—ফাইল চিত্র।
জুড়ে গেল ভাঙা দল। অবশেষে এক ছাতার তলায় আসতে পারল তামিলনাড়ুর শাসক দল এআইএডিএমকে-র দুই বিবদমান শিবির। সরকারে পলানীস্বামীর ডেপুটি হলেন পনীরসেভম। দলে পনীরের সহকারী হলেন পলানী। সোমবার বিকেলে তামিলনাড়ুর নতুন উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ও পনীরসেলভম (ওপিএস) শপথ গ্রহণ করেছেন। ওপিএস শিবিরের আরও এক বিধায়ককে মন্ত্রিসভার অন্তর্ভুক্ত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী পলানীস্বামী। এআইএডিএমকে-র কোঅর্ডিনেটর পদেও বসছেন ওপিএস। সেখানে ওপিএস-এর সহকারী পদ পাচ্ছেন ইপিএস।
আরও পড়ুন: রজনীকে রাজনীতিতে নামাতে ভক্তেরা রাস্তায়
যেখান থেকে বিদ্রোহ শুরু করেছিলেন ওপিএস, প্রয়াত নেত্রী জয়ললিতার সেই স্মারক থেকেই ফের ঐক্যের বার্তা এল এ দিন। পুনর্মিলনের আলোচনা চূড়ান্ত হওয়ার পর তামিলনাড়ুর বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী পলানীস্বামী এবং জয়ললিতার অনুপস্থিতিতে তিন বার তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী পদে বসা পনীরসেলভম এ দিন সপার্ষদ মেরিনা সৈকতের জয়া স্মারকে পৌঁছন। হাত মিলিয়ে ঐক্যের বার্তা দেন তাঁরা। স্বভাবতই, মেরিনা সৈকতে এ দিন এআইএডিএমকে কর্মী-সমর্থকদের উচ্ছ্বাস ছিল প্রবল।
গত কয়েক দিন ধরে রোজই শোনা যাচ্ছিল এআইএডিএমকে-র দুই শিবির মিলতে চলেছে। রোজই মেরিনা সৈকতে জয়ার সমাধিতে ভিড় জমাচ্ছিলেন দলের কর্মী-সমর্থকরা। সোমবার অবশেষে পুনর্মিলনের ঘোষণা হল। ছবি: পিটিআই।
মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকাকালীনই ২০১৬-র ৫ ডিসেম্বর মারা যান এআইএডিএমকে-র সর্বময়ী নেত্রী জয়রাম জয়ললিতা। জয়ার প্রয়াণে পনীরসেলভমই মুখ্যমন্ত্রী পদে বসেছিলেন। কারণ আগে দুর্নীতির মামলায় জেলে যেতে হওয়ায় জয়ললিতাকে যখনই মুখ্যমন্ত্রী পদ ছাড়তে হয়েছিল, তখনই তিনি পনীরসেলভমকে ওই পদে বসিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু জয়ার প্রয়াণে পরিস্থিতি বদলে যায়। জয়ার দীর্ঘ দিনের সঙ্গী শশিকলা দল এবং সরকারের কর্তৃত্ব নিজের হাতে নিতে তৎপর হন। দলের সাধারণ সম্পাদক পদ শশিকলা কব্জাও করে নেন। মুখ্যমন্ত্রী পদে বসা ছিল সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু তার আগেই দুর্নীতির মামলায় শশিকলার কারাদণ্ড ঘোষিত হয়। তিনি ভাইপো দিনকরণকে দলের উপ-সাধারণ সম্পাদক পদে বসিয়ে জেলে চলে যান। মুখ্যমন্ত্রী পদে নিজে বসতে না পারলেও থাকতে দেননি পনীরকে। পলানীস্বামীকে ওই পদে বসিয়ে যান শশিকলা। সেই থেকেই দুই শিবিরে ভেঙে গিয়েছিল তামিলনাড়ুর শাসক দল। তবে কয়েক মাস আগে থেকে দুই শিবিরের পুনর্মিলনের কথাও শুরু হয়েছিল। ওপিএস শিবিরের নানা শর্ত ছিল। ইপিএস শিবির কোনও কোনও শর্ত মানতে রাজি ছিল, কোনও কোনও শর্ত খারিজ করে দিচ্ছিল। কিন্তু সব মতানৈক্য মিটিয়ে অবশেষে মিলতে পারল দুই শিবির। ওপিএস এবং ইপিএস ফের হাত মিলিয়ে নিলেন সোমবার।
পনীরসেলভমকে মন্ত্রিসভায় নিজের ডেপুটি করেছেন পলানীস্বামী। অর্থাৎ সরকারের শীর্ষপদে পলানীই থাকছেন, ‘নাম্বার টু’ হচ্ছেন পনীর। বিনিময়ে দলের শীর্ষপদে বসছেন পনীরসেলভম। সাধারণ সম্পাদক তিনি হচ্ছেন না। পরবর্তী সম্মেলনে তাঁকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হবে বলে এআইএডিএমকে সূত্রের খবর। তার আগে পর্যন্ত ওপিএস দলের কোঅর্ডিনেটর পদে বসে দল চালাবেন। সেখানে তাঁর সহকারী অর্থাৎ কো-কোঅর্ডিনেটর হচ্ছেন ইপিএস। ওপিএস শিবির থেকে বেশ কয়েক জন বিধায়ককে মন্ত্রী করা হবে বলে জল্পনা ছিল। তবে আপাতত ওপিএস নিজে উপমুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন এবং তাঁর অনুগামী কে পান্ডিয়ারাজন সংস্কৃতি মন্ত্রী হয়েছেন।
আরও পড়ুন: পটেলের ভিতে গুজরাতে জমি খুঁজছে কংগ্রেস
দলের পুনর্মিলনের জন্য ওপিএস-এর আরও একটি শর্ত ছিল— শশিকলা নটরাজনকে দল থেকে বহিষ্কার করতে হবে। পলানীস্বামীরা সে দাবিও মেনে নিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। শশিকলাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তে এ দিন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন ওপিএস। জয়ললিতার সমাধিতে ইপিএসকে পাশে নিয়ে ওপিএস এ দিন বলেছেন, ‘‘আমার হৃদয় থেকে বোঝা নেমেছে। আমাদের আর কেউ আলাদা করতে পারবে না, আমরা আম্মার (জয়ললিতা) সন্তান এবং আমরা দুই ভাই।’’