আলেক্সি নাভালনি (বাঁ দিকে) এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। — ফাইল চিত্র।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সব থেকে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত তিনি। সেই আলেক্সি নাভালনির মৃত্যু হল কারাগারে। তিনি দীর্ঘমেয়াদি জেল হেফাজতের সাজা ভোগ করছিলেন রাশিয়ার আর্কটিক জেল কলোনিতে। শুক্রবার সেই জেল সূত্রে আলেক্সির মৃত্যুর খবর জানানো হয়।
জেল সূত্রে খবর, শুক্রবার সকালে নিজের সেলেই হাঁটাচলা করছিলেন রাশিয়ার বিরোধী দলের নেতা আলেক্সি। হাঁটতে হাঁটতে আচমকাই মাটিতে পড়ে যান তিনি। সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞান হারান। চিকিৎসকেরা তাঁকে পরীক্ষা করে মৃত বলে ঘোষণা করেন। জেল কর্তৃপক্ষের তরফে বিবৃতি জারি করে আলেক্সির মৃত্যুর কথা জানানো হয়েছে।
সেখানে বলা হয়েছে, ‘‘আলেক্সি জেলের মধ্যে হাঁটার সময় হঠাৎই অসুস্থ বোধ করেন। বুকে হাত দিয়ে মাটিতে পড়ে যান। ছুটে আসেন চিকিৎসা কর্মীরা। ডাকা হয় অ্যাম্বুল্যান্সও। চিকিৎসকেরা তাঁর প্রাণ বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেন। কিন্তু চিকিৎসায় সাড়া দেননি তিনি। কী কারণে তাঁর মৃত্যু হল সেই কারণ জানার চেষ্টা চলছে।’’ মৃত্যুর কারণ জানতে তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে বলে জেল সূত্রে খবর।
যদিও আলেক্সির দলের মুখপাত্র কিরা ইয়ারমিশ দাবি করেছেন যে, আলেক্সির মৃত্যুর খবর তাঁর দলকে জানানো হয়নি। তাঁর আইনজীবী জেলে যাচ্ছেন পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার জন্য।
প্রসঙ্গত, গত বছরের অগস্টেই আলেক্সিকে আরও ১৯ বছরের জন্য কারাদণ্ড দিয়েছিল এক রুশ আদালত। এর আগেই তিনি জালিয়াতির অভিযোগে সাড়ে ১১ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছিলেন।
৪৭ বছর বয়সি নেতা আলেক্সি সব সময়ই রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের কট্টর সমালোচক ছিলেন। প্রকাশ্যে সমালোচনা করার অভিযোগে গ্রেফতারও হয়েছেন তিনি। ২০২০ সালের অগস্ট মাসে তাঁর প্রাণনাশের চেষ্টাও হয়েছিল বলে অভিযোগ। সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, সে সময় মস্কোগামী বিমানের মধ্যে আচমকাই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার পরই বিমানটিকে ওমস্কে জরুরি অবতরণ করানো হয়। চিকিৎসকেরা জানান, কোমায় চলে যান তিনি।
চিকিৎসার জন্য আলেক্সিকে জার্মানির রাজধানী বার্লিনে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই বছরখানেক চিকিৎসা চলার পর সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানতে পারেন, তাঁর উপর বিষপ্রয়োগ করা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, রাশিয়ায় অতীতেও এমন পুতিন সমালোচকদের রহস্যমৃত্যুর ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। গত বছর অগস্ট মাসে বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল ইয়েভজেনি প্রিগোঝিন। ২০২২ সালে সেপ্টেম্বরে হাসপাতালের জানলা থেকে পড়ে মারা যান রাভিল ম্যাগানভ। তিনি কী ভাবে হাসপাতালের ছ’তলা থেকে পড়ে গেলেন সেই রহস্যের সমাধান এখনও হয়নি। যদিও মস্কোর দাবি ছিল, ম্যাগানভ ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। এ ছাড়াও কয়েক জন পুতিন সমালোচককে খুন করা হয়েছে বলেও অভিযোগ ওঠে।