হাতে গোনা তিন জন নয়। কালো টাকা মামলায় যাঁদের বিদেশি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিস পাওয়া গিয়েছে, তাঁদের সকলের নাম বুধবার আদালতে পেশ করার নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট।
মনমোহন সিংহ সরকারের মতো নরেন্দ্র মোদী সরকারও প্রথমে সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছিল, যাঁদের বিরুদ্ধে তদন্তে নির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে, তাঁরা ছাড়া আর কারও নাম প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এর পরেই বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, এত দিন কালো টাকা উদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসার পর মোদী সরকারও একই সুর ধরছে। গত কাল তিন জনের নাম প্রকাশের পরও অভিযোগ ওঠে, সরকার শুধু বাছাই করা নাম প্রকাশ করছে।
আজ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর তাই আর দেরি করেননি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তিনি জানিয়ে দেন, আদালতের নির্দেশ মেনে তাঁরা আদালতে সকলের নামই জানাবেন। তার পর আদালত সিদ্ধান্ত নেবে, ওই সব নাম জনগণের কাছে প্রকাশ করে দেওয়া হবে কি না। অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহতগি বলেন, “বিদেশি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট মালিকদের ৬০০ জনেরও বেশি নামের একটি তালিকা রয়েছে। আমরা মুখবন্ধ খামে তা আদালতে পেশ করব। আমি নিশ্চিত সুপ্রিম কোর্ট এর গোপনীয়তা বজায় রাখার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।” রোহতগির ব্যাখ্যা, ফ্রান্স ও জার্মানির মতো দেশগুলির সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতেই বিদেশি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সম্পর্কিত তথ্য মিলেছে। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেলে বা বিচার প্রক্রিয়া শেষ হলে তবেই তথ্য প্রকাশ করা যাবে। না হলে ভবিষ্যতে আর কোনও তথ্য পাওয়া যাবে না। রোহতগি বলেন, “আমেরিকার সঙ্গেও আমাদের চুক্তি হতে চলেছে। কিন্তু আগেই আমরা চুক্তি না মানলে ভবিষ্যতে আর কোনও তথ্যই পাওয়া যাবে না। কালো টাকা উদ্ধারও করা যাবে না।”
সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ আজ কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে রীতিমতো ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। তাঁরা যে বিষয়টি কেন্দ্রীয় সরকারের উপরে ছেড়ে দিতে চাইছেন না, তা-ও স্পষ্ট করে দেন বিচারপতিরা। বেঞ্চ সরকারের কাছে জানতে চায়, “আপনারা কেন বিদেশি ব্যাঙ্কে যাঁদের অ্যাকাউন্ট আছে তাঁদের মাথায় ছাতা ধরছেন?” কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে যুক্তি দেওয়া হয়েছিল, সুইৎজারল্যান্ড ও জার্মানির ব্যাঙ্কে যাঁদের অ্যাকাউন্ট রয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ হয়ে গেলেই সব তথ্য সুপ্রিম কোর্টকে জানানো হবে। কিন্তু ক্ষুব্ধ বিচারপতিরা বলেন, “আমাদের কাছে সব অ্যাকাউন্ট মালিকদের তথ্য দিন। তার পরে আমরা নির্দেশ দেব।” জেটলি বলেন, “কারও নাম আমরা লুকোতে চাইছি না। কালো টাকা উদ্ধারের জন্য প্রাক্তন বিচারপতির নেতৃত্বে যে বিশেষ তদন্তকারী দল তৈরি হয়েছে, তাদের কাছে আমরা ২৭ জুনই সমস্ত তথ্য জানিয়ে দিয়েছি।”
সুপ্রিম কোর্ট এর আগেই নির্দেশ দিয়েছিল, সমস্ত বিদেশি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট মালিকদের নাম প্রকাশ করতে হবে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার বিদেশের সঙ্গে চুক্তি মেনে সব নাম প্রকাশ করা সম্ভব নয় জানিয়ে আদালতের নির্দেশ সংশোধন করার আর্জি জানায়।
আজ সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, “আগের নির্দেশের একটি শব্দও বদলানো হবে না। নতুন সরকার আগের নির্দেশ বদলের আর্জি জানাতেই পারে না। কারণ ওই নির্দেশ আদালতে সকলের সামনে জারি হয়েছে এবং সরকার তা মেনেও নিয়েছিল।” আদালতের এই নির্দেশকে আজ স্বাগত জানিয়েছে কংগ্রেস।