আমিরশাহির শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে মিশেলের প্রত্যর্পণের সিদ্ধান্ত পাকা করতে সুষমার ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। কিন্তু কৃতিত্ব দেওয়া হয়েছে অজিত ডোভালকে। —ফাইল চিত্র।
কাজটি করলেন সুষমা স্বরাজ। কিন্তু কৃতিত্ব সামনে এল অজিত ডোভালের!
হিসেব মতো প্রত্যর্পণ আটগুণ বেশি হয়েছে মনমোহন সিংহ ও অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানাতে। কিন্তু অগুস্তা ওয়েস্টল্যান্ড চপার কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত দালাল ক্রিশ্চিয়ান মিশেলকে ভারতে ফিরিয়ে এনে বিজেপির প্রচার, এটা মোদীজির অনন্য বিদেশনীতির নিদর্শন!
সরকার কিংবা বিজেপির এই সব দাবির পরেও কূটনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি থেকে মিশেলকে ভারতে ফেরানোর সিদ্ধান্তের সময় আবু ধাবিতে উপস্থিত ছিলেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। আমিরশাহির শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে মিশেলের প্রত্যর্পণের সিদ্ধান্ত পাকা করতে তাঁর ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ক্রিশ্চিয়ানকে ফেরানোর যাবতীয় কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রীর দফতরের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে। সিবিআইয়ের বিবৃতিতে দাবি, এ সবে ডোভালের ভূমিকাই অগ্রগণ্য।
অনেকেরই মত, মিশেলকে ফেরানোর ব্যাপারে ডোভালকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রীর দফতর নিজেদের কৃতিত্বকেই সামনে আনতে চেয়েছে। আগেও ডোভালকে দিয়ে বিদেশনীতিতে কলকাঠি নাড়ানোর চেষ্টা করে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কূটনীতিকদের অনেকেই মনে করেন, ডোকলাম কাণ্ডকে সংঘাতের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার পিছনেও ডোভালের ভূমিকা ছিল প্রধান। আর এ বার অলোক বর্মার অনুপস্থিতিতে মিশেল প্রত্যর্পণ কাণ্ডে ডোভালের পরামর্শে সিবিআই যে ‘ভাল কাজ’ করছে সেই বার্তাও দিতে চেয়েছে মোদী সরকার।
মিশেলকে ফেরানোর পরে বিজেপি বলছে, পশ্চিম এশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে মোদীর দীর্ঘ অধ্যবসায় এবং ভাবমূর্তি কাজে এসেছে। কিন্তু বিদেশ মন্ত্রকের নথি বলছে, মনমোহন সরকার এবং বাজপেয়ীর আমলে ১৭ জনকে সেই দেশ থেকে ফিরিয়ে এনেছিল ভারত। তুলনায় মোদী সরকারের আমলে মাত্র একজনকেই (মিশেলের ঘটনাটি বাদ দিলে) প্রত্যর্পণ করেছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি। নথি জানাচ্ছে, ইউপিএ আমলে আবু ধাবি ৯ জনকে ভারতে পাঠায়। যার মধ্যে ছিল আখতার হুসেনি, আব্দুল সাত্তার, তারেক আব্দুল করিমের মত সন্ত্রাসবাদী এবং ডি কোম্পানির লোকেরা। আরব আমিরশাহি থেকে অপরাধী ফিরিয়ে আনার প্রশ্নে সাফল্যের রেকর্ড সবচেয়ে ভাল বাজপেয়ীর সময়ে। ১৯৯৯-এ প্রত্যর্পণ চুক্তিতে সই করেছিল দু’দেশ। ২০০২-এর ফেব্রুয়ারি থেকে ২০০৩-এর মার্চের মধ্যে (বাজপেয়ী জমানায়) মোট ৮ জনকে ফিরিয়েছিল আমিরশাহি। যাদের মধ্যে ছিল সন্ত্রাসীদের অর্থ যোগানদাতা আবু আহমেদ আনসারি এবং দাউদ ইব্রাহিমের ভাইও।
এরই মধ্যে মিশেলের সঙ্গে দেখা করার জন্য বিদেশ মন্ত্রকের কাছে অনুমতি চেয়েছে নয়াদিল্লির ব্রিটিশ হাইকমিশন। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রভীশ কুমার জানিয়েছেন, এই প্রস্তাব খতিয়ে দেখা হচ্ছে।