প্রতীকী ছবি।
কাবুলের তখ্ত তালিবানের কব্জায় যাওয়ার পরে ভারতের আফগান-নীতির প্রশ্নে সমস্ত রাজনৈতিক দলই কেন্দ্রের পাশে। তা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা নতুন নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) প্রসঙ্গ টেনে এনে কেন অকারণে রাজনৈতিক বিভাজন করতে চাইছেন, সেই প্রশ্ন বৃহস্পতিবার সর্বদলীয় বৈঠকে তুলল তৃণমূল কংগ্রেস। আফগানিস্তানের পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য এ দিন ডাকা ওই সর্বদলীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অনুপস্থিত থাকলেন কেন, সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলল কংগ্রেসও।
আফগান মুলুকে তালিবানের মুঠো শক্ত হতেই ওই দেশের শিখ ও হিন্দুদের অনেকে ভারতে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। তা তুলে ধরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরী মন্তব্য করেছিলেন, এই জন্যই সিএএ-র প্রয়োজন ছিল। এই আইনে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা পীড়নের শিকার হয়ে ভারতে এলে, তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। ওই সমস্ত দেশে সংখ্যাগুরু মুসলিমরা সেই তালিকায় ছিলেন না।
বরাবর সিএএ-র বিরোধিতা করে আসা তৃণমূলের তরফে আজ দুই সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায় ও সৌগত রায় সর্বদলীয় বৈঠকে যোগ দেন। বৈঠকের মধ্যেই সৌগত প্রশ্ন তুলেছেন, এর মধ্যে কেন মন্ত্রীরা সিএএ-র প্রসঙ্গ টেনে আনছেন? তিনি বলেন, ‘‘সব বিরোধী দল আফগানিস্তানের প্রশ্নে সরকারের পাশে রয়েছে। কিন্তু কেউ সিএএ-র পক্ষে। আমরা সিএএ-র বিরুদ্ধে। সরকার কেন সিএএ নিয়ে এসে রাজনৈতিক বিভাজন করছে?’’
আফগানিস্তানে আটকে থাকা ভারতীয়দের উদ্ধার অভিযানকে মোদী সরকার ‘অপারেশন দেবীশক্তি’ নাম দিয়েছে। তার মধ্যেও রাজনৈতিক বার্তা রয়েছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। এ বিষয়ে রাজনীতি না চাওয়ার কথা বুঝিয়ে সুখেন্দু বলেন, ‘‘এই নামকরণ নিয়েও কোনও প্রশ্ন তুলতে চাইছি না। সরকার জানিয়েছে, আটকে থাকা সকল ভারতীয়কে দেশে ফেরানোই এখন সরকারের মূল লক্ষ্য। আমরা তাতে সমর্থন জানিয়েছি।’’
সিএএ-প্রশ্নের জবাব না দিলেও, আজ বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর আফগানিস্তানের এক মহিলা সাংসদকে ফেরত পাঠানো নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠকে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। আফগানিস্তানের সাংসদ রঙ্গিনা কারগারের অভিযোগ, তিনি ২০ অগস্ট দিল্লিতে চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন। কিন্তু তাঁকে বিমানবন্দর থেকেই ‘ডিপোর্ট’ করা হয়। অর্থাৎ, পত্রপাঠ ফেরত পাঠানো হয়। তিনি ইস্তানবুল থেকে বিমানে দিল্লি এসেছিলেন। ডাক্তার দেখিয়ে দু’দিন পরেই তাঁর ফেরত যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাঁকে ফের ইস্তানবুলের বিমানে তুলে দেওয়া হয়। রঙ্গিনার অভিযোগ, ‘‘গাঁধীর দেশে আমার সঙ্গে অপরাধীর মতো ব্যবহার করা হয়েছে। অথচ আমার ধারণা ছিল, ভারত আফগান মহিলাদের সাহায্য করতে চায়।’’ রঙ্গিনাকে ফেরত পাঠানো হলেও, তার পরে আফগানিস্তানের দুই শিখ সাংসদকে এ দেশে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়েছে।
আফগানিস্তানের হিন্দু, শিখদের আশ্রয়ের ক্ষেত্রে সিএএ-র কথা বলা হলেও, ওই দেশের মুসলিমদের ভারতে আশ্রয় দেওয়া হবে কি না, তা মোদী সরকার এখনও স্পষ্ট করেনি। এ ক্ষেত্রে সরকার ধর্মীয় ভেদাভেদ করছে কি না, তা নিয়ে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছিলেন। আজ কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে রঙ্গিনাকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে সরব হন। সূত্রের খবর, জয়শঙ্কর এ বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘বিমানবন্দরে অভিবাসন কর্তারা অতি সাবধানী হতে গিয়ে এই ভুল করেছেন। তবে এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আফগানিস্তানের অনেক সাংসদকে ভারত উদ্ধার করেছে। নিরাপত্তার কারণে তাঁদের সম্পর্কে বিশদ তথ্য জানানো সম্ভব নয়।
এ দিন ৩১টি দলের ৩৭ জন নেতা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এ রকম গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতি নিয়ে খড়্গে প্রশ্ন তোলেন। পুরনো উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘‘কন্দহর বিমান অপহরণের ঘটনার পরে দু’বার সর্বদলীয় বৈঠক হয়েছে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী দু’বারই বৈঠকে ছিলেন। নরেন্দ্র মোদীর পূর্বসূরী হলেও বাজপেয়ী এই সৌজন্য দেখাতেন। প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে উপস্থিত থাকা উচিত ছিল।’’ এ দিন বৈঠকে হাজির ছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবেগৌড়াও। তিনি বলেন, তাঁর সময়েও আফগানিস্তানে অনিশ্চয়তা ছিল। সরকারের উচিত নিরাপত্তার দিকে সব থেকে বেশি নজর দেওয়া।