাকপুর থেকে বারাসত পর্যন্ত মাটির নীচে সুড়ঙ্গ করে মেট্রো চালানো যায় কি না, সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখতে মেট্রো কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এক ধাক্কায় প্রায় ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ বেড়েছে জোকা-বি বা দী বাগ প্রকল্পে।
ইউপিএ সরকারের দ্বিতীয় পর্বে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন কলকাতার সঙ্গে উত্তর এবং দক্ষিণ শহরতলিকে জুড়তে চারটি মেট্রো প্রকল্পের
ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু জমি-জট ও কম অর্থ বরাদ্দের কারণে প্রায় এক দশক কেটে যাওয়া সত্ত্বেও ওই প্রকল্পগুলি শেষ করা সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নিজে ওই মেট্রো প্রকল্পগুলির কাজের অগ্রগতি খতিয়ে দেখেন। রেল সূত্রের খবর, তার পরেই আটকে থাকা কাজ দ্রুততার সঙ্গে শেষ করতে নির্দেশ দেন তিনি। প্রকল্পগুলির কাজে গতি আনতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করার জন্য রেলকে নির্দেশ দেওয়া হয়। যার ফলে আগামী আর্থিক বছরে প্রায় দ্বিগুণ অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে মেট্রো প্রকল্পের কাজে।
কলকাতা ও উত্তর শহরতলির মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রীর এই বাড়তি উদ্যোগের পিছনে অবশ্যই ভোটের গন্ধ পাচ্ছেন অনেকে। বিজেপি শিবিরের মতে, ওই লাইনগুলি চালু হয়ে গেলে লোকাল ট্রেনের উপরে চাপ কমে যাবে। শহরতলির মানুষ সুষ্ঠু ভাবে যাতায়াত করতে পারবেন। রাজ্যের সাধারণ মানুষের কথা প্রধানমন্ত্রী যে মাথায় রাখেন, তা তাঁর বিপুল অর্থ বরাদ্দ ও মেট্রোর কাজে গতি আনা থেকেই স্পষ্ট।
যদিও তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী পদে বসার ছ’বছর পরে বাংলার মেট্রো প্রকল্পের কথা মনে পড়েছে কেন্দ্রের। ভোটের দিকে চেয়ে যে ওই বরাদ্দ, তা সকলেই বুঝতে পারছেন।