প্রতীকী ছবি।
বাংলায় তৃণমূল এবং সিপিএমের সম্পর্ক অহি-নকুল। আবার কেরলে সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেসের রসায়ন আদায়-কাঁচকলায়। রাজনীতির সেই বিবাদ পাশে সরিয়ে অর্থনীতির ময়দানে তিন দলই এ বার একজোট!
দক্ষিণী রাজ্য কেরলে লটারি কেলেঙ্কারির কথা সুবিদিত। সে রাজ্যে ‘লটারি মাফিয়া’ বলে পরিচিত সান্তিয়াগো মার্টিন এখন আসরে নেমেছেন বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিকে ধরে লটারির উপরে জিএসটি-র হারে পরিবর্তন আনার জন্য। কেরলের অর্থমন্ত্রী এবং সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য টমাস আইজ্যাক পাল্টা নোট তৈরি করে সক্রিয় হয়েছেন সেই উদ্যোগ ঠেকাতে। জিএসটি কাউন্সিলে তিনি পাশে পেয়েছেন কংগ্রেস-শাসিত ৬ রাজ্য এবং তৃণমূল-শাসিত বাংলাকে। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য মন্ত্রিগোষ্ঠীর যে সাব-কমিটি তৈরি করা হয়েছে, তাতেও রয়েছেন আইজ্যাক, পঞ্জাব ও বাংলার দুই অর্থমন্ত্রী মনপ্রীত সিংহ বাদল এবং অমিত মিত্র। কেন্দ্রীয় সরকারকে তাঁরাও জানিয়ে দিয়েছেন, লটারির উপরে জিএসটি নিয়ে বিজেপির দাবি মানা যাবে না।
এখনকার চালু নিয়মে রাজ্যের নিজস্ব লটারি থাকলে তার উপরে জিএসটি দিতে হয় ১২% হারে। কিন্তু বেসরকারি এজেন্টকে দিয়ে কোনও রাজ্যে লটারি পরিচালনা করা হলে তাদের জিএসটি দিতে হয় ২৮%। মার্টিনদের দাবি, তাদের ২৮%জিএসটি কমিয়ে দিয়ে করের হারে সমতা আনতে হবে। অসম, মিজোরাম, অরুণাচল প্রদেশ, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যে মার্টিনদের এজেন্ট মারফত লটারি চলে। এই সবক’টি রাজ্যই বিজেপি-শাসিত এবং জিএসটি কাউন্সিলে তারাই কর-সমতার পক্ষে সওয়াল করেছে। জোট বেঁধে যা আপাতত রুখে দিতে পেরেছে কংগ্রেস, সিপিএম এবং তৃণমূল!
জিএসটি কাউন্সিলের গত সপ্তাহের বৈঠকে আইজ্যাক তথ্য দিয়ে দেখিয়েছেন, মার্টিনদের মতো এজেন্ট পরিচালিত লটারি কী ভাবে লটারি নিয়ন্ত্রণ আইনকে পদে পদে লঙ্ঘন করছে। লটারি বিক্রির টাকা থেকে রাজ্যের ‘কনসলিডেটেড ফান্ডে’ নির্দিষ্ট অংশ তারা দেয় না, সপ্তাহে এক বার ‘ড্র’ হওয়ার নিয়ম থাকলেও বিভিন্ন নামে প্রায় প্রতিদিন তারা লটারি ‘ড্র-এর ব্যবস্থা রেখে ক্রেতাদের প্রলুব্ধ করে, টিকিটে বারকোড এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় শর্ত মানা হয় না— এ রকম অভিযোগ আছে ভূরি ভূরি। কেরলের সমর্থনে দাঁড়িয়ে পঞ্জাবও জানায়, জিএসটি-র হারের ফারাকের সুবিধা নিয়ে ভিন্ রাজ্যের ‘অসাধু ব্যবসায়ী’দের মোকাবিলা করা গিয়েছে। দাবি, পাল্টা দাবির জেরে শেষ পর্যন্ত সাব-কমিটি গড়ে বিষয়টি আপাতত ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আইজ্যাকের বক্তব্য, ‘‘রাজ্যের নিজস্ব লটারির সঙ্গে বেসরকারি বা এজেন্টদের লটারি যে একই শর্তে চলতে পারে না, তার পক্ষে কেরল ও কলকাতা হাইকোর্টের রায় আছে। তার পরেও বিজেপি-শাসিত বেশ কিছু রাজ্য জিএসটি-তে সমতা আনার দাবি তুলছে। আমরা এই দাবি মেনে নেব না কিছুতেই।’’ অতীতে লটারি কেলেঙ্কারির উদাহরণ দিয়ে কেরলের অর্থমন্ত্রী আইজ্যাক সে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা রমেশ চেন্নিথালার সহযোগিতা চেয়েছিলেন। চেন্নিথালা এআইসিসি-কে বিষয়টি জানানোর পরে কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় দুই নেতা কে সি বেণুগোপাল ও অহমেদ পটেল তাঁদের হাতে-থাকা রাজ্যগুলিকে সতর্ক করে দিয়েছেন। যে কারণে কংগ্রেসের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন আইজ্যাকেরা।
বাংলার অর্থমন্ত্রী অমিতবাবু অবশ্য প্রকাশ্যে মন্তব্য করেননি। তবে তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ‘‘জিএসটি বাবদ আয় থেকে লাভ হবে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের। অথচ কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর স্বার্থে বিজেপি-শাসিত রাজ্যের সরকার জিএসটি কমাতে বলছে। লোকসভা ভোটের আগে চালু নিয়ম আর বদলাতে দেওয়া হবে না।’’