হিমাচলের এই জায়গা আগে এড়িয়ে চলতেন পর্যটকেরা। স্থানীয়রাও সচরাচর এ দিকে আসতেন না। মাত্র কয়েক মাসে সেটিই হয়ে উঠেছে পর্যটকদের অন্যতম পছন্দের ট্রেকিং স্পট।
পার্বতী উপত্যকা। হিমাচল প্রদেশের কাসল থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে এই উপত্যকা। অসম্ভব প্রাকৃতির সৌন্দর্যে ভরপুর এই উপত্যকায় প্রতি বছর লক্ষাধিক পর্যটকের পা পড়ে।
এই উপত্যকার উপর থেকে একাধিক ট্রেকিং পথ রয়েছে। সেই পথে যেতে যেতে চোখে পড়ে পার্বতী এবং বিপাশা নদীর সংযোগস্থল। ৩ মাস আগেও দুই নদীর এই সংযোগস্থল থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরে ছিল আবর্জনা ফেলার জায়গা।
পর্যটক এবং স্থানীয়রা তাঁদের যাবতীয় পরিত্যক্ত জিনিস এখানেই ফেলতেন। বছরের পর বছর ধরে এমন ঘটে আসায় যে আবর্জনার স্তূপ তৈরি হয়েছিল তা ক্রমশ নদীর জলে মিশতে শুরু করে। নদী দূষিত হতে শুরু হয়।
স্থানীয়দের মতে, অন্তত ২০ বছর ধরে এমনটি হয়ে আসছে। কিন্তু কয়েক মাস আগের সেই আবর্জনা ফেলার জায়গা আজ হয়ে উঠেছে সুন্দর পাহাড়ি বাগান। নানা প্রজাতির গাছ আর তাতে বাসা বাঁধা নানা প্রজাতির পাখি স্বর্গ করে তুলেছে এই জায়গাটিকে।
এক বছর আগে যে পর্যটক এই জায়গার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় নাকে রুমাল চাপা দিতেন, তাঁরা আজ এর সৌন্দর্য এবং সৌরভে মুগ্ধ। এত দ্রুত এই বদল কী ভাবে সম্ভব হল?
এটি সম্ভব করে তুলেছেন পার্বতী অরণ্যের ডেপুটি কনজারভেটর ঐশ্বর্য রাজ। আড়াই একর জমির উপর গড়ে ওঠা এই আবর্জনার স্তূপ পরিষ্কার করে তাকে আলাদা রূপ দিয়েছেন তিনিই।
চলতি বছরের জানুয়ারিতেই দায়িত্ব নেন তিনি। তার এক মাস পর ফেব্রুয়ারিতে তাঁর অধীনস্থ অঞ্চল ঘুরে দেখতে দেখতে এখানে এসে পৌঁছন ঐশ্বর্য। ওই অঞ্চলের এ রকম দুর্দশা দেখে বিস্মিত হয়ে যান। ২০ বছর ধরে জমে থাকা আবর্জনা কী ভাবে পরিষ্কার করানো যায় সেই পরিকল্পনা করতে শুরু করেন।
দ্রুত কাজ শুরু করে দেন তিনি। সমস্ত আবর্জনা পরিষ্কার করাতে শুরু করেন। পরীক্ষা করে দেখেন মাটির অবস্থা।
অন্তত ৪০০ প্রজাতির গাছ লাগানো হয় সেখানে। দেবদারু, সিলভার ওক, জাকারান্দা, গোল্ডেন শাওয়ার, গোলাপ, থুজা, সাইকাস, রিবন গাছ, আপেল, পিচ, এপ্রিকট, বেদানা— এ রকম বহু গাছ লাগানো হয়।
নদী থেকে পাথর তুলে সুন্দর রাস্তা বানানো হয়। পাহাড়ি রাস্তার মাঝে যেন একটি পার্ক গড়ে দিয়েছেন তিনি। পর্যটকদের কাছে তো বটেই, স্থানীয়দের কাছেও এটি আকর্ষণীয় স্থান হয়ে উঠেছে।
বছর খানেকের মধ্যে পার্কে লাগানো গাছগুলি বড় হয়ে জায়গাটিকে আরও সুন্দর করে তুলবে, মনে করেন ওই বন দফতরের অফিসার।