প্রতীকী ছবি।
পুজোয় চুটিয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়িয়েছে আমজনতা। এ বার খুলতে চলেছে স্কুলও। আঠারোর কম যাদের বয়স, যাদের করোনার কোনও টিকাই নেওয়া হয়নি, তারা এ বার স্কুলে যাবে। তার জন্য পরিকল্পনা করছে সরকার।
প্রশ্ন উঠছে, তা হলে যত বিধিনিষেধ উড়ান পরিষেবা ঘিরেই কেন? রাজ্য সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী এখনও সপ্তাহে সাত দিন কলকাতা থেকে সরাসরি মুম্বইয়ের উড়ান নেই। শুধু সোম, বুধ ও শুক্রবার সরাসরি উড়ান চলছে। একই ভাবে চেন্নাই, পুণে এবং আমদাবাদ থেকেও কলকাতায় সরাসরি উড়ান চলছে সপ্তাহের ওই তিন দিন।
এক উড়ান সংস্থার কর্তা বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার এমন একটা সময়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যখন মহারাষ্ট্র, গুজরাত, তামিলনাড়ুতে সংক্রমণ বেড়ে গিয়েছিল। দিল্লিও ছিল সেই তালিকায়। পরে দিল্লির ক্ষেত্রে নিষেধ তুলে নেয় রাজ্য। কিন্তু মুম্বই-সহ চারটি গুরুত্বপূর্ণ শহর থেকে এই নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে এখনও। ভাবতে পারছেন! উৎসবের এই মরসুমে মুম্বই থেকে কলকাতার সপ্তাহে সাত দিন সরাসরি কোনও উড়ানই নেই!’’
এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য উড়ান সংস্থাগুলি সম্প্রতি রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীর কাছে আর্জি জানিয়েছে। কলকাতা থেকে দিনে ৩০টি শহরে উড়ান চালাচ্ছে স্পাইস। স্পাইসের ভাইস প্রেসিডেন্ট দেবাশিস সাহা দিল্লি থেকে সরাসরি মুখ্যসচিবকে চিঠি দিয়ে জানান, উৎসবের মরসুমে যাত্রী বাড়ছে। সোম, বুধ, শুক্রবার ছাড়া অন্যান্য দিন মানুষ কলকাতা থেকে মুম্বই, পুণে, চেন্নাই, আমদাবাদে পৌঁছতে অন্যান্য শহর ঘুরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। সোমবার ফোনে দেবাশিসবাবু বলেন, ‘‘রবিবার কলকাতা থেকে মুম্বই যেতে গেলে হয় বেঙ্গালুরু, নয় হায়দরাবাদ ঘুরে যেতে হচ্ছে। এতে সময় যেমন বেশি লাগছে, বাড়তি খরচও হচ্ছে। কেরল-সহ হাতে গোনা কয়েকটি জায়গা ছাড়া এখন তো সব জায়গাতেই সংক্রমণ কমে গিয়েছে। রাজ্য সরকার সরাসরি উড়ানের ক্ষেত্রে নিষেধ তুলে দিলে আমরা উড়ান আরও বাড়াতে পারি। পরে যদি সংক্রমণ বাড়ে, তখন না-হয় সরকার আবার বন্ধ করে দেবে!’’
উড়ান ও যাত্রীর সংখ্যা হুহু করে বাড়ছে বলে জানান কলকাতা বিমানবন্দরের অধিকর্তা সি পট্টাভি। তিনি এ দিন জানান, কলকাতা থেকে এখন সপ্তাহে চার দিন গড়ে ৩০০-র কাছাকাছি উড়ান যাতায়াত করছে। ওই দিনগুলোয় যাত্রী হচ্ছে ৩৬ থেকে ৩৮ হাজার। যে-তিন দিন কলকাতা থেকে মুম্বই, চেন্নাই, আমদাবাদ, পুণেতে সরাসরি উড়ান চলছে, সেই সোম, বুধ ও শুক্রবার উড়ান বেড়ে হচ্ছে প্রায় ৩৫০। যাত্রী বেড়ে হচ্ছে ৪৩ হাজার। পট্টাভি বলেন, ‘‘করোনার আগে ৫০০-র কিছু বেশি উড়ান চলছিল কলকাতা থেকে। যাত্রী হচ্ছিল ৭০ হাজারের কাছাকাছি। তিন দিনের নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে আমরা কিছু দিনের মধ্যেই ওই সংখ্যায় পৌঁছতে পারব বলে আশা করা হচ্ছে।’’
যাত্রীদের একাংশের প্রশ্ন, যেখানে দুর্গাপুজোয় সরকার এত ভিড় মেনে নিল, যখন স্কুল-কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, চলছে পুরভোটের প্রস্তুতি, তখন শুধু উড়ান চলাচলেই নিষেধাজ্ঞা থাকবে কেন? বহু মানুষ চিকিৎসার জন্যও কলকাতা থেকে মুম্বই যাতায়াত করেন। সপ্তাহে চার দিন সরাসরি উড়ান না-থাকায় তাঁরাও তো বিপদে পড়ছেন।