ফাইল চিত্র।
দুই রাজ্যেই প্রশান্ত কিশোর বাজি ধরেছেন--বিজেপি হারবে। না হলে তিনি ভোটের ময়দান ছেড়ে গেবেন।
পশ্চিমবঙ্গে পিকে ‘দিদি’-র রণকৌশল সাজাচ্ছেন। তামিলনাড়ুতে ‘থলপতি’ এম কে স্ট্যালিনের। তৃণমূল কংগ্রেসে পিকে-র পরামর্শে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুরুত্ব বেড়েছে। স্ট্যালিন তাঁর পুত্র উদয়নিধিকে ডিএমকে-র শীর্ষস্তরে তুলে এনেছেন। পিকে-র কথাতেই।
মিল এইটুকুই। তৃণমূলে অভিষেকের উত্থানে অসন্তুষ্ট নেতারা অনেকেই দল ছেড়েছেন। উদয়নিধির উত্থানে ডিএমকে-র মধ্যে প্রথমে কিছুটা অসন্তোষ দেখা দিলেও, পরে সকলেই মেনে নিয়েছেন।
৬ এপ্রিল তামিলনাড়ু বিধানসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। ২৩৪টি আসনে এই প্রথম তামিলনাড়ুর নির্বাচনে ‘কলাইনার’ বনাম ‘আম্মা’-র দ্বৈরথ নেই। তামিল রাজনীতির দুই ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ চরিত্র করুণানিধি ও জয়ললিতার অভাব ঢেকে দিতে পারতেন একমাত্র ‘থালাইভা’। কিন্তু রজনীকান্ত দল গড়ে রাজনীতিতে নামবেন ঘোষণা করেও পিছিয়ে গিয়েছেন। ‘দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন’-এর স্বপ্ন চোখে নিয়ে কমল হাসন রয়েছেন। কতখানি ভোট টানতে পারবেন, কেউ জানে না। নির্বাচনের লড়াই এবার কলাইনার ও আম্মার উত্তরসূরীর মধ্যে। স্ট্যালিন বনাম ইপিএস।
করুণানিধির পরে স্ট্যালিনই যে ডিএমকে-র সভাপতির সিংহাসনে বসবেন, তা জানাই ছিল। শুধু সিংহাসন পেতে তাঁকে ৬৪ বছর বয়স পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে এই যা। ঠিক ছিল না, জে জয়ললিতার পরে এডিএমকে-র রাশ কার হাতে যাবে। আম্মার মৃত্যুর পরে এডিএমকে-র মধ্যে তাঁর ছায়াসঙ্গী শশীকলার সঙ্গে ও পনিরসেলভমের ক্ষমতার দখলের লড়াই শুরু হল। শশীকলা পনিরসেলভমকে সরিয়ে কৃষক পরিবারের সন্তান ইপিএস ওরফে ই পলানিস্বামীকে মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বসালেন। শশীকলাকে জেলে যেতে হল। সমীকরণও বদলে গেল। এখন ইপিএস, পনিরসেলভম এককাট্টা। শশীকলাকে তাঁরা এডিএমকে-র ত্রিসীমানায় ঘেঁষতে দিতে নারাজ। শুধু ভোটে জেতা নয়। দুই দ্রাবিড় দলে নিজেদের পাকাপাকি শাসন কায়েম করাও স্ট্যালিন ও ইপিএসের চ্যালেঞ্জ।
পূর্বসূরীর সঙ্গে তুলনা হবেই। এডিএমকে-র অনেকেই মনে করেন, ক্যারিশ্মায় ধারেকাছে না এলেও প্রশাসনিক কাজে ইপিএস কোনও অংশে কম যান না। উল্টোদিকে এম কে স্ট্যালিন পাঁচ বছর চেন্নাইয়ের মেয়র ছিলেন। চেন্নাইয়ের আধুনিকীকরণ অনেটাই স্ট্যালিনের হাতে। করুণানিধি সরকারে বাবার সঙ্গে উপ-মুখ্যমন্ত্রী হিসেবেও কাজ করেছেন।
স্ট্যালিনের ডিএমকে-র সঙ্গে জোট বেঁধেছে কংগ্রেস, সিপিআই, সিপিএম, ভাইকো-র এমডিএমকে, ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ, দলিতদের পার্টি ভিসিকে-র সঙ্গে। উল্টোদিকে এডিএমকে-র সঙ্গে ক্যাপ্টেন বিজয়ের পার্টি ডিএমডিকে-র জোট ভেঙেছে। সঙ্গে রয়েছে বিজেপি। এডিএমকে-র পিঠে সওয়ার হয়েই বিজেপি তামিলনাড়ুতে খাতা খুলতে চাইছে। গত দশ বছর সরকারে থাকার ফলে এমনিতেই এডিএমকে-র বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান-বিরোধী হাওয়া। তার সঙ্গে বিজেপি-র হাত ধরার ফলে মুসলিম, খ্রিস্টান ভোট কাটার ভয়ও তৈরি হয়েছে। শশীকলার ভাইপো টিটিভি দীনকরণের দলও এডিএমকে-র ভোট কাটতে পারেন।
ইপিএস তবু হাল ছাড়ছেন না। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে ডিএমকে-কংগ্রেস জোটের ধাক্কায় এডিএমকে মাত্র একটি আসন জিতেছিল। সেখান থেকে অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। গোটা রাজ্যে চষে ফেলছেন। নিজেকে চাষির ছেলে হিসেবে তুলে ধরছেন। স্ট্যালিন প্রশান্ত কিশোরকে ভোট-কৌশল তৈরির দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি। কিন্তু প্রার্থী বাছাই, শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি সব নিজের হাতে করেছেন।
ইপিএস বলছেন, ‘‘আম্মার পরে যে এডিএমকে-তে আমার মতো কৃষকের উত্থান হবে, তা স্ট্যালিন ভাবেননি।’’ আর স্ট্যালিন বলছেন, ‘‘কলাইনারের নেতৃত্বে একাত্তরের ভোটে ডিএমকে ১৮৪টি আসন জিতেছিল। আমি এবার ২০০-র বেশি আসন জিতে বাবার রেকর্ডও ভেঙে দেবে।’’ দ্রাবিড় সভ্যতায় এবার শুধু উত্তরাধিকার প্রতিষ্ঠার নয়। পূর্বসূরীদের ছাপিয়ে যাওয়ারও লড়াই।